মিন্নির পুরো শরীরে ব্যথা আছে। তিনি রাতে ঘুমাতে পারেন না। মানসিকভাবে বিপর্যস্ত তিনি।’

আভা ডেস্কঃ বরগুনার চাঞ্চল্যকর রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় গ্রেফতার তার স্ত্রী ও মামলার প্রধান সাক্ষী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নির সঙ্গে জেলহাজতে দেখা করেছেন তার আইনজীবী। বরগুনা বারের সাধারণ সম্পাদক ও মিন্নির আইনজীবী মো. মাহবুবুল বারী আসলাম বুধবার দুপুরে তার সঙ্গে জেলহাজতে দেখা করেন।

পরে মিন্নির উদ্ধৃতি দিয়ে আইনজীবী মাহবুবুল বারী আসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘মিন্নির পুরো শরীরে ব্যথা আছে। তিনি রাতে ঘুমাতে পারেন না। মানসিকভাবে বিপর্যস্ত তিনি।’

এমতাবস্থায় মিন্নির চিকিৎসা দরকার জানিয়ে আইনজীবী মাহবুবুল বারী বলেন, জেল সুপারের উপস্থিতিতে মিন্নির সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তিনি বলেছেন তার সঙ্গে জোর-জবরদস্তি করা হয়েছে। তার ওপর নির্যাতন চালানো হয়েছে, সে খুব অসুস্থ। তার চিকিৎসার প্রয়োজন।

এ সময় সাংবাদিকরা মিন্নির ওপর কী ধরনের নির্যাতন চালানো হয়েছে জানতে চাইলে আইনজীবী বলেন, এ বিষয়ে তিনি বিস্তারিত কিছু জানায়নি। তবে তিনি খুবই অসুস্থ। তিনি জানিয়েছেন তার শরীরে খুব ব্যাথা। তার চিকিৎসার প্রয়োজন। কারাগারে তিনি খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটছিলেন।

মিন্নিকে দিয়ে জোর করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়ানো হয়েছে বলেও আইনজীবীকে জানান মিন্নি। মাহবুবুল বারী মিন্নির উদ্ধৃতি দিয়ে জানান, ‘মিন্নি রিফাত হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে যে জবানবন্দি দিয়েছেন তা পুলিশ শিখিয়ে দিয়েছে। সেই জবানবন্দি মিন্নি প্রত্যাহার করতে চাচ্ছেন। তাই আমি মিন্নিকে এই স্বীকারোক্তি প্রত্যাহারের আবেদনের প্রক্রিয়া শিখিয়ে দিয়েছি।’

কারাগারে মিন্নি পড়াশোনা করতে চান বলে জানান তার আইনজীবী। এ বিষয়ে জেল সুপারের সঙ্গে কথাও হয়েছে বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, জেল সুপার জানিয়েছেন মিন্নির বাবা এ বিষয়ে আবেদন করলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এরআগে, ২২ জুলাই মিন্নির চিকিৎসার আবেদন নামঞ্জুর করেন বরগুনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত। সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মোহাম্মাদ সিরাজুল ইসলাম গাজী আবেদন নামঞ্জুর করে বলেন, জেল কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

এদিকে মিন্নিকে নিপীড়ন করে জোর করে জবানবন্দি নেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তার বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর। তিনি হত্যা মামলার তদন্তভার পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনে (পিবিআই) স্থানান্তরের দাবি জানিয়েছেন।

বুধবার দুপুর ১২টার দিকে বরগুনা প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ দাবি জানান।

মিন্নিকে দিয়ে জোর করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নেয়া হয়েছে অভিযোগ করে তার বাবা বলেন, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে পুলিশ মিন্নির জবানবন্দি নিয়েছে। প্রভাবশালী মহলকে বাঁচাতে পুলিশ এ ঘটনায় মিন্নিকে ফাঁসাচ্ছে। তাই এ মামলার তদন্ত পিবিআইতে স্থানান্তরের দাবি জানাচ্ছি।

প্রসঙ্গত বরগুনা সরকারি কলেজের মূল ফটকের সামনের রাস্তায় ২৬ জুন সকাল ১০টার দিকে স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নির সামনে কুপিয়ে জখম করা হয় রিফাত শরীফকে। বিকাল ৪টায় বরিশালের শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।

