আভা ডেস্কঃ বিশ্বব্যাংকের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ঋণ-সহায়তা প্যাকেজের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এই প্যাকেজ থেকে বাংলাদেশসহ ৭৪টি দেশ সহায়তা পাবে।
বিশ্ব আর্থিক খাতের মোড়ল এই সংস্থাটি গত বুধবার জানিয়েছে, করোনাভাইরাস মহামারিতে বিপর্যস্ত অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে বাংলাদেশসহ ৭৪টি দেশকে ৯৩ বিলিয়ন ডলার অর্থসহায়তা দেবে। বর্তমান বিনিময় হার (প্রতি ডলার ৮৫ টাকা ৮০ পয়সা) হিসাবে বাংলাদেশি মুদ্রায় এই অর্থের পরিমাণ প্রায় ৮ লাখ কোটি টাকা।
তবে বিশাল অঙ্কের এই সহায়তার মধ্যে বাংলাদেশ কী পরিমাণ পাবে, তা জানায়নি বিশ্বব্যাংক। কম আয়ের দেশগুলোকে এই অর্থ অনুদান হিসেবে দেয়া হবে, না ঋণ হিসেবে দেয়া হবে, সে বিষয়েও বিস্তারিত কিছু জানায়নি সংস্থাটি।
বিশ্বব্যাংক বলছে, এই সহায়তা দেশগুলোকে অন্য মহামারি, আর্থিক সংকট, প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ ভবিষ্যতের যেকোনো সংকট মোকাবিলায় আরও ভালোভাবে প্রস্তুত হতে সহায়তা করবে।
বিশ্বব্যাংকের নমনীয় ঋণের সহযোগী প্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার (আইডিএ) মাধ্যমে এই ঋণ বিতরণ করা হবে। জাতিসংঘের চূড়ান্ত ঘোষণায় বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের কাতারে নাম লেখালেও ২০২৬ সাল পর্যন্ত স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) সুযোগ-সুবিধা পাবে। এর আওতায় বিশ্বব্যাংকের ৯৩ বিলিয়ন ডলারের সহায়তারও ভাগ পাবে বাংলাদেশ।
যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থিত বিশ্বব্যাংকের সদর দপ্তর থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আইডিএর পক্ষ থেকে এটি সবচেয়ে বড় আর্থিক সহায়তা। জাপান আয়োজিত দুই দিনব্যাপী এক ভার্চুয়াল বৈঠকে এই তহবিলের অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ডেভিড মালপাস বলেছেন, ‘আমাদের অংশীদারদের এই উদার প্রতিশ্রুতি হলো কোভিড-১৯ সংকট থেকে পুনরুদ্ধারের প্রচেষ্টায় দরিদ্র দেশগুলোকে সমর্থন করার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। উন্নয়ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে এবং বিশ্বজুড়ে লাখ লাখ মানুষের জীবনকে উন্নত করার জন্য একটি অখণ্ডিত এবং দক্ষ প্ল্যাটফর্ম হিসেবে আইডিএতে আমাদের অংশীদারদের আস্থার জন্য আমরা কৃতজ্ঞ।’
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিশ্বব্যাংকের এই তহবিলের মধ্যে ২৩ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলার দিচ্ছে উচ্চ ও মধ্যম আয়ের ৪৮টি দেশ। সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর পুঁজিবাজার ও বিশ্বব্যাংকের তহবিল থেকে এ অর্থ পাওয়া যাবে।
এই তহবিল দেশগুলোকে মহামারি, আর্থিক ধাক্কা, প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ ভবিষ্যতের সংকট মোকাবিলায় আরও ভালোভাবে প্রস্তুত হতে সহায়তা করবে। বিশ্বজুড়ে ৭৪টি দেশ এ অর্থ সহায়তা পেলেও এর প্রায় ৭০ শতাংশই আফ্রিকার দেশগুলো পাবে।
দক্ষিণ এশিয়ায় আইডিএ তহবিল পাওয়ার যোগ্য দেশগুলো হচ্ছে বাংলাদেশ, ভুটান, মালদ্বীপ, নেপাল, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান।
আইডিএর ঋণের শর্ত খুবই রেয়াতযোগ্য। যার মানে ধারের এ অর্থে সুদ অত্যন্ত কম বা পুরোপুরি শূন্য থাকে। আর সেই শর্তগুলো নির্ধারিত হয় প্রাপক দেশগুলোর ঋণসংকটের ঝুঁকি, মাথাপিছু আয় এবং ঋণ পাওয়ার যোগ্যতার ওপর।
এই তহবিল নিম্ন আয়ের দেশগুলোকে কোভিড-১৯ সংকট মোকাবিলা করে ঘুরে দাঁড়াতে এবং একটি সবুজ, আরও স্থিতিস্থাপক এবং অন্তর্ভুক্ত ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে সাহায্য করবে বলে বিশ্বব্যাংকের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে।
এতে বলা হয়, ‘এই দেশগুলোয় চলমান মহামারি দারিদ্র্যকে আরও খারাপ করছে, প্রবৃদ্ধি হ্রাস করছে এবং একটি স্থিতিস্থাপক এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের সম্ভাবনাকে বিপন্ন করছে।
দেশগুলোর সরকারি রাজস্ব হ্রাসের সঙ্গে লড়াই করছে। ঋণ দুর্বলতা বৃদ্ধি, ভঙ্গুরতা, দ্বন্দ্ব এবং অস্থিরতার জন্য আর্থিক খাতে ক্রমবর্ধমান ঝুঁকি বাড়ছে। সাক্ষরতার হার কমছে। দেশগুলোর প্রায় এক-তৃতীয়াংশ খাদ্যসংকটের মধ্যে পড়েছে।’
আইডিএ তহবিল সাধারণত তিন বছর পরপর সম্পূর্ণ করা হয়। তবে করোনা মহামারির কারণে সবশেষ অর্থায়ন এক বছর এগিয়ে নেয়া হয়েছিল, যা ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত চলবে।