বন্যপ্রাণী ও মৎস্য আইন কার্যকরভাবে বাস্তবায়নের দাবি রাজশাহীর তরুণ সংঘের ।

নিজস্ব প্রতিনিধিঃ ‘প্রাণপ্রকৃতি, প্রাণবৈচিত্র্য ও পরিবেশ সুরক্ষায় সর্তক ও সচেতন তারুণ্য’ এই স্লোগানে পাখি ও বন্যপ্রাণীসহ সকল প্রাণীর প্রাণের নিরাপত্তা নিশ্চিতে অবিলম্বে ‘বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন, ২০১২’ এবং কারেন্ট জাল নিষিদ্ধকারী ‘মৎস্য সুরক্ষা ও সংরক্ষণ আইন, ২০০২’ কার্যকর ভাবে বাস্তবায়নের দাবিতে প্রতিবাদী সমাবেশ ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

রাজশাহী মহানগরীর সাহেববাজার জিরোপয়েন্টে আজ শনিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১টা হতে ঘন্টাব্যাপী প্রতিবাদী সমাবেশ ও মানববন্ধন কর্মসূচির আয়োজন করে রাজশাহীর তরুণ সংগঠন ইয়ুথ এ্যাকশন ফর সোস্যাল চেঞ্জ-ইয়্যাস।

এসময় রাজশাহীসহ সারাদেশে পাখি ও বন্যপ্রাণীসহ সকল প্রাণী হত্যার অবিলম্বে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ তদন্ত ও বিচারের মাধ্যমে প্রকৃত অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত এবং কারেন্ট জাল নিষিদ্ধ করারও দাবি জানান।

কর্মসূচিতে অতিথি হিসেবে বক্তব্য প্রদান করেন, রাজশাহীর প্রবীণ সাংবাদিক মোস্তাফিজুর রহমান খান আলম, প্রবীণ মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান আলী বরজাহান, নারী নেত্রী ও উন্নয়ন কর্মী আতিয়া। সমাবেশে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন ও সভাপতিত্ব করেন, রাজশাহীর তরুণ সংগঠন ইয়ুথ এ্যাকশন ফর সোস্যাল চেঞ্জ-ইয়্যাসের সভাপতি তরুণ নেতা শামীউল আলীম শাওন।

সংগঠনের কোষাধ্যক্ষ আতিকুর রহমান আতিকের সঞ্চালনায় মানববন্ধন ও প্রতিবাদী সমাবেশে বক্তব্য দেন, রাজশাহীর তরুণ সংগঠন ইয়ুথ এ্যাকশন ফর সোস্যাল চেঞ্জ-ইয়্যাসের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল ইসলাম আকাশ, নারী নেত্রী ও সমাজসেবী রিনা আক্তার। মানবন্ধন ও প্রতিবাদী সমাবেশে সংহতি প্রকাশ করেন জাতীয় আদিবাসী পরিষদের দপ্তর সম্পাদক সুভাষ চন্দ্র হেমব্রম, আদিবাসী ছাত্র পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি সাবিত্রী হেমব্রম।

প্রতিবাদী সমাবেশ ও মানববন্ধনে বক্তব্য প্রদানকালে রাজশাহীর প্রবীণ সাংবাদিক মোস্তাফিজুর রহমান খান আলম বলেন, ‘তরুণেরা আজ পাখি ও বন্যপ্রাণীসহ সকল প্রাণীর প্রাণের নিরাপত্তার বিষয় মাথায় রেখে পাখি ও বন্যপ্রাণীসহ সকল প্রাণী হত্যার বিচারের দাবিতে আন্দোলন করছে। তারা প্রচলিত বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন ও মৎস্য সুরক্ষা ও সংরক্ষণ আইন কার্যকর ভাবে বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার দাবি জানাচ্ছে। যাদের এ বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করার দায়িত্ব তারা অবিলস্বে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করুন। আর তা না পারলে দায়িত্ব ছেড়ে দিন।’

তিনি হুশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ‘দেশের ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বাধীনতা আন্দোলন পর্যন্ত প্রতিটি আন্দোলনে তরুণদের অবদান সবচেয়ে বেশি তাই ন্যায দাবি আদায়ের জন্য প্রয়োজনে তরুণরা দায়িত্ব পালনে ব্যার্থদের অপসারণসহ প্রাণপ্রকৃতি, প্রাণবৈচিত্র্য ও পরিবেশ সুরক্ষায় বৃহত্তর গণআন্দোলন গড়ে তুলতে বাধ্য হবে।’

