সংবাদ ডেস্কঃ ওয়াশিংটন ডিসি রাজশাহী সদর আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা বলেছেন, ‘উত্তরবঙ্গের যে পরিমাণ সম্পদ আছে, তার যদি সঠিক ব্যবহার করা যায়, তাহলে এর মাধ্যমে শুধু উত্তরবঙ্গের মানুষের উন্নয়ন হবে না, পুরো বাংলাদেশের উন্নয়ন হবে।’
তিনি আক্ষেপ করে বলেন, তবে বাস্তবে উত্তরবঙ্গকে সেইভাবে গুরুত্ব কম দেওয়া হয়। অথচ বাংলাদেশের সংবিধানে আছে উন্নয়নের ক্ষেত্রে আঞ্চলিক বৈষম্য করা যাবে না। আমি সংসদে এই দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের জন্য কাজ করে যাচ্ছি।
গত শনিবার (২০ এপ্রিল) সন্ধ্যায় যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ার ৫১৫৭ লি হাইওয়ে আর্লিংটনে এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। মেরিল্যান্ড, ওয়াশিংটন ডিসি ও ভার্জিনিয়া নিয়ে গঠিত ‘উত্তরবঙ্গ কমিউনিটি অফ গ্রেটার ওয়াশিংটন ডিসি’ এই সংবর্ধনার আয়োজন করে।
ওয়ার্কাস পার্টির এই নেতা উত্তরবঙ্গের অবদানের কথা তুলে ধরে বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ যে ভাত খায়, তার অর্ধেকের বেশি ৬০ শতাংশ উত্তরবঙ্গ থেকে আসে। একইভাবে ঢাকা শহরে যারা তাজা মাছ খায়, তারও ৬০ শতাংশ মাছ উত্তরবঙ্গ থেকে আসে। এমনকি আলুও সরবারহের ক্ষেত্রে উত্তরবঙ্গ এগিয়ে।
উত্তরবঙ্গের আম প্রসঙ্গে বলেন, ‘বলতে গেলে বাংলাদেশ প্রধান ফল হচ্ছে আম। সেটা সরবরাহ করে থাকে রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ। তবে দুঃখের বিষয় আম সেভাবে সংরক্ষণ করা সম্ভব হচ্ছে না। যদি এই এলাকায় একটি ‘ম্যাঙ্গ পার্ক’ করা যেত, তাহলে সেখান থেকে সারা বিশ্বের আম সরবরাহ করা সম্ভব হতো।
উত্তরবঙ্গের সাথে সড়ক ও রেল পথের সীমাবদ্ধতার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু সেতুর প্রথম ডিজাইনে রেল লাইনের পরিকল্পনা ছিল না। বর্তমানে চালু থাকা রেল লাইন আমরা এটা জোর করে বসিয়েছি। কিন্তু বর্তমানে একটা রেল লাইনও পর্যাপ্ত না।উত্তরবঙ্গ থেকে প্রতিদিন গড়ে সাড়ে তিনশ’ থেকে চারশ’ ট্রাক মাছ রাজধানী ঢাকায় যায়। আর অতিরিক্ত যানবাহনের কারণে প্রায়ই যমুনা সেতুতে যানযট লেগে থাকায় এসব ট্রাক যথাসময়ে ঢাকায় পৌঁছাতে পারে না। ফলে প্রতিদিন অনেক টাকার মাছ নষ্ট হয়।তিনি বলেন, গত পার্লামেন্টে আমাদের একটা প্রস্তাব ছিল, বঙ্গবন্ধু সেতুর পাশে পৃথক রেল লাইন করতে হবে। যা দিয়ে গোটা উত্তরবঙ্গের সাথে কনেকটিভিটি বাড়ানোর কথা। রেল কনেকটিভিটি যখন বাড়ানো হবে, তখন মালামাল এক্সপোর্ট করা সহজ হয়ে যাবে।
