নিজস্ব প্রতিনিধিঃ স্বজনপ্রীতি মাধ্যমে রুয়েট উপাচার্যের শ্যালক, দুই ভাই, স্ত্রীর ফুফাতো ভাই, চাচাতো বোন, গৃহকর্মী ও তাঁর স্বামীসহ স্বজনদের কর্মকর্তা-কর্মচারী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
শ্যালক সোহেল আহমেদকে নিয়োগ পেয়েছেন ‘পিএ টু ডিরেক্টর’ পদে। আপন দুই ভাই মুকুল হোসেন ‘সেকশন অফিসার’ ও লেবারুল ইসলাম ‘জুনিয়র সেকশন অফিসার’ পদে নিয়োগ পেয়েছেন। বাদ যাননি গৃহকর্মী লাভলী আরাও। তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘অ্যাসিস্ট্যান্ট কুক’ পদে
স্ত্রীর ফুফাতো ভাই মেহেদী হাসানকে ‘কেয়ারটেকার’ পদে, চাচাতো বোন মাছুমা খাতুনকে ‘ডেটা এন্ট্রি অপারেটর’ পদে, কাজের মেয়ে লাভলী আরার স্বামী এনামুল হককে ‘উপাচার্যের গাড়িচালক’ পদে নিয়োগ দেওয়া দিয়েছেন।
জুনিয়র সেকশন অফিসার পদে নিয়োগ পাওয়া উপাচার্যের ভাই লেবারুল আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী ছিলেন।
রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) উপাচার্য রফিকুল ইসলাম সেখ স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে উক্ত নিয়োগ দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯২তম সিন্ডিকেট সভায় এসব নিয়োগ অনুমোদন দেওয়া হয়। কিন্তু ওই সভার কোনো রেজল্যুশন করা হয়নি।
উপাচার্যের দাবি, তিনি নিয়োগ বোর্ডে ছিলেন না। যোগ্যতা অনুযায়ী পরীক্ষা দিয়ে তাঁরা চাকরি পেয়েছেন। নিয়োগে স্বজনপ্রীতি ছাড়াও উপাচার্যের বিরুদ্ধে নীতিমালার বাইরে নিয়োগ দেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় সংক্ষুব্ধ একজন চাকরিপ্রত্যাশী আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন।
রুয়েট সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালে তিনটি বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে রুয়েটে বিভিন্ন পদে ১৩৫ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। ওই নিয়োগে বিজ্ঞাপিত পদের চেয়ে বেশি জনবল নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। গত বছরের ৪ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯২তম সিন্ডিকেট সভায় ওই নিয়োগ অনুমোদন দেওয়া হয়।
কিন্তু এখনো নিয়োগের রেজল্যুশন করা হয়নি। চলতি বছরের জুলাইয়ে উপাচার্যের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা। ২০১৮ সালের ৩০ জুলাই পরবর্তী চার বছরের জন্য নিয়োগ পেয়েছিলেন উপাচার্য রফিকুল ইসলাম সেখ।
স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্তদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাঁদের কয়েকজনের কথাবার্তায় গরমিল পাওয়া যায়। জুনিয়র সেকশন অফিসার পদে নিয়োগ পাওয়া লেবারুলের সঙ্গে ৬ মার্চ মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হয়। তিনি উপাচার্যের ভাই, সেটা স্বীকার করেছেন।
তবে আরেক ভাই মুকুলের সেকশন অফিসার পদে নিয়োগ পাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘জানি না তো।’ মুকুলের ফোন বন্ধ থাকায় তাঁর সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
ডেটা এন্ট্রি অপারেটর মাছুমা উপাচার্যের চাচাতো বোন কি না তিনি বলেন, উপাচার্য তাঁর কোনো আত্মীয় নন। অ্যাসিস্ট্যান্ট কুক পদে নিয়োগ পাওয়া উপাচার্যের বাসভবনের গৃহকর্মী লাভলী আরা ফোন ধরেন। কিন্তু নিয়োগের প্রসঙ্গ তুলতেই তিনি ফোন রেখে দেন।
মুকুল ও লেবারুল তাঁর আপন ভাই, সেটা স্বীকার করেছেন উপাচার্য রফিকুল ইসলাম সেখ। মাছুমা তাঁর চাচাতো বোন। কেয়ারটেকার মেহেদী তাঁর স্ত্রীর ফুফাতো ভাই কি না জানতে চাইলে তিনি ‘আত্মীয়’ বলে স্বীকার করেন।
রফিকুল ইসলাম সেখ বলেন, ‘লেবারুল আপন ভাই। তবে সে আগে থেকে রুয়েটে কর্মরত। সে উপাচার্যের ভাই হিসেবে পদোন্নতি পায়নি। আলাদা নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হলে সে পরীক্ষা দিয়ে জুনিয়র সেকশন অফিসার পদে নিয়োগ পেয়েছে।’
তিনি বলেন, যোগ্যতা থাকায় তাঁরা সবাই পরীক্ষা দিয়ে নিয়োগ পেয়েছেন। সেই নিয়োগ বোর্ডেও তিনি ছিলেন না। তা ছাড়া স্বচ্ছতার জন্য নিয়োগ পরীক্ষার খাতা কোডিং করা হয়েছিল, যাতে কোন প্রার্থীর খাতা কোনটি, তা যেন পরীক্ষক বুঝতে না পারেন। নিয়োগের রেজল্যুশন না করার ব্যাপারে তাঁর দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, রেজল্যুশনের চেয়ে বড় কথা হলো, সিন্ডিকেটে নিয়োগ অনুমোদন হয়ে গেছে।
এদিকে, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে ‘উপসহকারী প্রকৌশলী’ পদের যোগ্যতা হিসেবে অনুমোদিত কারিগরি শিক্ষা বোর্ড বা প্রতিষ্ঠান থেকে প্রকৌশলে ডিপ্লোমা ডিগ্রি চাওয়া হয়। কিন্তু সেই পদে স্বজনপ্রীতির আশ্রয় নিয়ে একজন বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ বিষয়ে রুয়েট শাখার ডিপ্লোমা প্রকৌশল সমিতি গত ২২ জানুয়ারি এবং ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশের পক্ষ থেকে রুয়েট উপাচার্যকে লিখিত আপত্তি জানানো হয়। এ ছাড়া রায়হান ইসলাম নামের সংক্ষুব্ধ একজন চাকরিপ্রার্থী হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করেছেন।
রায়হান বলেন, ‘হাইকোর্ট এ বিষয়ে একটি আদেশ দিয়েছেন। সেটি এখনো রুয়েট কর্তৃপক্ষের হাতে এসে পৌঁছায়নি।’
এ বিষয়ে উপাচার্য রফিকুল ইসলাম সেখ বলেন, বেশি যোগ্যতাসম্পন্ন একজন প্রকৌশলী আবেদন করেছিলেন। তাঁকে তাঁরা নিয়েছেন। তিনি আগে থেকেই রুয়েটে কর্মরত ছিলেন বলে জানান তিনি। তথ্য সুত্রঃ সংগৃহীত
