বাংলার প্রবাদ এবং প্রবল বাস্তব- থুতু উপর দিকে ছুঁড়লে নিজের গায়েই পড়ে

আভা ডেস্ক : বাংলার প্রবাদ এবং প্রবল বাস্তব- থুতু উপর দিকে ছুঁড়লে নিজের গায়েই পড়ে ৷ সেটাই যেন ঘুরে ফিরে চলে এল৷ দলীয় গঠনতন্ত্রের যে নাগপাশ ভেঙে ছিলেন হরকিষণ সিং সুরজিৎ সেটা ভাঙতেই পারলেন না সীতারাম ইয়েচুরি, কারাতের দলবল৷ অগত্যা ঢোঁক গিলে অনেক কিছু হজম করতে হচ্ছে৷ করতেও হবে৷ কারণ এক কিংবদন্তির প্রয়াণ৷ যিনি মনে প্রাণে বামপন্থী তথা সিপিএম৷ বারবার আক্ষেপ করতেন- মৃত্যুর পর লাল পতাকা হয়ত আর দেহে থাকবে না৷

একজন কমিউনিস্টের জীবনে সব থেকে বড় ইচ্ছে তাঁর মৃত্যুর পর দেহে অন্তত লাল পতাকায় যেন ঢাকা থাকে৷ সেটা যে হতে যাচ্ছে না তাও বুঝতে পেরেছিলেন সোমনাথবাবু৷ অথচ তাঁর অবস্থানের কোনও খামতি ছিল না৷ আর সেটা ছিলনা বলেই বিশাল ব্যক্তিত্বের সামনে লিলিপুটের মতো দেখতে লাগছে গোটা দলটাকে৷

রাজনৈতিক গুরু জ্যোতি বসু৷ তাঁর রিক্রুট ছিলেন সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়৷ গুরুর প্রয়াণের পরে সেই ঐতিহাসিক শেষ যাত্রায় ছিলেন সস্ত্রীক৷ পরে জানিয়েছিলেন, যতবারই দেখা হত জ্যোতিবাবুর আন্তরিকতায় কোনও ছেদ পড়েনি৷ মুচকি হেসে বলতেন এই তো এসেছে এক্সপেলড লিডার৷ নিজের বিবেকের কাছে পরিষ্কার থাকবে৷ গুরুর কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করে গিয়েছেন সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়৷ সোমবার তাঁর প্রয়াণের সঙ্গে সঙ্গে শেষ হল ভারতের বাম আন্দোলনের একটি অধ্যায়৷

মৃত্যুর আগে কি তাঁকে ফিরিয়ে দেওয়া যেত না দলীয় সদস্য পদ ? দলেরই অভ্যন্তর থেকে নিচুতলা পর্যন্ত ছড়িয়েছে এই প্রশ্ন৷ আরও প্রশ্ন উঠছে এভাবে নির্বোধের মতো তাঁকে আলাদা করে রেখে আদতে কতটা রাজনৈতিক উচ্চতায় পৌঁছতে পারল সিপিএম ? আরও প্রশ্ন, এই অসৌজন্যের কোনও প্রয়োজন ছিল কি ?

প্রশ্নের পর প্রশ্ন আসবে, বাড়বে তার বহর৷ বঙ্গ কমিউনিস্টের বিশাল ব্যক্তিত্ব ও সংসদীয় রাজনীতির কাছে ফিকে হয়ে আসা দলটাই এখন ঢোঁক গিলছে৷ নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে হয়েছে সম্মান জানানো৷ তাতে আরও প্রকট অসৌজন্যের ধারাবিবরণী৷ অভিযোগ ছিল, দলের নির্দেশ না মেনে সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় লোকসভার অধ্যক্ষ পদ থেকে ইস্তফা দিতে চাননি৷ তাই তাঁর দলীয় সদস্য পদ কেড়ে নেওয়া হল৷ সোমনাথবাবু জানিয়েছিলেন, আমি সংসদীয় নিয়মের অধীনেই থাকতে চাই৷ ব্যস, শেষ হয়ে গিয়েছিল তাঁর সিপিএম জীবন৷ আদৌ কি শেষ হয়েছিল ?

