মিথ্যা তথ্যে মামলায় সরেরহাট এতিমখানা কর্তৃপক্ষকে আদালতের ভৎসনা!

নিজস্ব প্রতিনিধিঃ জাতির দর্পণ, রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ এবং জাতির বিবেক হিসেবে পরিচিত সাংবাদিকতা পেশা। আর দেশের প্রতিটি প্রান্তে প্রতিনিয়ত ঘটে যাওয়া নানা ঘটনা, দুর্ঘটনা এবং অনিয়ম দূর্নীতি সম্পর্কে সঠিক তথ্য তুলে ধরতে জীবন বাজি রেখে কাজ করে চলেছেন সাংবাদিকরা। তবে অনিয়ম-দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরতে গিয়ে সাংবাদিকরা প্রায়শই বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন, হচ্ছেন হামলা-মামলার স্বীকার, এমনকি সন্ত্রাসী আক্রমণে প্রাণটাও বিসর্জন দিতে হচ্ছে সাংবাদিকদেরকেই। সম্প্রতি ঢাকা থেকে প্রকাশিত জাতীয় দৈনিক ‘নাগরিক ভাবনা’র একটি অনুসন্ধানী দল রাজশাহীর একটি এতিমখানার দুর্নীতির তথ্য প্রকাশ করায় পত্রিকার প্রকাশকসহ তিন সাংবাদিকের নামে জামিন অযোগ্য ধারা দিয়ে মিথ্যা মামলা দায়ের করেন এতিমখানা কর্তৃপক্ষ। পরবর্তীতে পত্রিকার ঐ তিন সাংবাদিককে আদালত সমন জারি করলে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল সাংবাদিকরা আদালতে উপস্থিত হয়ে বিচার প্রার্থনা করেন। বিচার কার্যক্রম শুরু হলে শুরুতেই বেড়িয়ে আসে বাদী পক্ষের মিথ্যা তথ্য দিয়ে শুধুমাত্র হয়রানির উদ্দেশ্যে মামলা দায়েরের বিষয়টি। এ সময় বিচারক মামলার বাদীকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে মামলা দায়ের করায় আদালতে উপস্থিত সকলের সামনে ভৎসনা করেন ও উপযুক্ত তথ্য প্রমাণ দাখিলের নির্দেশ দিয়ে পত্রিকার প্রকাশকসহ তিন আসামীকে জামিন দেন।

