দ্রুতগতিতে ধনী হওয়া মানুষের হারেও এখন শীর্ষে বাংলাদেশি নব্য ধনীরা

আভা ডেস্ক : অতিদ্রুত ধনী হওয়া মানুষের সংখ্যা বাড়ছে বাংলাদেশে। শুধু তাই নয়,প্রবৃদ্ধির হিসাবে দ্রুতগতিতে ধনী হওয়া মানুষের হারেও এখন শীর্ষে বাংলাদেশি নব্য ধনীরা। যুক্তরাজ্যভিত্তিক সম্পদ গবেষণা প্রতিষ্ঠান ওয়েলথএক্স সম্প্রতি এ তথ্য প্রকাশ করেছে।

সংস্থাটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ৬ বছরে এই হার বেড়েছে লক্ষ্যণীয়ভাবে। এই প্রতিবেদনের তথ্যকে দারিদ্র্যমুক্তির চেষ্টা চালানো বাংলাদেশের জন্য বিস্ময়কর বলে মন্তব্য করেছেন অর্থনীতিবিদরা। তাদের অনেকেরই ধারণা,ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে তা ফেরত না দেওয়া এবং সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ করে অনেকেই দ্রুত ধনী হচ্ছেন। এতে করে অল্প সংখ্যক মানুষের হাতে দেশের অধিকাংশ সম্পদ চলে যাচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ও অর্থনীতি বিশ্লেষক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, বাংলাদেশের মতো একটি দরিদ্র দেশে হঠাৎ করে ধনী মানুষের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া বিস্ময়কর ব্যাপার। তিনি উল্লেখ করেন, এটা পরিষ্কার যে বাংলাদেশের সম্পদ গুটিকয়েক মানুষের হাতে কেন্দ্রীভূত হচ্ছে। কিছু সংখ্যক ব্যক্তি বা গ্রুপ সম্পদের মালিক হচ্ছেন। এক্ষেত্রে ব্যাংক খাত থেকে টাকা নিয়ে ফেরত না দিয়ে অনেকে ধনী হচ্ছেন।

তিনি বলেন, দেখা যাচ্ছে সব খাতে এক বা দুই ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর হাতে বাজার নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। ফলে বাজার ব্যবস্থায় কোনও প্রতিযোগিতা থাকছে না।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক সম্পদ গবেষণা প্রতিষ্ঠান ওয়েলথ এক্স-এর তৈরি প্রতিবেদনটির নাম ‘ওয়ার্ল্ড আলট্রা ওয়েলথ রিপোর্ট-২০১৮’। ৫ সেপ্টেম্বর এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এতে বিভিন্ন দেশে সম্পদশালীর সংখ্যা বৃদ্ধির চিত্র তুলে ধরা হয়। ওয়েলথ এক্স মার্কিন ভেঞ্চার ক্যাপিটাল কোম্পানি ইনসাইট ভেঞ্চার পার্টনারসের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। সংস্থাটির দাবি, তাদের তথ্যভান্ডারে ১ লাখ ৬০ হাজারেরও বেশি ধনীর তথ্য রয়েছে। ৩ কোটি মার্কিন ডলার বা ২৫২ কোটি টাকার সম্পদ থাকলে তাঁদের আলট্রা ওয়েলদি বা অতি ধনী হিসেবে গণ্য করে সংস্থাটি।

ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, ধনী মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধির হিসাবে সবার ওপরে অবস্থান করছে বাংলাদেশ। এদের সংখ্যা বাড়ছে ১৭.৩ শতাংশ হারে। এরপরের অবস্থানে আছে চীন। সেখানে ধনীর সংখ্যা বাড়ছে ১৩.৭ শতাংশ হারে। ২০১২ সাল থেকে এ পর্যন্ত বাংলাদেশে প্রতিবছর ১৭ শতাংশ হারে ধনীর সংখ্যা বেড়েছে।

