Ava Desk : আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নীতির প্রশ্নে কখনও আপস নয়, এটাই হচ্ছে আমার কথা। আমি ছাত্ররাজনীতি করেছি, কিন্তু কখনও পদ-পদবি চাইনি। আমি, কামাল- আমরা ভাই-বোন সবাই, যাকে যখন যে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে সে দায়িত্ব পালন করেছি। শুক্রবার বিকালে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে ছাত্রলীগ আয়োজিত ‘জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান ও শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব’ স্মরণসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সাম্প্রতিক নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেক অনেক জ্ঞানী-গুণী, অনেক আঁতেল, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্নরা কী করেছেন? শিশুদের ঘাড়ে পা দিয়ে ফায়দা লুটবার জন্য নেমে পড়ল। ডিজিটাল বাংলাদেশ আমি করে দিয়েছি, আর তারই সুযোগ নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়াতে এবং বিভিন্ন জায়গায় অপপ্রচার চালিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাদের বিরুদ্ধে যখন ব্যবস্থা নিলাম, তখনই চারদিকে যেন হাহাকার। আন্তর্জাতিক পর্যায় থেকেও বিভিন্ন রকম চাপ। দেশে-বিদেশে সবার বিষয়টি মাথায় রাখা উচিত।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কখনও গুলি, কখনও গ্রেনেড হামলা করে আমাকে থামিয়ে দেয়ার চেষ্টা হয়েছে। সেগুলো পরোয়া করিনি। আমি যে পথে যাচ্ছি সঠিক পথে যাচ্ছি। বাংলার জনগণের জন্য যাচ্ছি। আমার বাবা-মা পরিবারের সবাই জাতির জন্য জীবন দিয়ে গেছে। এই জাতির মুখে হাসি ফোটানো আমার একমাত্র দায়িত্ব।
নিজের কথা বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটা কথা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের মাথায় রাখা উচিত। আমি স্কুলজীবন থেকে রাজনীতি করি। আইয়ুব খান আমল থেকে। আমাদের পরীক্ষায় ২০ নম্বরের পাকিস্তান আমল নিয়ে একটা চ্যাপটার ছিল। আমি পণ করেছি পাকিস্তান নিয়ে আমি লিখব না; লিখিনি। এজন্য ফেল করতে পারতাম। থার্ড ডিভিশন পেতে পারতাম। আমি আপস করিনি। কাজেই আমি সেই মানুষ। নীতির প্রশ্নে আপস নাই। এটাই আমার শেষ কথা।
শেখ হাসিনা বলেন, এখন অনেকে রাজনীতি করে নিজেদেরকে শুধু প্রতিষ্ঠিত করার জন্য, অর্থ-সম্পদের মালিক হওয়ার জন্য, আবার কেউ রাজনীতি করেন সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার জন্য। কিন্তু জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনের কথা চিন্তা করে যারা রাজনীতি করে ইতিহাস শুধু তাদের স্বীকৃতি দেয়। শত চেষ্টা করেও তাদের নাম মুছে ফেলা যায় না। সেই দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তার আদর্শ যদি মেনে চলা যায়, দেশের জন্য কিছু করা যাবে। তিনি বলেন, রাজনীতি শুধু পাওয়ার হিসাব কষার জন্য নয়, কতটুকু দেশকে দিতে পারলাম, কতটুকু মানুষের জন্য করতে পারলাম, কতটুকু মানুষকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারলাম সেখানেই সবচেয়ে বড় পাওয়া। এটা মনে করে যারা রাজনীতি করে তাদের কিছু চাইতে হয় না, ইতিহাস তাদের মূল্যায়ন করে।
ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, তোমাদেরকেই আদর্শের পতাকা সমুন্নত রেখে প্রগতির পথে দেশকে এগিয়ে নিতে হবে। তোমাদের আদর্শ, শিক্ষা, শান্তি, প্রগতি। শিক্ষার আলো জ্বেলে প্রগতির পথ ধরে শান্তির মশাল নিয়ে তোমাদের এগিয়ে যেতে হবে। বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারে উন্নত সমৃদ্ধ শান্তিপূর্ণ দেশ গড়ার যে লক্ষ্য নিয়ে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি, সে কাজটি তোমাদেরই করতে হবে।
তিনি বলেন, লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে যে স্বাধীনতা, সেই ইতিহাস মুছে ফেলা হয়েছিল, বিকৃত করা হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর নামটি ইতিহাস থেকে মুছে ফেলা হয়েছিল। ৭ মার্চের ভাষণ প্রচার নিষিদ্ধ ছিল। ২১ বছর পর্যন্ত তারা এটা করেছে। শত প্রতিকূলতার মাঝেও আওয়ামী লীগ এবং এ দেশের জনগণ জাতির পিতার নাম ধরে রেখেছিল। আমি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। সত্যকে কেউ দাবিয়ে রাখতে পারে না, সত্য উদ্ভাসিত হবেই। ৭ মার্চের সেই ভাষণ এখন ইউনেস্কোর প্রামাণ্য দলিল হিসেবে স্থান করে নিয়েছে।