সূত্রে জানা যায়, রাজশাহীর বাঘা উপজেলার সরেরহাট কল্যাণী শিশু সদন নামের একটি এতিমখানার বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট অনিয়ম ও দুর্নীতির তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা শুরু করে জাতীয় দৈনিক ‘নাগরিক ভাবনা’। প্রতিবেদন প্রকাশের পরপরই সারাদেশে বিভিন্ন মহলে সাড়া পড়ে যায়। সেই সাথে শুরু হয় ‘নাগরিক ভাবনা’র রাজশাহী জেলা প্রতিনিধি রবিউল ইসলাম ও উপ সম্পাদক রেজাউল করিমকে ঐ এতিমখানা কর্তৃপক্ষের হুমকি-ধামকি। কিন্তু দৈনিক ‘নাগরিক ভাবনা’ সিদ্ধান্তে অবিচল থেকে প্রকাশ করে যায় একের পর এক তিনটি ধারাবাহিক প্রতিবেদন। একের পর এক প্রতিবেদনে প্রতিষ্ঠানটির সকল অনিয়ম দুর্নীতির চিত্র বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হয়। বেড়িয়ে আসে নানা দুর্নীতিসহ এতিমের নামে আসা সরকারি বরাদ্দের টাকা কিভাবে নিজেদের বিলাসিতায় ব্যবহার করছেন প্রতিষ্ঠানটির মালিক এবং মালিকের দুই ছেলে। শুধু তাই নয়, সরেরহাট এতিমখানা কর্তৃপক্ষকে ইন্ধনদানকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নাম-ও চলে আসে প্রকাশিত প্রতিবেদনে। আর তখনই মরণ ছোবল দেয় এতিমখানা কর্তৃপক্ষ। রাজশাহীর আমলী আদালতে ‘নাগরিক ভাবনা’র প্রতিনিধিদের চাঁদাবাজ আখ্যায়িত করে পত্রিকার সম্পাদক-প্রকাশকসহ তিন সাংবাদিকের নামে এজাহার দাখিল করেন। এজাহার দাখিলের পর আদালত সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে তদন্তের নির্দেশ দেন উপজেলা সমাজসেবা দপ্তরের দ্বায়িত্বরত কর্মকর্তাকে, যার বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে সংবাদ প্রকাশ করেছে দৈনিক ‘নাগরিক ভাবনা’। যার ফলে পর্যাপ্ত তদন্ত না করেই বাদী পক্ষের এজাহারে উল্লেখিত আসামীদের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন জমা দেন তদন্ত কর্মকর্তা।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তার তদন্ত প্রতিবেদন প্রাপ্তির পর সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নিয়ে পত্রিকার সম্পাদক-প্রকাশকসহ তিন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে সমন জারি করেন আদালত। গত ১৫ জুন (বৃহস্পতিবার) আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল তিন সাংবাদিক আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করেন। জামিন শুনানীর এক পর্যায়ে এজাহারে বাদী পক্ষের মিথ্যা তথ্য প্রদানের বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যায় বিচারকের কাছে। এ সময় প্রকাশিত সংবাদের সকল সাক্ষ্য প্রমাণ আদালতে জমা দানের তারিখ ঘোষণা করে তিন সাংবাদিকের জামিন মঞ্জুর করা হয়।
এজাহারে মিথ্যা তথ্য দেওয়ায় আদালতে বাদীকে ভৎসনা ও সাংবাদিকদের জামিন দেওয়ার বিষয়ে পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক আফরোজা সিদ্দিকা বলেন, “দশের কথা জানতে ও জানাতে-ই আমাদের ‘নাগরিক ভাবনা’র পথচলা। সমাজের সকল অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমাদের কলম চলবে, সত্য তথ্য প্রকাশ থেকে কোনভাবেই আমাদের বিরত রাখা যাবে না। দেশের বিচার ব্যবস্থার প্রতি আমাদের পূর্ণ আস্থা রয়েছে, মাননীয় বিচারকের রায়ে দেশবাসী আজকে তার প্রমাণ পেয়েছে।”
এ বিষয়ে মামলার আসামি রেজাউল করিম খান বলেন, “আমরা সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে ‘নাগরিক ভাবনা’য় প্রতিবেদন প্রকাশ করেছি। এতে করে একটি স্বার্থান্বেষী মহলের আতে ঘা লাগবে সেটাই স্বাভাবিক। এতে করে আমাদের কলম থেমে যাবে সেটি ভাববার কোন অবকাশ নেই। বরং আজকে মাননীয় আদালতের রায়ে আমরা আবারও পূর্ণ উদ্যোমে সমাজের সকল দুর্নীতি তুলে ধরবো। দুর্নীতি যে-ই করুক, আমরা খুজে বের করে তাদের দুর্নীতি ফিরিস্তি আকারে প্রকাশ করবো। আমাদের সাথে থাকুন, চোখ রাখুন ‘নাগরিক ভাবনা’য়, শীঘ্রই আরও বিস্তারিত তথ্য দিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হবে।”
দৈনিক ‘নাগরিক ভাবনা’র রাজশাহী জেলা প্রতিনিধি ও মামলার অপর আসামী রবিউল ইসলাম বলেন, “সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে হামলা-মামলা ঘটবেই। আর দুর্নীতির তথ্য প্রকাশ করলেই কণ্ঠরোধ করতে দেওয়া হবে চাঁদাবাজী মামলা, এটা-ই দুর্নীতিপরায়ন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানদের মূল হাতিয়ার। আমরা সত্যের পথে ছিলাম, আছি, থাকবো। কোন বাধা-ই সত্য প্রকাশে আমাদের পথরোধ করতে পারবে না, সত্যের জয় নিশ্চিত।”

Next Post

স্মার্ট বাংলাদেশে স্মার্ট কর্মক্ষেত্র তৈরি করবে জয় সেট সেন্টারঃ নন্দীগ্রামে প্রতিমন্ত্রী পলক

শনি জুন ২৪ , ২০২৩
আব্দুর রউফ উজ্জল, নন্দীগ্রাম (বগুড়া) প্রতিনিধিঃ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেছেন, স্মার্ট বাংলাদেশের তরুণ-তরুণীদের স্মার্ট কর্মক্ষেত্র তৈরি করবে জয় সেট সেন্টার। ২৪শে জুন (শনিবার) সকাল ৯ টায় বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলা পরিষদ প্রশাসনিক ভবনে জয় সেট সেন্টারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তেব্যে তিনি এ কথাগুলো […]

এই রকম আরও খবর

Chief Editor

Johny Watshon

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat. Duis aute irure dolor in reprehenderit in voluptate velit esse cillum dolore eu fugiat nulla pariatur

Quick Links