এ হত্যার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশব্যাপী তোলপাড় শুরু হয়। হত্যাকাণ্ডের পরের দিন রিফাত শরীফের বাবা আবদুল হালিম শরীফ বরগুনা থানায় ১২ জনকে আসামি করে মামলা করেন। এ ছাড়া সন্দেহভাজন অজ্ঞাতনামা আরও চার-পাঁচজনকে আসামি করা হয়। এ মামলার প্রধান আসামি নয়ন বন্ড ২ জুলাই পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন। মামলার এজাহারভুক্ত ছয় আসামিসহ এ পর্যন্ত ১৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৪ জনই স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।

রিফাত হত্যা মামলার প্রধান সাক্ষী ও রিফাতের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিকে গ্রেফতার ও রিমান্ডে গিয়ে তার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়ার পর থেকে মামলা ভিন্ন দিকে মোড় নেয়।

১৬ জুলাই সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বরগুনার মাইঠা এলাকার বাবার বাসা থেকে মিন্নিকে জিজ্ঞাসাবাদ ও তার বক্তব্য রেকর্ড করতে বরগুনা পুলিশলাইনসে নিয়ে যায় পুলিশ। এর পর দীর্ঘ ১০ ঘণ্টার জিজ্ঞাসাবাদ শেষে রাত ৯টায় মিন্নিকে রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়।

পর দিন মিন্নিকে আদালতে হাজির করা হয়। আদালতে তার পক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলেন না। আদালত মিন্নির পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন মঞ্জুর করেন আদালতের বিচারক মো. সিরাজুল ইসলাম গাজী।

পর দিন বৃহস্পতিবার বরগুনার পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন সংবাদ সম্মেলনে জানান, মিন্নি তার স্বামী রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। এ হত্যার পরিকল্পনার সঙ্গেও তিনি যুক্ত ছিলেন।

গত শুক্রবার বিকালে মিন্নি একই আদালতে তার স্বামী রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। পরে আদালত তাকে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

এদিকে মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হক কিশোরের দাবি, মিন্নির কাছ থেকে জোর করে জবানবন্দি নেয়া হয়েছে। তিনি এ হত্যা মামলার এক নম্বর সাক্ষীকে (মিন্নি) আসামি করা ও রিমান্ডে নেয়ার জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুকে দায়ী করে আসছেন। শুক্রবার গণমাধ্যমকে তিনি বলেছিলেন, ‘সবকিছুই শম্ভু বাবুর খেলা। তার ছেলে সুনাম দেবনাথকে রক্ষা করার জন্য আমার মেয়েকে বলি দেয়া হচ্ছে।’ শম্ভুর ছেলে সুনামের বিরুদ্ধে কিশোরের অভিযোগ, তার জন্যই এতদিন মিন্নির পক্ষে আদালতে দাঁড়াননি আইনজীবীরা। এ নিয়ে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বহু সমালোচনার পর বরগুনা ও ঢাকার আইনজীবীদের একটি অংশ মিন্নির পক্ষে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন।

যুগান্তর

Next Post

সেভেন মার্ডারের মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি নুর হোসেনের বিরুদ্ধে করা ১৭ লাখ ৬৫ হাজার টাকা আত্মসাতের মামলায় অব্যাহতির আদেশ বাতিল

বুধ জুলাই ২৪ , ২০১৯
আভা ডেস্কঃ নারায়ণগঞ্জে সেভেন মার্ডারের মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি নুর হোসেনের বিরুদ্ধে করা ১৭ লাখ ৬৫ হাজার টাকা আত্মসাতের মামলায় অব্যাহতির আদেশ বাতিল করেছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে ছয় মাসের মধ্যে মামলাটি নিষ্পত্তির নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। নুর হোসেন ১৯৯৯ সালে সিদ্ধিরগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান থাকার সময়ে ১১টি চেকের মাধ্যমে ১৭ লাখ ৬৫ হাজার টাকা […]

Chief Editor

Johny Watshon

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat. Duis aute irure dolor in reprehenderit in voluptate velit esse cillum dolore eu fugiat nulla pariatur

Quick Links