প্রতিবাদী সমাবেশ ও মানববন্ধনে প্রবীণ মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান আলী বরজাহান বলেন, ‘রাজশাহীর এই তরুণরা বিনা পারিশ্রমিকে নিজের শহর, নিজের দেশের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা প্রাণপ্রকৃতি, প্রাণবৈচিত্র্য ও পরিবেশ সুরক্ষায় অক্লান্ত শ্রম দিয়ে যাচ্ছে। যদিও শহর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করা বা প্রাণবৈচিত্র্য সুরক্ষায় কাজ করার জন্য সরকারি বেতনের কর্মকতা-কর্মচারীরা রয়েছে। তারা তাদের দায়িত্ব ঠিকমত পালন করেন না বলেই আজ তরুণরা নিজ উদ্যেগে বিনা পরিশ্রমিকে এসব কাজ করছে।’

তরুণদের এই উদ্যোগের প্রশংসা করে সংস্লিষ্ট সকলকে তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন ও দায়িত্বশীল হওয়ার আহবান জানান প্রবীণ এ মুক্তিযোদ্ধা।

তারা দুজনেই রাজশাহীসহ সারাদেশে পাখি ও বন্যপ্রাণীসহ সকল প্রাণী হত্যার অবিলম্বে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ তদন্ত ও বিচার নিশ্চিত করা এবং কারেন্ট জাল নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি পাখি ও বন্যপ্রাণীসহ সকল প্রাণীর প্রাণের নিরাপত্তা নিশ্চিতে অবিলম্বে বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন, ২০১২ এবং কারেন্ট জাল নিষিদ্ধকারী মৎস্য সুরক্ষা ও সংরক্ষণ আইন, ২০০২ কার্যকর ভাবে বাস্তবায়নের দাবি জানান।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চার নেতাসহ সকল শহিদের স্বরণ করে এবং তাদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে প্রতিবাদী সমাবেশ ও মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, ‘পাখির কিচিরমিচি কলতানে এক সময় মানুষের ঘুম ভাঙতো। হরেকরকম পাখির উপস্থিতি প্রকৃতিকে আরো মনোরম করে তুলতো। বর্তমানে অনেক প্রজাতির পাখি হারিয়ে যাচ্ছে নানাবিধ কারণে। এরমধ্যে মানুষের সৃষ্ট কারণসমূহই প্রধান। জলবায়ুর পরিবর্তনজনিত বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বনাঞ্চল।’

জমিতে অব্যাহতভাবে সার কীটনাশক ব্যবহারের ফলে আগের মতো পাখিরা আর কিচিরমিচির করে না। শস্যদানা খাওয়ার লোভে পাখিরা কীটনাশক মিশ্রিত শস্য দানা খেয়ে বিষক্রিয়ার মারা যাচ্ছে বলে উল্লেখ করে বক্তরা আরো বলেন, ‘পাখিরা হারাচ্ছে তাদের আবাসস্থল। নদী পৃষ্ঠের লবণাক্ততা ও কীটনাশকের প্রভাব বেড়ে যাওয়ায় পাখির খাদ্য সংকটের পাশাপাশি নদী অঞ্চলে লবণাক্ত খাবার খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ছে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি। অধিক ফলনের আশায় কৃষক জমিতে অধিক মাত্রায় কীটনাশক ও রাসায়নিক সার ব্যবহার করার ফলে পরিবেশগত বিপর্যয়ের ফলে পাখি তার প্রজনন ক্ষমতা হারাচ্ছে। এতে একদিকে যেমন পাখির সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে, অপরদিকে বহু প্রজাতির পাখি বিলুপ্তির পথে।’

মৎস্য সুরক্ষা ও সংরক্ষণ (সংশোধন) আইন, ২০০২ কার্যকর ভাবে বাস্তবায়নের দাবি জানিয়ে সমাবেশে বলা হয়, ‘মৎস্য সুরক্ষা ও সংরক্ষণ (সংশোধন) আইন, ২০০২ এর ৪ ধারায় কারেন্ট জাল উৎপাদন, আমদানী, বাজারজাতকরণ, মজুত, বহণ, পরিবহণ, অধিকার, দখল বা ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। মৎস্য সুরক্ষা ও সংরক্ষণ (সংশোধন) আইন, ২০০২ এর ৫ ধারা অনুযায়ী, কারেন্ট জাল উৎপাদন, আমদানী, বাজারজাতকরণ, মজুত, বহণ, পরিবহণ, অধিকার, দখল বা ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। যাতে অপারাধী অনধিক ৫ (পাঁচ) বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও অনধিক ১০ (দশ) হাজার টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে এই আইন যে মানা হচ্ছে না।’