তিনি আরও বলেন, ‘রেল লাইনের ডিজাইন করার জন্য গত পার্লামেন্টে ৬ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল। পার্লামেন্টে বাজেট অধিবেশন আসলে এবার যাতে ব্রিজের টাকা বরাদ্দ হয়, সে জন্য আমি চেষ্টা করবো।’
উত্তরবঙ্গে দ্বিতীয় সেতু করার দাবি জানিয়ে বলেন, আমরা উত্তরবঙ্গে রোডের জন্য দুইটা সেতু দরকার। একটা বঙ্গবন্ধু সেতু আছে, আর দ্বিতীয় বঙ্গবন্ধু সেতু বাহাদুরাবাদ ঘাট দিয়ে করতে হবে। আমি মনে করি- যদি দুইটা ব্রিজ ও রেল হয়ে যায়। তাহলে উত্তরবঙ্গের সাথে ফল, ফলাদি, সবজি দ্রুত ঢাকায় পাঠানো সম্ভব হবে। এর ফলে উত্তরবঙ্গের লোকেরও কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে।
বাংলাদেশ ওয়ার্কাস পার্টির এই সাধারণ সম্পাদক বলেন, আমি সারা বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে কথা বলি। তবে সবচেয়ে বেশি উত্তরবঙ্গের কথাগুলো বলি। আমাদের বৈষম্যের কথাগুলো তুলে ধরি। আমরা কেন বঞ্ছিত হচ্ছি, কেন এই অঞ্চলকে গুরুত্ব কম দেওয়া হয়? এসব নিয়ে কথা বলি।
রাজশাহীর এই রাজনীতিবিদ ওয়াশিংটনে বসাবসকারীদের আঞ্চলিক একটা ফোরাম খোলার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘যে ফোরামে উত্তরাঞ্চলের সমস্যা নিয়ে আলোচনা করবেন। আর আপনাদের কোন পরামর্শ থাকলে সেটাও আমাকে জানাবেন, আমি পার্লামেন্ট সেগুলো তুলে ধরার চেষ্টা করবো।’
পরে মেরিল্যান্ড, ওয়াশিংটন ডিসি ও ভার্জিনিয়া নিয়ে গঠিত ‘উত্তরবঙ্গ কমিউনিটি অফ গ্রেটার ওয়াশিংটন ডিসি’ এই সংগঠনের কেক কেটে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করেন ফজলে হোসেন বাদশা।
সংবর্ধনায় উপস্থিত ছিলেন লেখক আনাম চৌধুরী,বিশিষ্ট ব্যাবসায়ী মকবুল হোসেন,মোহাম্মদ মোস্তফা,ইঞ্জিনিয়ার কচি,মোরশেদ টিটো,মোহাম্মদ রব্বানী,সারিকুল ইসলাম,শরিফুল ইসলাম,মামুন ইসলাম,রাজু আহমেদ, মাইনুল ইসলাম,রেজাউল ইসলাম,মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম,নাহিদ ইসলাম,মোহাম্মদ রহমান,পিকে মান্নান,তোফাজ্জল,শরিফ(নাটোর), মোহাম্মদ নজরুল, সানোয়ার,মোহাম্মদ মনির হোসেন,সেলিম আকতার,মোহাম্মদ সাহিন(পেন্সিলভেনি),মোহাম্মদ মনি, টিটো,তাজুল ইসলা,সাংবাদিক মোবাসসের,সাংবাদিক জাহিদুর রহমান,রোকসানা পারভিন,মোসাম্মৎ ইয়াসমিন মোহসিনা রিমি,ড.ফরিদা ইয়াসমি, নাজনিন রহমান,নাজমা তোফাজ্জল।
এদিকে ফজলে হোসেন বাদশাকে দেয়া এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে একদিনের নোটিশে ওয়াশিংটনে উত্তরাঞ্চলের প্রবাসীদের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক উপস্থিতি হয়, যা অনুষ্ঠানকে আরও প্রাণবন্ত করে। উপস্থিত সবাইকে আয়োজক কর্তৃপক্ষের থেকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানানো হয়।
ওয়াশিংটন ডিসি থেকে ফেইসবুকে মাধ্যমে সংগৃহীতঃ