দেশে ধনীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়াকে সংবিধান লঙ্ঘন বলে মনে করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খন্দকার ইব্রাহিম খালেদ। তিনি বলেন,সংবিধানে আছে অর্থনীতির মূলনীতি হলো, সমাজতন্ত্র। আর সমাজতন্ত্র মানে হলো মানুষে মানুষে বৈষম্যটা কমিয়ে রাখা। কিন্তু সরকার লালন করছে পুঁজিবাদী অর্থনীতি যা চীনকেও ছাড়িয়ে গেছে। আমেরিকাকেও ছাড়িয়ে গেছে। এই কারণে দেশে ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হলেও সুবিধাভোগী হচ্ছে শীর্ষ ৫ শতাংশ মানুষ। তার মতে, দেশে বড় লোকই বড় লোক হচ্ছে। দরিদ্রের হাতে অর্থ থাকছে না। এমনকি নিম্ন মধ্যবিত্ত্বরা মধ্যবিত্ত হতে পারছে না। নিচের স্তরের মানুষের কোনও উন্নতি হচ্ছে না। তিনি উল্লেখ করেন,এদের একটা বড় অংশ ব্যাংকের টাকা চুরি করে ধনী হচ্ছে। নিয়ম ও অনিয়মের মধ্য দিয়ে এরা ধনী হচ্ছে। বিভিন্ন প্রকল্পের টাকা চুরি করেও ধনী হচ্ছে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) খানা আয়-ব্যয় জরিপ-২০১৬ এর তথ্য অনুযায়ী, ২০১০ সালের তুলনায় ২০১৬ সালে দেশে সবচেয়ে ধনী ৫ শতাংশ পরিবারের আয় প্রায় ৫৭ শতাংশ বেড়েছে। তাদের মাসিক আয় দাঁড়িয়েছে ৮৮ হাজার ৯৪১ টাকায়। বিপরীতে একই সময় সবচেয়ে দরিদ্র ৫ শতাংশ পরিবারের আয় কমেছে ৫৯ শতাংশ। তাদের মাসিক আয় দাঁড়িয়েছে ৭৩৩ টাকা।

বিবিএসের তথ্যমতে, বর্তমানে দেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি ২০ লাখ। সেই হিসাবে দেশে ৩ কোটি ৯৩ লাখ দরিদ্র মানুষ আছে। দেশের একটি পরিবারের গড় আয় ছয় বছরের ব্যবধানে সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা বেড়েছে। এখন একটি পরিবারের গড় আয় ১৫ হাজার ৯৪৫ টাকা। তবে এই আয় বৃদ্ধির দৌড়ে গরিবের চেয়ে ধনীরাই বেশি এগিয়ে আছে। অর্থাৎ আয়ের ক্ষেত্রে সৃষ্টি হয়েছে বড় ধরনের বৈষম্য।

যেমন দেশের সব মানুষের মোট আয়ের ৩৮ শতাংশই আয় করে ওপরের দিকে থাকা ১০ শতাংশ ধনী মানুষ। ছয় বছর আগে তাদের আয়ের পরিমাণ ছিল মোট আয়ের ৩৫ শতাংশের মতো।

অন্যদিকে, এখন মোট আয়ের মাত্র ১ শতাংশের সমান আয় করে সবচেয়ে গরিব ১০ শতাংশ মানুষ।
বাংলা ট্রিবিউন

Next Post

রাজশাহী হবে প্রাণবন্ত শহর, খেলাধূলার শহর, সংস্কৃতি চর্চার শহর, মেয়র লিটন

শুক্র সেপ্টে. ১৪ , ২০১৮
নিজস্ব প্রতিনিধি : রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেছেন, ‘আগামীতে রাজশাহী হবে প্রাণবন্ত শহর, খেলাধূলার শহর, সংস্কৃতি চর্চার শহর। বিগতসময়ে আমি মেয়র থাকাকালে খেলাধূলার ও সংস্কৃতি চর্চার উপর জোর দিয়েছিলাম। খেলার স্টেডিয়াম ও মাঠ সংষ্কার করে উন্নত করেছিলাম। কিন্ত গত ৫ বছরে সব ম্লান হয়ে গেছে। আমি দায়িত্ব […]

Chief Editor

Johny Watshon

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat. Duis aute irure dolor in reprehenderit in voluptate velit esse cillum dolore eu fugiat nulla pariatur

Quick Links