পরবর্তী নির্বাচনগুলিতে এই ‘এক্সপেলড লিডার’ বারে বারে তাঁর ছেড়ে আসা দল সিপিএমের প্রার্থীদের হয়ে প্রচার করেছিলেন৷ সেখানেও তিনি তুলে ধরেছিলেন নিজের দুঃখের কথা৷ দিল্লিতে থাকা দলীয় নেতৃত্ব শোনেননি৷ ফলটা এমন হল যে সোমনাথবাবুর মৃত্যুর পরেও সিপিএমকে ভাবতে হয়েছে তাঁকে কতখানি শ্রদ্ধা জানিয়ে বার্তা দেওয়া দরকার৷ তার জন্য সময় লেগেছে পাঁচ ঘণ্টারও বেশি !!

সিপিএম বিশ্বাস করে- নিরন্তর প্রক্রিয়ায় দলের শুদ্ধিকরণ৷ যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ পদক্ষেপ৷ কিন্তু শুদ্ধিকরণ অভিযানের যারা হর্তা-কর্তার বিধাতা তাঁদের অন্তর শুদ্ধ হচ্ছে কি ? এই প্রশ্নই উঠতে শুরু করেছে সোমনাথবাবুর মৃত্যুর পর৷

ত্রিপুরার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী নৃপেণ চক্রবর্তীর বিরুদ্ধেও দলবিরোধী অভিযোগ উঠেছিল৷ তিনিও বহিষ্কৃত হয়েছিলেন সিপিএম থেকে৷ তবে প্রবীণ কমিউনিস্ট নেতার সর্বক্ষণের সাহায্যের জন্য দল থেকেই দায়িত্বে ছিলেন পার্টিকর্মী৷ ২০০৪ সালে নৃপেণবাবুর প্রয়াণের কিছু আগেই এই কিংবদন্তি নেতাকে দলীয় সদস্যপদ ফিরিয়ে দেওয়া হয়৷ মৃত্যুর পর লালপতাকায় মুড়ে গিয়েছিলেন তিনি৷ তেমনটা হতেই পারত সোমনাথবাবুর ক্ষেত্রে৷ কিন্তু তা হল না৷

দল থেকে নাকি একটা পতাকা দিয়ে মৃতদেহ ঢেকে রাখার আর্জি জানানো হয়েছিল৷ দৃঢ় স্বরে তা প্রত্যাখ্যান করেছেন সিপিএমের ‘এক্সপেলড লিডার’-এর উত্তরসূরীরা৷ কিন্তু জানিয়েছেন-বাবা আজীবন কমিউনিস্ট ছিলেন৷

চেনা উত্তরটাই মৃত্যুর পর বেশি করে শিখিয়ে দিয়ে গেলেন দৃঢ়চেতা বঙ্গ কমিউনিস্ট সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়৷
কলকাতা

Next Post

তাইওয়ানের একটি হাসপাতালে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে।

সোম আগস্ট ১৩ , ২০১৮
আভা ডেস্ক : তাইওয়ানের একটি হাসপাতালে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত নয়জন নিহত হয়েছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছে আরো ১৫ জন।রাজধানী তাইপের কাছে সোমবার সকালে একটি হাসপাতালে এ অগ্নিকাণ্ড ঘটে। স্থানীয় দমকল বিভাগ জানিয়েছে, অগ্নিকাণ্ড থেকে চারদিকে ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ায় শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে যায়। এ কারণে নয়জনের মৃত্যু হয়েছে। […]

এই রকম আরও খবর

Chief Editor

Johny Watshon

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat. Duis aute irure dolor in reprehenderit in voluptate velit esse cillum dolore eu fugiat nulla pariatur

Quick Links