বিশেষ প্রতিনিধি : রাজশাহীতে মেয়র প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের নির্বাচনে যারা ভূমিকা রাখছেন, টার্গেট করে সেইসব নেতাকর্মীকে কোনো ওয়ারেন্ট ছাড়াই গ্রেফতার করে বিভিন্ন মামলায় চালান করা হচ্ছে। কোথাও অভিযোগ করে কোনো প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না। এক্ষেত্রে রাজশাহী মহানগর পুলিশ (আরএমপি) নিজেদের দেয়া কথা যেমন নিজেরাই রাখছে না, তেমনি আবার নির্বাচন কমিশনের নির্দেশও তারা মানছে না। এমন অভিযোগ করেছেন রাজশাহী জেলা ও মহানগর বিএনপির নেতারা।
এর আগে তিন সিটিতে (রাজশাহী, সিলেট ও বরিশাল) ওয়ারেন্ট ছাড়া কাউকে গ্রেফতার না করতে পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। এছাড়া আরএমপি থেকেও একাধিকবার বলা হয়েছে, গ্রেফতারি পরোয়ানা ও সুনির্দিষ্ট অপরাধের অভিযোগ ছাড়া পুলিশ কাউকে আটক বা গ্রেফতার করবে না। যদিও গত ১৩ দিনে ৭১ জন বিএনপির নেতাকর্মীকে গ্রেফতারের অভিযোগ উঠেছে। বিএনপির মেয়র প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল বলেন, নির্বাচনের প্রচার শুরুর পর থেকে পুলিশ বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করছে। যারা নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ড এলাকায় ধানের শীষের পক্ষে প্রচারণায় সক্রিয়, তাদের মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে চালান করা হচ্ছে। সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি রাজপাড়া থানা এলাকার দলীয় নেতাকর্মীদের। বুলবুলের আরও অভিযোগ, পুলিশি হয়রানি বেড়েই চলেছে দিন দিন। অভিযোগ নেই, মামলা নেই, তবুও নেতাকর্মীরা রাতে বাসাবাড়িতে পরিবারের সঙ্গে থাকতে পারছেন না। বিএনপির কেন্দ্রীয় দফতরের মামলা সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহে নিয়োজিত মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন বলেন, নির্বাচনী প্রচার শুরুর পর থেকে সোমবার পর্যন্ত ১৩ দিনে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান মন্টুসহ ৭১ জন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মিথ্যা অভিযোগ ও সাজানো ঘটনা দেখিয়ে নতুন করে ৯টি মামলা দায়ের করা হয়েছে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। পুলিশ অধিকাংশ ক্ষেত্রে কোনো অভিযোগ ছাড়াই নেতাকর্মীদের রাতের বেলা ঘুম থেকে তুলে নিয়ে যাচ্ছে। পরে পুরনো কোনো মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে চালান করছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২২ জুলাই রাতে ২৬নং ওয়ার্ড যুবদলের সহ-সভাপতি সাজ্জাদ হোসেন, ৮নং ওয়ার্ড যুবদল নেতা বাচ্চু ও একই ওয়ার্ডের ছাত্রদল নেতা রানা, ১৩নং ওয়ার্ড যুবদল নেতা সুমন হোসেনসহ মোট ৫ জন বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ২১ জুলাই রাতে পুলিশ ১৪ নং ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম বাবলু ও ১৬নং ওয়ার্ড যুবদলের সাধারণ সম্পাদক শামীম আহম্মেদকে গ্রেফতার করেছে। একই রাতে কোনো প্রকার ওয়ারেন্ট ছাড়াই জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান মন্টুকেও গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে পুলিশ নির্যাতনের মাধ্যমে ও জোরপূর্বক ১৭ জুলাই সাগরপাড়ায় বিএনপির মেয়র প্রার্থীর পথসভায় বোমা হামলা পরিকল্পনার স্বীকারোক্তি আদায় করেছে তার কাছ থেকে। একই রাতে ১১নং ওয়ার্ড যুবলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক নুরুন্নবীর বাসায় আদালতের আদেশ ছাড়াই তল্লাশির নামে জিনিসপত্র তছনছ করা হয়। ওই রাতে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় আরও তিনজন যুবদল নেতাকে গ্রেফতারের জন্য বাড়িতে হানা দেয় পুলিশ। একই দিন ২৬নং ওয়ার্ড যুবদলের সভাপতি জামিল উদ্দিনকে কোনো পরোয়ানা বা আদালতের আদেশ ছাড়াই গ্রেফতার করা হয়।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও রাসিকের সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান মিনু বলেন, আমরা পুলিশের হয়রানিমূলক তৎপরতা বন্ধে রিটার্নিং অফিসারসহ নির্বাচন কমিশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে সাত বার অভিযোগ করেছি। কিন্তু তাতে কোনো ফল দেখা যাচ্ছে না। নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে পুলিশি হয়রানি ততই বাড়ছে। ধানের শীষের পক্ষে গণজোয়ার দেখে ক্ষমতাসীনরা খুলনা ও গাজীপুর স্টাইলে রাজশাহীতেও ভোট ডাকাতির পরিকল্পনা থেকেই এসব করছে।
মিনু আরও বলেন, কারা ধানের শীষের এজেন্ট হবে সেই তথ্য গোপনে সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে পুলিশকে লেলিয়ে দেয়া হচ্ছে। তিনি সুষ্ঠু নির্বাচনী পরিবেশ নিশ্চিতে অবিলম্বে পুলিশি হয়রানি বন্ধের দাবি জানান।
১৭ জুলাই রাজশাহীতে এক সভায় নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরী তিন সিটিতে কাউকে ওয়ারেন্ট ছাড়া গ্রেফতার না করতে পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছিলেন। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সহকারী রিটার্নিং অফিসার ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আতিয়ার রহমান বলেন, ওয়ারেন্ট ছাড়া কাউকে গ্রেফতার না করতে পুলিশকে নির্দেশ দেয়া রয়েছে। এ সংক্রান্ত কিছু অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, অভিযোগগুলো তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তবে ওয়ারেন্ট ছাড়া গ্রেফতারের অভিযোগ অস্বীকার করে রাজশাহী মহানগর পুলিশের মুখপাত্র ও সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার ইফতে খায়ের আলম বলেন, কাউকে অভিযোগ ছাড়া আটক বা গ্রেফতার করা হয়নি। যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। সে অনুযায়ী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
(আনু মোস্তফার পাঠানো যুগান্তর পত্রিকা থেকে সংগৃহিত। প্রতিবেদনটি সম্পকে কোনো অভিযোগ থাকলে তা কর্তৃপক্ষ কে জানালে কতৃপক্ষ যথার্থ ব্যবস্থা নিবে বা সংবাদটি প্রত্যাহার করে নিবে )