বাংলাদেশের প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে ছাত্রলীগের অবদান আছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আইয়ুব খান, জিয়াউর রহমান, এরশাদ, খালেদা জিয়া সবার বিরুদ্ধে যে আন্দোলন হয়েছে এতে সবচেয়ে বেশি শহীদ হয়েছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। অর্থাৎ দেশের প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে ছাত্রলীগের অবদান রয়েছে। কাজেই ছাত্রলীগকে সেভাবেই চলতে হবে।
তিনি বলেন, আরেকটা কথা হচ্ছে ছাত্রলীগের ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া শিখতে হবে। সব থেকে বড় সম্পদ শিক্ষা। ধনসম্পদ চিরদিন থাকে না। অনেকে যদি অনেক ধনসম্পদ বানিয়ে গর্ব করে যে চিরদিন সুখে থাকবে। সেটা সম্ভব না। কিন্তু শিক্ষা এমন একটা সম্পদ, যা কেউ কেড়ে নিতে পারে না।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আমি এমন এক পরিস্থিতিতে দেশে ফিরে এসেছিলাম যখন খুনিরা পুরস্কৃত। যুদ্ধাপরাধীরা, যাদের আমার বাবা বিচার করে সাজা দিয়েছিলেন। তাদের ছেড়ে দিয়ে মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী, উপদেষ্টা ইত্যাদি বানানো হয়েছে। এরপর নানা আঘাত। কখনও গ্রেনেড পুঁতে রাখা, কখনও গুলি, নানা মডেলে তারা হামলার চেষ্টা চালিয়েছে। আমি এসব পরোয়া করিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার বয়স শেষ হয়ে গেছে। তোমরাই ভবিষ্যৎ। তোমরাই জাতির পিতার দেখানো পথে এগিয়ে যাবে। আমাদের অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করবে। যে আদর্শের পথ অনুসরণ করে বাংলাদেশকে আমরা উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে বিশ্ব দরবারে দাঁড় করিয়েছি। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে উন্নীত করতে পেরেছি। জাতির পিতার আদর্শ মেনে চলেছি বলেই সেটা সম্ভব হয়েছে। তোমরা সে ধারাবাহিকতা রক্ষা করবে।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আমি প্রধানমন্ত্রী হয়ে তো বদলে যাইনি। আমি মনে করি না, প্রধানমন্ত্রী হলেই তাঁতের শাড়ি বাদ দিয়ে দামি শাড়ি পরতে হবে? মেকাপ করতে হবে। চুল উঁচু করতে হবে। আমার চিন্তা একটাই, মানুষের জন্য কত কী করতে পারলাম। তাদের ভাগ্য কতটা বদলাতে পারলাম। এ সময় বাংলাদেশের স্বাধিকার আন্দোলন থেকে স্বাধীনতা পর্যন্ত এ দেশের প্রতিটি সংগ্রামে জাতির পিতা ও বঙ্গমাতার অবদানের কথা স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
অনুষ্ঠানের শুরুতে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে শোক দিবসের ব্যাজ পরিয়ে দেন ছাত্রলীগের চারজন ছাত্রী। পরে ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক, ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক দলীয় সভাপতির হাতে তার পারিবারিক কয়েকটি দুর্লভ ছবি হস্তান্তর করেন। এর আগে অনুষ্ঠানস্থলে প্রবেশমুখে ছাত্রলীগের আলোকচিত্র প্রদর্শনী ‘বঙ্গবন্ধু মানেই বাংলাদেশ’ ঘুরে দেখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে হুমকি ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদকের : সাংবাদিকদের উদ্দেশে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রব্বানী বলেন, আপনারা যখন তখন ছাত্রলীগকে নিয়ে যাচ্ছেতাই ছাপিয়ে দিচ্ছেন। আমরা আপনাদের বলছি, এর পরে এমন কিছু হলে আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা নেব।
প্রধানমন্ত্রীর সামনে গণমাধ্যম কর্মীদের উদ্দেশ করে গোলাম রব্বানী আরও বলেন, আমাদের নেত্রীর সামনেই বলতে চাই, আপনারা আর ছাত্রলীগকে নিয়ে যাচ্ছেতাই নিউজ করবেন না। উপমা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সোহাগ করা তারই সাজে শাসন করে যে। শাসন করা তারই সাজে সোহাগ করে যে।’ আপনারা আমাদের ইতিবাচক খবর তুলে ধরুন। আপনারা আমাদের ইতিবাচক কর্মকাণ্ডের খবর পত্রিকার প্রথম পাতায় হেড লাইন করুন। আমরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করে ইতিবাচক কাজ করে যাচ্ছি।
অনুষ্ঠান মঞ্চে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৌঁছার আগেও গণমাধ্যমকর্মীদের আরেকবার সতর্ক করেন গোলাম রব্বানী। তিনি পত্রিকার প্রথম পাতায় ছাত্রলীগের কোন নিউজ হবে তার নির্দেশনা দিয়ে বলেন, আপনারা প্রতিনিয়ত তথ্যসন্ত্রাস ছড়াচ্ছেন। ভবিষ্যতে এমন হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সঞ্চিত চন্দ্র দাস, সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসাইন, ঢাকা মহানগর উত্তর সভাপতি মো. ইব্রাহীম, সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান হৃদয়, দক্ষিণের সভাপতি মো. মেহেদি হাসান, সাধারণ সম্পাদক মো. জোবায়ের হোসেন। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. গোলাম রব্বানী।
jugantor