আভা ডেস্কঃ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ বলেছেন, ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঘটনা আমাদের ৭১-কে মনে করিয়ে দিয়েছে। এ ধরনের কর্মকাণ্ডে ঘৃণা প্রকাশের ভাষা আমাদের জানা নেই। আমি চাই, সবার মাঝে শুভ বুদ্ধির উদয় হোক।’
বৃহস্পতিবার (১ এপ্রিল) বিকেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সার্কিট হাউজে প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘আপনারা কাকে কষ্ট দিচ্ছেন? এসি-ল্যান্ডের কার্যালয় পুড়িয়েছেন, রেকর্ড রুম পুড়িয়েছেন। এতে তো সাধারণ মানুষের কষ্ট হবে। রেলওয়ে স্টেশন পুড়িয়েছেন, স্টেশনের কন্ট্রোল প্যানেল ভাঙচুর করে পুড়িয়েছেন, এতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সাধারণ মানুষ কষ্ট করছে। রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি ধ্বংস করছেন কেন? আপনাদের ক্ষোভ কি বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে? রক্তের হোলি খেলা গণতান্ত্রিক দেশে বরদাস্ত করা হবে না। দেশবাসী ব্রাহ্মণবাড়িয়াবাসীর সঙ্গে আছেন। আমরা ভয়কে অতিক্রম করব। সবাই মিলে আমরা নিরাপত্তা নিশ্চিত করব।’
আইজিপি বলেন, ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৫৭৪টি মাদরাসা আছে। এসব মাদরাসায় ১ লাখ ৩ হাজার ছাত্র আছে। তাদের ভরণপোষণ বাবদ বছরে খরচ হয় ৩৬০ কোটি টাকা। এই টাকা বহন করছেন আপনারা ব্রাহ্মণবাড়িয়াবাসী। আপনারা তাদের খেদমত করছেন। খেদমত করে এখন প্রতিশোধের শিকার হচ্ছেন। আমাদেরকে রুহানি আলেম ও পলিটিক্যাল আলেমদের চিনতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘ভিডিও ফুটেজ দেখে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে। চিহ্নিত করার পর তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আপনারা ভয় পাবেন না। প্রত্যেকটি ঘটনার জন্য মামলা করেন। তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। আমরা আছি আপনাদের পাশে। দেশবাসী আছে আপনাদের পাশে।’
পুলিশের মহাপরিদর্শক জানান, পুলিশ কেন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেনি, সেটা দেখা হচ্ছে।
মাইকিং করে পুলিশের আত্মরক্ষার কৌশল অপেশাদার আচরণ, এ মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘অপেশাদার পুলিশের দরকার নেই।’
প্রেস ব্রিফিংয়ে আরও উপস্থিত ছিলেন র্যাবের মহাপরিচালক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন, পুলিশের স্পেশাল ব্র্যাঞ্চের প্রধান মনিরুল ইসলাম, চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন, রেল পুলিশের ডিআইজি, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আনিসুর রহমান প্রমুখ।
এর আগে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীদের হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন স্থাপনা পরিদর্শন করেন পুলিশ মহাপরিদর্শক।
উল্লেখ্য, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে অংশ নিতে ২৬ মার্চ বাংলাদেশ আসেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তার বাংলাদেশ সফরের প্রতিবাদে গত ২৬ থেকে ২৮ মার্চ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ব্যাপক তাণ্ডব চালায় হেফাজতে ইসলামের কর্মীরা। তারা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বঙ্গবন্ধু স্কয়ার, শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ভাষা চত্বর, রেলওয়ে স্টেশন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভা, পৌর মেয়রের বাসভবন, পুলিশ সুপারের কার্যালয়, সিভিল সার্জনের কার্যালয়, জেলা মৎস্য অফিস, সার্কিট হাউজ, পৌরসভা কার্যালয়, জেলা পরিষদ কার্যালয় ও ডাকবাংলো, ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাব, খাঁটিহাতা হাইওয়ে থানা ভবন, আলাউদ্দিন সঙ্গীতাঙ্গন, আলাউদ্দিন খাঁ পৌর মিলনায়তন, মাতৃসদন, এসি-ল্যান্ডের কার্যালয়, সরকারি গণগ্রন্থাগার, জেলা ক্রীড়া সংস্থা, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের কার্যালয় ও বাসভবন, জেলা শিল্পকলা একাডেমি, হিন্দু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান দক্ষিণ কালীবাড়ি, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতির বাসভবন, জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের বাসভবনসহ প্রায় অর্ধশতাধিক সরকারি ও বেসরকারি স্থাপনায় হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও অগ্নি সংযোগ করে।