আভা ডেস্ক : রাজশাহীর পুঠিয়ায় গ্রামীনফোনের রিচার্জকর্মী শাওনের সাজানো ছিনতাই মামলার বলি হয়েছে উপজেলার শিলমাড়িয়া ইউনিয়নের চন্দনমাড়িয়া গ্রামের মুনছুর রহমানের ছেলে পলাশ (২৪)। গত ২৯ এপ্রিল পুঠিয়া থানা পুলিশ গ্রামীনফোনের রিচার্জকর্মীকে শাওন সরকারকে কুপিয়ে টাকা ছিনতাইয়ের মামলায় সন্দেহজনক হিসেবে তাকে গ্রেফতার করে আদালতে প্রেরন করে।
অথচ যে ছিনতাই মামলায় পলাশ কে গ্রেফতার করা হয়েছে সেই ছিনতাইয়ের ঘটনা ছিলো শাওনের সাজানো নাটক। নিজের টাকার প্রয়োজন মেটাতে শাওন নিজেই এ ছিনতাইয়ের নাটক সাজায়। পরে শাওনের বাবা পুঠিয়া থানায় অজ্ঞাতনামা আসামী করে একটি ছিনতাই মামলা দায়ের করেন। সেই মামলায় ছিনতাইকারী সন্দেহে পলাশ কে গ্রেফতার করে আদালতে পেরন করে পুলিশ। গ্রেফতারের পর থেকে পলাশ ৬ মাস ধরে জেল হাজতে অবস্থান করছে। তবে ঘটনার ৬ মাস পর পুলিশ তদন্ত করে মামলার প্রকৃত ঘটনা উদঘাটন করেছে।
এব্যপারে রিচার্জকর্মী শাওনসহ আরো চারজনকে আসামী করে তাদের বিরুদ্ধে প্রতারনার মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং মুল হোতা শাওন সহ তিনজনকে গ্রেফতার করে আদালতে প্রেরন করা হয়েছে।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন, নাটোর সদর উপজেলার ঝলমলিয়া পাইকপাড়া গ্রামের সাইদুর রহমানের ছেলে ও গ্রামীনফোনের রিচার্জকর্মী শাওন সরকার (২২), তার সহযোগী পুঠিয়া পৌর এলাকার কাঁঠালবাড়িয়া মহল্লার আঃ সামাদের ছেলে হাসান শেখ (২০) ও মেডিকেল পাড়া মহল্লার কার্তিক চন্দ্রের ছেলে সমির কুমার সরকার (২০)।
গত বৃহস্পতিবার রাতে তাদের নিজ বাড়িতে অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এঘটনার সাথে জড়িত আরো একজন তন্ময় পলাতক রয়েছে।
থানা পুুলিশ সুত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ২৮ এপ্রিল শনিবার দুপুরে উপজেলার শিলমাড়িয়া ইউনিয়নের পঁচামাড়িয়া এলাকায় নির্জন স্থানে গ্রামিনফোনের রিচার্জকর্মী শাওন সরকারকে (২২) কুপিয়ে গুরুতর আহত করে তার কাছে থাকা নগদ এক লক্ষ ২৬ হাজার টাকা, দুইটি ট্যাব ও রিচার্জকাড নিয়ে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। শাওন মোবাইল সিম কোম্পানি গ্রামীনফোনের রিচার্জকর্মী হিসেবে সাধনপুর পঁচামাড়িয়া এলাকায় কর্মরত ছিলেন। পরে এব্যপারে আহত শাওনের বাবা বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামী করে থানায় ছিনতাইয়ের মামলা দায়ের করেন।
ঘটনার পরের দিন (২৯ এপ্রিল) ছিনতাইয়ের ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে শিলমাড়িয়া ইউনিয়নের চন্দনমাড়িয়া গ্রাম থেকে পলাশ কে গ্রেফতার করে পুলিশ। মামলার তদন্তে নেমে ঘটনার প্রায় ৬ মাস পর ছিনতাইয়ের আসল রহস্য উদঘাটন করে পুলিশ। সেদিনের ছিনতাইয়ের ঘটনাটি রিচার্জকর্মী শাওনেরই সাজানো নাটক ছিলো নিজের টাকার প্রয়োজন মেটাতে নিজেকে কুপিয়ে টাকা ছিনতাই করতে সে নিজেই লোকঠিক করে ছিনতাইয়ের মিথ্যা নাটক সাজায়। ছিনতাইয়ের আসল রহস্য উদঘাটনের পর পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে শাওন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারক্তিমুলক জবানবন্দি দিয়েছে। পরে গত বৃহস্পতিবার রাতে মোবাইল সিম কোম্পানি গ্রামীনফোনের পক্ষে শাওনসহ জড়িত চারজনকে আসামী করে পুঠিয়া থানায় প্রতারনার মামলা দায়ের করেন রাজশাহীর গ্রামীনফোনের ডিস্ট্রিবিউশন ম্যানেজার সাইফুল ইসলাম।
এব্যপারে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাকিল উদ্দিন আহম্মেদ জানান, ঘটনার পর আহত শাওন হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন পুলিশের তদন্তে ছিনতাইয়ের ঘটনাটি সাজানো নাটক জানতে পেরে হাসপাতাল থেকে শাওনকে পুলিশ হেফাজনে নেয়া হয়। পরে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে ছিনতাইয়ের ঘটনাটি তারই সাজানো নাটক বলে স্বীকার করে শাওন। সে আদালতেও ১৬৪ ধারায় স্বীকারক্তিমুলক জবানবন্দি দিয়েছে এবং ছিনতাইয়ের সাজানো নাটকে অভিনয়কারীদেরও নাম বলেছে। তার দেয়া তথ্য মতে জড়িত আরো ২ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
পরে গ্রামীনফোনের পক্ষ থেকে তাদের বিরুদ্ধে প্রতারনার মামলা দায়ের করা হয় সেই মামলায় তাদের তিনজনকে গ্রেফতার দেখিয়ে গত ৭ সেপ্টেম্বর তাদের আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরন করা হয়েছে।
ওসি আরো জানান, শাওনের বাবা’র দায়ের করা ছিনতাই মামলাটির চুরান্ত প্রতিবেদন দেয়া হবে। চুরান্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হলে সেই মামলায় ছিনতাইকারী সন্দেহে গ্রেফতার হওয়া পলাশ মুক্তিপাবে বলেও জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।