এছাড়াও বাংলাদেশের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৮(ক) এ রাষ্ট্র কর্তৃক জীববৈচিত্র্য, বন ও বন্যপ্রাণী, সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা বিধানের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে বলে উল্লেখ করে প্রতিবাদী সমাবেশ ও মানববন্ধনে বলা হয়েছে যে, বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন-২০১২ এর ৩৮(১) ধারা অনুযায়ী যেকোন দেশীয় ও পরিযায়ী পাখি শিকার, হত্যা, আটক, ক্রয়-বিক্রয় ও পরিবহন দণ্ডনীয় অপরাধ। যার সর্বোচ্চ শাস্তি ২ বৎসর কারাদণ্ড এবং ২ লাখ টাকা জরিমানা এবং বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন-২০১২ এর ৩৬ ধারা অনুযায়ী বন্যপ্রাণী আটক, হত্যা, শিকার, পরিবহন ও ক্রয়-বিক্রয় দণ্ডনীয় অপরাধ, যার সর্বোচ্চ শাস্তি ১২ বছরের কারাদণ্ড এবং ১৫ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। তথাপিও এরই ন্যায় প্রায় প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ভাবে দেশের নানা স্থানে পাখি ও বন্যপ্রাণীকে মৃত্যুর মুখে পতিত হতে হচ্ছে।

সম্প্রতি নওহাটা পৌর এলাকার বাসিন্দা বরকত আলী কর্তৃক রাজশাহীর পবা উপজেলায় তার কুলবাগানে (বরই বাগান) নিষিদ্ধ ঘোষিত কারেন্ট জাল দিয়ে শতাধিক পাখি হত্যার বিচারের দাবিতে রাজশাহীর জেলা প্রশাসক ও কারেন্ট জাল নিষিদ্ধের আইন রাজশাহীসহ দেশব্যাপী অবিলম্বে কার্যকর ভাবে বাস্তবায়ণের দাবিতে প্রধানমন্ত্রীকে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি তরুণ সংগঠন ইয়্যাসের পক্ষ থেকে পৃথক দুটি স্মারকলিপিও প্রদান করা হয়েছে বলে জানিয়ে দুঃখ ও ক্ষোভ প্রকাশ করে বলা হয় দুঃখজনক হলেও সত্য স্মারকলিপি প্রদানের পরও অদ্যবধী পাখি হত্যার বিচারে দৃশ্যমান কোন পদক্ষেপ দৃষ্টিগোচর হয়নি। এ বিষয়ে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

একই সাথে স্থানীয় প্রশাসন এবং মেয়র ও সংসদ সদস্যসহ সংস্লিষ্ট সকলের পাশাপাশি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রী কাছে রাজশাহীর পবা উপজেলার শতাধিক পাখির হত্যাকাণ্ডসহ সকল পাখি ও বন্যপ্রাণীর হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত এবং বিচারের দাবি জানানো হয়। অবিলম্বে দাবি বাস্তবায়ন না করা হলে ঘোরাও অবরোধ কর্মসূচিসহ বহত্তর আন্দোলনের মাধ্যমে দাবি আদায় করারও হুশিয়ারি দেয়া হয়েছে প্রতিবাদী সমাবেশ ও মানববন্ধন কর্মসূচিতে।

 

Next Post

বেগম জিয়ার মুক্তির আন্দোলন শুরু হবে রাজশাহী থেকে, মিনু ।

শনি ফেব্রু. ২৯ , ২০২০
নিজস্ব প্রতিনিধিঃ মিজানুর রহমান মিনু বলেন, বাংলাদেশে যে ভাবে বিচার হীনতা ও পক্ষপাতশূলক বিচার শুরু হয়েছে তার জন্য বিচারপতিরা দায়ী কম নয়। এর জন্য বাংলাদেশের জনগণ এই সকল বিচারপতিদের বিচার করবে। পক্ষপাতমূলক ও বর্তমান সরকারের আজ্ঞাবহ বিচারপতিরা বেগম খালেদা জিয়াকে জামিন কিংবা মুক্তি দিচ্ছে না। আদালতে আর কোন জামিন বা […]

এই রকম আরও খবর

Chief Editor

Johny Watshon

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat. Duis aute irure dolor in reprehenderit in voluptate velit esse cillum dolore eu fugiat nulla pariatur

Quick Links