রাজশাহীজুড়ে বেড়েছে সাহায্যপ্রার্থী, ওরা ভিক্ষুক নয়

নিজস্ব প্রতিনিধিঃ রাস্তা-ঘাট, পাড়া-মহল্লা, মার্কেট বা ট্রাফিক সিগনাল সব জায়গাতেই ইদানীং উল্লেখযোগ্যসংখ্যক সাহায্যপ্রার্থী মানুষ চোখে পড়ছে। এরা সবাই কিন্তু নিয়মিতভাবে রাস্তায় থাকা সাহায্যপ্রার্থী বা ভিক্ষুকের মতো নয়। তাদের আচরণ, পোশাক আর কথা শুনলেই বোঝা যায়, এ মানুষগুলো পেশাদার নয়।

রাজশাহী স্টেশন, সাহেব বাজার, নওদাপাড়া কোট হড়গ্রাম বাজার, বিনোদপুর, তালাইমারী, কাশিয়াডাংগা, সহ নগরীর বিভিন্নসহ কিছু এলাকায় সরেজমিন খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এদের একটা বড় অংশ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে, নিতান্তই ঠেকায় পড়ে মানুষের কাছে হাত পাতছে।

মহামারি করোনার কারণে ছোট ব্যবসায়ী, বেসরকারি চাকরিজীবী, নিরাপত্তাকর্মী, রিকশা-ভ্যান চালক, গৃহকর্মীসহ নিম্ন আয়ের অনেকে কাজ হারিয়েছেন। পরিবারের মানুষসহ বাড়ি ভাড়া দিয়ে শহরে বেঁচে থাকাটা তাদের জন্য অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে।  অনেকদিন ধরে কোনো আয় নেই।  সামান্য যা কিছু সঞ্চয় ছিল, তাও একসময় শেষ হয়ে যায়।

অবশেষে শেষ সম্বল বাড়ির স্ত্রীর কাছে থাকা তার গহনাগুলোও একসময় বেচে দেন।  সে টাকায় কয়েক মাস চলে।  আবারও শূন্য হয়ে পড়েন বলে জানান বেসরকারি ক্লিনিকে থেকে চাকরিচ্যুত হাসান (ছদ্দনাম)। তিনি বলেন, ‘এর মধ্যে কত জায়গায় যে চাকরির চেষ্টা করেছি, কত পরিচিত-অল্প পরিচিতজনকে বলেছি।  যেকোনো একটা কাজের ব্যবস্থা করে দিতে।  কেউ কেউ চেষ্টা করার কথা বলেছেন।  কেউ এড়িয়ে গেছেন।  কী করবো বলুন? চারপাশের মানুষদের কাছে ধার-দেনা করে চলেছি এতদিন। এখন আর কেউ ঋণও দেয় না। তারপরও পরিচিতজনদের কাছে হাত পাতছি।’

গাইবান্ধা থেকে রাজশাহী এসে প্রায় চার বছর থেকে বিভিন্ন রকমের কাজ করেছেন শরিফুল ইসলাম।  তার সাথে কথা হয় রাজশাহী রেলস্টেশনে । তিনি জানান, এস এস সি পাস করার পর এলাকা ছেড়ে রাজশাহী চলে আসেন।  প্রথমদিকে কয়েক মাস পরিচিতি এক লোকের সাহায্যে, রাজশাহী বাস টার্মিনালের একটা বাস কাউন্টারে সহকারী ম্যানেজারের কাজ পান।  বেতন পেতেন আট হাজার টাকা।  বাস বন্ধ ব্যবসা খারাপ যাওয়ার কারণে বেকার হয়ে আছেন শরিফুল।

সংসারে স্ত্রী ছাড়াও একটা ছোট মেয়ে আছে শরিফুলের। এখন কোনো কাজ নেই। বিভিন্নজনের দ্বারে দ্বারে কাজ খুঁজছেন। জমানো টাকা যা ছিল শেষ।  এখন রাস্তায় নেমেছেন।  সাহায্য নয়, একটা কাজ চান শরিফুল।  সামনে ঈদ।  কী করবেন, না করবেন ভাবতে পারছেন না।  যেকোনো একটা কাজ করতে চান শরিফুল।

রেলস্টেশনে প্রায় সন্ধ্যার পরে একজন মহিলা এসে সাহায্য চান এলাকাবাসীর কাছে।  খুব কাতর স্বরে সামান্য কিছু সাহায্য চেয়েই যান এই মহিলা।  সঙ্গে তার ৩ বছরের ছেলে।  প্রায় দেখা হবার কারণে একদিন কথাও হয় তার সঙ্গে।  তার পোশাক, কথা বলার ধরন, আচরণ কোনোটাই তাকে পেশাদার সাহায্যপ্রার্থী মনে হয় না।

জানতে চাইলে নিচের দিকে তাকিয়ে থেকে বলেন, শিরোইল কলোনীর ১ নং গলির ভেতরের দিকে ছোট একটা রুম নিয়ে থাকি।  স্বামী রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। এখন তেমন কাজ পাচ্ছে না, দুই মাসের বাসা ভাড়া আটকে আছে। নিজে টুক টাক করে সংসার চালাচ্ছি।

তাই এখন আর পারছেন না।  লজ্জা শরমের মাথা খেয়ে এখন রোজার মাসে মানুষের কাছে হাত পাতছেন।  যাকাত-ফেতরার টাকাও যদি কেউ সাহায্য করেন, সেই আশায় পাশের গলিতে সাহায্য চাইছেন।  হাজার দশেক টাকা হলেই শহর ছেড়ে চলে যাবেন। সাত হাজার টাকা বাড়িওয়ালাকে দিয়ে বাকি তিন হাজার টাকা নিয়ে গ্রামের বাড়ি ফরিদপুর  চলে যাবেন বলে জানান মমিনা বেগম।

নিয়মিত সাহায্যপ্রার্থী আর ভিক্ষুকদের পাশাপাশি এখন এই মহানগরীর নগরজুড়ে ইদানীং শত শত মানুষকে দেখা যাচ্ছে। যারা বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে, বিভিন্নভাবে সাহায্য প্রার্থনা করছেন। কেউ লজ্জায় নিজেদের আড়ালে রাখছেন।  আবার কেউ প্রকাশ্যেই চাইছেন সাহায্য। কেউ কেউ সাধ্যমতো সাহায্য করছেন। আবার অনেকে কারো প্রতি বিরক্তি প্রকাশ করছেন।

Next Post

আসলামের পাশে দাঁড়িয়েছেন নাটোর গুরুদাসপুরের ইউএনও

বুধ মে ১২ , ২০২১
নাটোর প্রতিনিধিঃ সেই আসলামের পাশে দাঁড়িয়েছেন নাটোর গুরুদাসপুরের ইউএনও তমাল হোসেন। গতকাল মঙ্গলবার “এখনও মায়ের শাড়ি কিনতে পারেনি শিশু আসলাম” এই শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশ হয়। সেই সংবাদ নজরে আসে গুরুদাসপুরের ইউএনও তমাল হোসেনের। পরে সংবাদ দেখার পর পরই সেই আসলাম ও তার মাকে ডেকে ঈদের পোষাক ও ঈদ সামগ্রী […]

এই রকম আরও খবর

Chief Editor

Johny Watshon

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat. Duis aute irure dolor in reprehenderit in voluptate velit esse cillum dolore eu fugiat nulla pariatur

Quick Links