আভা ডেস্ক : রাজধানীর আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিসে ২০ আগস্ট মা ও স্ত্রীর জন্য পাসপোর্টের আবেদন করেন মহসীন আলম মোল্লা। ২৬ আগস্ট তার ফোনে একটি কল আসে, ‘আমি এসবি অফিস থেকে এসআই রফিক বলছি। আপনি পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেছেন। আপনার ফাইল আমার কাছে আছে। এর ভেরিফিকেশন করতে হবে।’ এরপর মহসীন আলমের কাছে ওই ব্যক্তি তিন হাজার টাকা দাবি করেন। মহসীন আলম কিছুক্ষণের মধ্যেই বিকাশের মাধ্যমে দেড় হাজার টাকা পাঠিয়ে দেন। পরদিন ২৭ আগস্ট মালিবাগ এসবি (স্পেশাল ব্রাঞ্চ) অফিস থেকে মহসীন আলমকে ডাকা হয়। তখন তিনি বুঝতে পারেন, এর আগে ‘এসবির এসআই’ পরিচয়দানকারী ব্যক্তি ছিলেন ভুয়া।
‘ভুয়া এসবি’র এমন একটি সংঘবদ্ধ চক্র সক্রিয় রয়েছে আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিস ঘিরে। পাসপোর্ট অফিসের আশপাশের ফটোকপির দোকান ও পাসপোর্টের দালালদের কাছ থেকে বিভিন্ন ব্যক্তির আবেদন ফরমের কপি সংগ্রহ করে চক্রটি। এরপর চক্রের সদস্যরা মোবাইল ফোনে কল দিয়ে নিজেদের এসবি কর্মকর্তা পরিচয় দেয় এবং ভেরিফিকেশনের জন্য টাকা দাবি করে। আর এভাবেই প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে চক্রটি। প্রতিদিন কমপক্ষে ৫০ জন আবেদনকারীকে ফোন করে থাকে চক্রটি। প্রত্যেকের কাছ থেকে দেড় থেকে তিন হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়। বৃহস্পতিবার পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) হাতে এ চক্রের তিন সদস্য গ্রেফতার হলে বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর এসব তথ্য।
একই চক্রের ফাঁদে পড়েছিলেন একটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সহযোগী অধ্যাপক। ভেরিফিকেশনের জন্য তার কাছে দাবি করা হয় দুই হাজার টাকা। তিনি বিকাশের মাধ্যমে টাকা পাঠিয়ে দেন। পরে এসবি অফিসে গিয়ে বুঝতে পারেন তিনিও প্রতারণার শিকার হয়েছেন। পল্লবীর ফাতেমা ইসলামও (৬০) এ চক্রের প্রতারণার শিকার হয়েছেন। তার কাছ থেকে হাতিয়ে নেয়া হয় দেড় হাজার টাকা।
এ বিষয়ে পিবিআই ঢাকা মেট্রোর বিশেষ পুলিশ সুপার আবুল কালাম আজাদ শুক্রবার যুগান্তরকে জানান, বিষয়গুলো জানতে পেরে পিবিআই’র ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার প্রতারক চক্রের সদস্যদের গ্রেফতারে বিশেষ নির্দেশনা দেন। এরপর তদন্ত শুরু করে পিবিআই। আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিসের পাশে একটি স্টুডিও ও ফটোকপির দোকানের সামনে থেকে বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টায় প্রতারক চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেফতার করে পিবিআই ঢাকা মেট্রোর একটি বিশেষ দল। এরা হল- রাকিব মিয়া (২৬), কামাল হোসেন (২৭) ও মো. সজীব (২৮)। এরা জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, এ ধরনের প্রতারণায় জড়িত রয়েছে রুবেল, মনির ও ইউসুফসহ আরও ৭-৮ জন। চক্রের প্রধান রাকিব মিয়া।
বিশেষ পুলিশ সুপার আবুল কালাম আজাদ আরও জানান, ফোন কল লিস্ট ধরেই এদের শনাক্ত করার পর গ্রেফতার করা হয়েছে। অন্যদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। পিবিআই ঢাকা মেট্রোর এসআই এমদাদুল হক বাদী হয়ে এ চক্রের বিরুদ্ধে শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করেছেন।
জিজ্ঞাসাবাদের তথ্য উল্লেখ করে আবুল কালাম আজাদ জানান, আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিস এলাকার বিভিন্ন ফটোকপির দোকানদার ও দালালদের কাছ থেকে প্রতিটি আবেদন ফরমের কপি ২০০-৩০০ টাকার বিনিময়ে সংগ্রহ করে তারা। সেই ফরমে দেয়া মোবাইল নম্বরে ফোন করে এসবি পুলিশ অফিসার পরিচয় দিয়ে আবেদনকারীদের কাছে ভেরিফিকেশনের খরচ বাবদ টাকাপয়সা হাতিয়ে নেয়। প্রতিদিন তারা অন্তত ৫০ জন আবেদনকারীকে ফোন করে। ফোন করার জন্য তারা শেরেবাংলা নগর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠসহ বিভিন্ন নিরিবিলি স্থান বেছে নেয়। আবেদন করার দু’তিন দিন পর অফিস সময়ে ফোন করে তারা। বেশির ভাগ সময় আবেদনকারীরা দেখা করতে চাইলে তারা বলে, খরচের বিষয় আছে, আপনি আমার বিকাশ নম্বরে টাকা পাঠিয়ে দেন। আমি রিপোর্ট যথাসময়ে পাঠিয়ে দেব। যুগান্তর