শিশু শ্রম বাস্তবায়নে কচ্ছপ গতি, শিশু শ্রমিক সংখ্যায় আছে গরমিল

আভা ডেস্কঃ দেশে শিশুশ্রমিকের সংখ্যা নিয়ে মতভেদ আছে। বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা প্রতিবছর মে এবং জুন মাসে এ সংক্রান্ত আলাদা আলাদা তথ্যপ্রকাশ করে। এমনকি সরকারি বিভিন্ন সংস্থার হিসেবেও ভিন্ন ভিন্ন তথ্য পাওয়া গেছে। ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রমের তথ্যগত যেমন গরমিল রয়েছে, তেমনি এ সংক্রান্ত নীতিমালা বাস্তবায়নেও রয়েছে কচ্ছপ গতি।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে ১৬ লাখ ৯৮ হাজার ৮৯৪ শিশু কাজ করে। তাদের মধ্যে ৭ লাখ ৪৫ হাজার ৬৯০ জন মেয়েশিশু। তবে সরকার কর্তৃক গৃহীত ‌’বাংলাদেশে ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত শিশু শ্রম নিরসন (৩য় পর্যায়)’ এর প্রকল্প পটভূমিতে উল্লেখ করা হয়, প্রায় ৬০ লাখ শিশু দারিদ্রের কারণে শ্রমে নিযুক্ত রয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব পালন করছে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। বর্তমানে এই প্রকল্প ৪র্থ পর্যায়ে সম্প্রসারিত হচ্ছে। এর নাম দেওয়া হয়েছে ‘বাংলাদেশের ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম নিরসন প্রকল্প’।

শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, বর্তমানে বাংলাদেশে মোট শিশুর সংখ্যা ৫ কোটির বেশি। এর মধ্যে ৬০ লাখ শিশুশ্রমে জড়িত। দেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি ধরলে মোট জনগোষ্ঠীর ৩ দশমিক ৭৮ শতাংশ শিশু এখনো শ্রমে জড়িত। মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, শিশুশ্রমে নিয়োজিতদের ৫৭ শতাংশের কাজই অস্থায়ী।

এ সংক্রান্ত এক গবেষণায় দেখা গেছে, শিশুশ্রম বেশি কৃষি ও কল-কারখানায়। সেখানে ১০ লাখের বেশি শিশু কাজ করে। এছাড়া দোকানপাটে ১ লাখ ৭৯ হাজার শিশু, নির্মাণশিল্পে ১ লাখ ১৭ হাজার শিশু কাজ করে। বর্তমানে শিশুশ্রমে নিয়োজিত আছে এমন ১০ লাখ ৭০ হাজার শিশু একসময় স্কুলে গেলেও এখন আর যায় না। আর ১ লাখ ৪২ হাজার শিশু কখনোই স্কুলে যায়নি। তবে ১০ লাখের এই পরিসংখ্যানের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।

এর কারণ ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে  তিনি বলেন, সাধারণত আমরা এ ধরনের গবেষণা বা জরিপের ক্ষেত্রে ‌’সেম্পল আকার’ এবং ‘সেম্পল লোকেশন’ বা আওতা খুব কম পরিধির মধ্যে হতে দেখি। এরপর তাদের প্রাপ্ত তথ্যকে বেইজ ধরে গড় একটি আনুপাতিক হার বের করে তারা ফল প্রকাশ করে। সুতরাং এসব গবেষণা কখনোই প্রকৃত চিত্র প্রকাশ করে না।

নদীভাঙন, পরিবারে আর্থিক অনটন, অশিক্ষা ও অসচেতনতাসহ নানা কারণ শিশুশ্রমের জন্য দায়ী। যুগোপযোগী নীতিমালার অভাবেই এ সংখ্যা কমানো যাচ্ছে না বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, রাজধানীসহ সারা দেশে শিশুশ্রম এখন অপ্রতিরোধ্য।

শিশুশ্রম বন্ধের লক্ষ্য নিয়ে সরকারি প্রতিষ্ঠান জাতীয় শিশুশ্রম কল্যাণ পরিষদের সঙ্গে কাজ করছে আন্তর্জাতিক সংস্থা আইএলও, ইউসেপ, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন, বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরাম, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনসহ অনেক প্রতিষ্ঠান। কিন্তু প্রকৃত সুফল দেশ এখনো পায়নি।

সেভ দ্য চিলড্রেনের চাইল্ড রাইটস গভর্ন্যান্স অ্যান্ড চাইল্ড প্রোটেকশন সেক্টরের পরিচালক আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, শিশুশ্রম নিরসনে মোটাদাগে কাজ করা প্রয়োজন। শ্রমের বিকল্প নিয়েও ভাবতে হবে। আর্থ-সামাজিক পুনর্বাসনের কথা যেমন চিন্তা করতে হবে, তেমনি আর একটি শিশুও যেন আজ থেকে কাজে নতুন করে যুক্ত না হয়, সে বিষয়েও বিস্তারিত কাজ করার আছে। গ্রামাঞ্চল থেকে যে যে কারণে শিশুরা শহরে চলে আসছে এবং কাজে বাধ্য হচ্ছে, সেই কারণগুলো চিহ্নিত করে গোড়াতেই নির্মূল করার উদ্যোগও থাকতে হবে।

শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মুন্নুজান সুফিয়ান বলেন, শিশুশ্রম বন্ধে সরকার কঠোর অবস্থানে রয়েছে। এ জন্য যুগোপযোগী প্রকল্প গ্রহণ করা হচ্ছে। পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। সবার সহযোগিতা পেলে ২০২৫ সালের মধ্যে শিশুশ্রম শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা সম্ভব হবে।

তিনি আরো বলেন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বাস্তবায়নে ২০২৫ সালের মধ্যে দেশ থেকে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম নিরসনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। শিশু শ্রমিকদের পর্যায়ক্রমে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ থেকে বের করে এনে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়নের চেষ্টা করা হচ্ছে।

Next Post

রাবিতে উদ্ধার মর্টার শেল ও রকেট লঞ্চার বিস্ফোরণ করালো সেনাবাহিনী

শনি মে ১ , ২০২১
নিজস্ব প্রতিনিধিঃ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) উদ্ধার দুটি মর্টারশেল, একটি রকেট লাঞ্চার ও একটি ল্যান্ড মাইনের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে সেগুলো নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে।  শনিবার (০১ মে) দুপুর আড়াইটার দিকে ক্যাম্পাসের বধ্যভূমি এলাকার একটি ফাঁকা জায়গায় এগুলোর বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। বগুড়া ক্যান্টনমেন্ট থেকে আসা সেনাবাহিনীর বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট এগুলোর বিস্ফোরণ ঘটায় বলে জানান […]

Chief Editor

Johny Watshon

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat. Duis aute irure dolor in reprehenderit in voluptate velit esse cillum dolore eu fugiat nulla pariatur

Quick Links