নিজস্ব প্রতিনিধিঃ রাজশাহীতে দেশি ২২ টি গরু আটক করে ভারতীয় দাবি করে পানির দরে নিলামে বিক্রি করার অভিযোগ উঠেছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুরের পালন করা এই গরুগুলো চট্টগ্রামে বিক্রি করার জন্য নিয়ে যাচ্ছিলেন একজন ব্যবসায়ী। পথে রাজশাহীর গোদাগাড়ী চেকপোস্টে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট বিভাগের যৌথ দল গত বুধবার গরুগুলো আটক করে। পরে গতকাল বৃহস্পতিবার ভারতীয় গরু বলে দাবি রাজশাহী শহরে নিয়ে গিয়ে পানির দামে মাত্র ৯ লাখ ৩৫ হাজার টাকায় নিলামে বিক্রি করে দেয় কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট বিভাগ। কিন্তু এই গরুগুলোর আনুমানিক বাজার মূল্য প্রায় ১৭ লাখ টাকা দাবি করেন গরুর মালিক।
অভিযোগ উঠেছে, রাজশাহী মহানগরীর রুবেল বাহিনীর সঙ্গে যোগসাজস করে গরুগুলো পানির দামে বিক্রি করা হয়। রাজশাহী নগরীর দাশপুকুর এলাকায় সিটি বাইপাশের উত্তর পাশে কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট বিভাগের গুদামে গরুগুলো নিলাম করা হয়। সেখান থেকে মাত্র ২০ গজ দূরেই ঈদগাহ মাঠে বিকেলে ওই গরুগুলোর মধ্যে ২০টি প্রকাশ্যে ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করা হয় ১৩ লাখ ৭০ হাজার টাকায়। এদিকে কৃষকদের দাবি, গরুগুলো তাঁদের বাড়িতে পোষা। গরু মালিকদের বাড়ি গোমস্তাপুর উপজেলার বাঙ্গাবাড়ি ইউনিয়নের বেগুনবাড়ি ও ব্রজনাথপুর গ্রামে।
গরু মালিকদের মধ্যে বেগুনবাড়ি গ্রামের মো. রহিমের পাঁচটি, মো. মইদুলের চারটি, মো. সেলিমের আটটি, ব্রজনাথপুরের সাদিকুল ইসলামের আটটি গরু ছিল। সাদিকুল ইসলাম বাঙ্গাবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাত নম্বর ওয়ার্ডের সদস্যও। গরুগুলো চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে চট্টগ্রামে নেয়ার জন্য বাঙ্গাবাড়ি ইউপি চেয়ারম্যান সাদেরুল ইসলাম একটি প্রত্যয়নপত্র দিয়েছিলেন। এতে প্রত্যেকের নাম ও গরুর সংখ্যা উল্লেখ করে চেয়ারম্যান লিখে দিয়েছিলেন, বাড়ির পোষা গরু বিক্রির জন্য তাঁরা চট্টগ্রামের বিবিরহাটে নিয়ে যাচ্ছেন। বৃহস্পতিবার বিকালে যোগাযোগ করা হলে ইউপি চেয়ারম্যান স্বীকার করেন এই প্রত্যয়নপত্র তিনি দিয়েছিলেন। চেয়ারম্যান বলেন, ‘গরুগুলো বাড়িতে পোষা। এটা ভারতীয় গরু নয়। কিন্তু তারা কিভাবে আটক করে নিলাম দিয়েছে?’
ইউপি সদস্য সাদিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন, গত বুধবার দুপুরে গোমস্তাপুর থেকে গরুগুলো একটি ট্রাকে তুলে চট্টগ্রামে কোরবানির হাটে বিক্রির জন্য নিয়ে যাচ্ছিলেন। পথে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার রাজাবাড়ীহাট যৌথ চেকপোস্টে ট্রাক থামানো হয়। তখন তিনি ট্রাক থেকে নেমে নিজের পরিচয় দেন এবং জানান যে, এগুলো ভারতীয় গরু নয়। তাঁদের বাড়ির পোষা গরু। পরিচয় শুনেই কাস্টমসের সদস্যরা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। সাদিকুল তাঁদের প্রত্যয়নপত্র দিলে সেগুলো ছিঁড়ে ফেলা হয়। এরপর গুরুগুলো গরুগুলোকে জব্দ করা হয়। সেগুলো গতকাল নিলামে বিক্রি করা হয়।
গরুর মালিক সাদিকুল আরও জানান, বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজশাহী নগরীতে কাস্টমসের গুদাম থেকে গরুগুলো নিলাম দেয়া হয়। ২২টি গরু মাত্র ৯ লাখ ৩৫ হাজার টাকায় বিক্রি করা হয়েছে। প্রতিটির দাম গড়ে ৪২ হাজার ৫০০ টাকা। মুন্না নামের এক ব্যক্তি গরুগুলো কিনেছেন।
তবে সাদিকুল জানান, কোরবানীর হাটে তাঁদের এসব গরুর প্রতিটির দাম হতো আনুমানিক ৯০ থেকে এক লাখ টাকা। সাদিকুল বলেন, ‘আমরা অনেক আশা করে কোরবানীর জন্য গরুগুলো পুষেছিলাম। বেশি দাম পাওয়ার আশায় সেগুলো চট্টগ্রামে নিয়ে যাচ্ছিলাম। কিন্তু এখন নিঃশ্ব হয়ে গেলাম।’
এদিকে গুদামের দায়িত্বরত কর্মকর্তা কাস্টমসের পরিদর্শক শাহরিয়ার হাসান সজীব বলেন, বিজিবি ও কাস্টমসের সদস্যরা আমাদের গুদামে গরু দেয়ার সময় বলেছেন, কোনো মালিক পাওয়া যায়নি। ট্রাক থামানো হলে ভারতীয় এসব গরু ফেলে সবাই পালিয়ে গিয়েছেন। জব্দ তালিকায় বিজিবি উল্লেখ করেছে, প্রতিটি গরুর দাম আনুমানিক ৮০ হাজার টাকা।শাহরিয়ার বলেন, ‘গরুগুলোর দাম এত বেশি বলে আমরা মনে করি না। সর্বোচ্চ ৫০ হাজার হতে পারে। আমরা নিলামে ১১ লাখ টাকা চেয়েছিলাম। ৯ লাখ ৩৫ হাজার টাকা পাওয়া গেছে। এটা পর্যাপ্ত।’
তবে এ নিয়ে গতকাল বিকেলে বিজিবির রাজশাহী-১ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক সাব্বির আহমেদ বলেন, ‘গুরুগুলো যে ট্রাকে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল সেই ট্রাকে কোনো কাগজপত্র ছিলা না গরুর। ফলে কাস্টমস এবং বিজিবির যৌথ দল গরুগুলো আটক করেছে। পরে কাস্টমস সেগুলো নিলাম করেছে। তারা কিভাবে নিলাম করলো সেটি তারাই ভালো বলতে পারবে।’