দলিত শব্দটি ব্যবহার না করার পরামর্শ ভারত সরকারের।

আভা ডেস্ক : ভারতে সমাজের বঞ্চিত ও শোষিত শ্রেণীকে বর্ণনা করার জন্য যে ‘দলিত’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়ে থাকে, সেটি প্রয়োগ না-করার জন্য দেশের টিভি চ্যানেলগুলোকে পরামর্শ দিয়েছে সরকার।

হাইকোর্টের দুটি সাম্প্রতিক রায়ের ওপর ভিত্তি করে ভারতের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় বিভিন্ন মিডিয়া হাউসের কাছে এই মর্মে অ্যাডভাইসরিও পাঠিয়েছে।

কিন্তু দলিত সমাজের বুদ্ধিজীবীরা এর তীব্র প্রতিবাদ করছেন – তারা মনে করছেন দলিত শব্দের ওপর নিষেধাজ্ঞার অর্থ হল তাদের আত্মপরিচয়কে অস্বীকার করার চেষ্টা।

ভারতে সমাজতাত্ত্বিকদেরও অভিমত, দলিতরা যদি নিজেদের ওই শব্দেই বর্ণনা করতে চান তাহলে সেটাই মেনে নেওয়া উচিত।

ভারতে ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকার দেশ জুড়ে নানা দলিত-বিরোধী পদক্ষেপ নিচ্ছে ও দলিতদের ওপর নির্যাতনে মদত দিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠছে বেশ কিছুকাল ধরেই – এখন সরকারের এই সবশেষ নির্দেশিকা সেই বিতর্কে আরও ইন্ধন জুগিয়েছে।

ভারতে এ বছরেই অন্তত দুটি হাইকোর্ট রায়ে বলা হয়েছিল, সংবিধানে যেহেতু দলিত শব্দটির কোনও উল্লেখ নেই তাই সেটির ব্যবহারও বাঞ্ছনীয় নয়।

সেই রায়কে অস্ত্র করেই দেশের সংবাদমাধ্যমে এই শব্দটির ব্যবহার নিষেধ করতে চেয়েছে সরকার।
ভারত দলিত রাজনীতি
দলিতদের নির্যাতন-বৈষম্যকে কেন্দ্র করে প্রায়ই সহিংসতা সৃষ্টি হয় ভারতে

কিন্তু বিজেপির দলিত এমপি উদিত রাজ নিজেই মনে করছেন, “দলিত শব্দটির ব্যবহার বন্ধ হলেই তাদের অবস্থা পাল্টে যাবে বিষয়টা মোটেও সেরকম নয় – আর তাই মিডিয়ারও উচিত শব্দটা ব্যবহার করে যাওয়া।”

ভারতে দলিত অধিকার আন্দোলনের প্রথম সারির নেতা ও লেখক-বুদ্ধিজীবী কানচা ইলাইয়া আবার এর মধ্যে সরকারের বিরাট দুরভিসন্ধি দেখতে পাচ্ছেন।

তিনি বলছিলেন, “ভারতীয় সমাজের শোষিত ও বঞ্চিতদের অধিকারের জন্য যারা লড়ছেন, তাদের সবার জন্য দলিত শব্দটা ঐক্য ও অনুপ্রেরণার এক বিরাট উৎস হয়ে উঠেছে – আর সরকার সেটাই ভেঙে দিতে চায়।”

“তা ছাড়া দলিত হল একটা আন্তর্জাতিক কনসেপ্ট – দলিত বলতেই সারা পৃথিবী বোঝে এখানে ভারতের কোটি কোটি অস্পৃশ্য, নিপীড়িত মানুষের কথা বলা হচ্ছে। বিজেপি যে ব্রাহ্মণ্যবাদের প্রতীক – দলিত ঠিক তার বিপরীত একটা ন্যারেটিভ।”

তবে সমাজের একটা শ্রেণীকে ঘোষিতভাবে নিপীড়িত বলে চিহ্নিত করা হবে, এটা খুব একটা পছন্দ নয় সমাজতাত্ত্বিক আশিস নন্দীর। কিন্তু ড: নন্দী পাশাপাশি এটাও বিশ্বাস করেন, এখানে দলিতরা নিজেদের কী বলতে চান সেটাই গুরুত্বপূর্ণ।
ভারত দলিত রাজনীতি
ভারতে ক্ষমতাসীন বিজেপির বিরুদ্ধে দলিতদের ক্ষেত্রে বৈষম্যের অভিযোগ এনেছেন সেই দলের এমপিরাই

তার কথায়, “ধরুন আপনি নিজেকে কান্যকুব্জ ব্রাহ্মণ বলতে চান – কিন্তু অন্যরা ফরমান দিল, না আপনাকে শুধু ব্রাহ্মণ বলা হবে। তাহলে কি আপনি সেটা শুনবেন? শুনবেন না। ঠিক একই ভাবে দলিতরা যদি নিজেদের হরিজন বা তফসিলি জাতিভুক্ত না-বলে শুধু দলিত-ই বলতে চায় তাহলে আমাদের সেটাই মানতে হবে।”

একটা গোষ্ঠীর আত্মপরিচয়ের ক্ষেত্রে তাদের ইচ্ছাই শেষ কথা বলে মনে করেন তিনি।

কিন্তু আশিস নন্দী সেই সঙ্গেই যোগ করছেন, “একটা গোষ্ঠীর নামই দলিত – বা ইংরেজিতে অপ্রেসড – সত্যি বলতে কি আমার খুব একটা যুক্তিসঙ্গত মনে হয় না। ভবিষ্যতে একদিন যারা নিপীড়িত থাকবেন না, তখনও কি দলিত নামটা চলবে? আমার তো মনে হয় চলবে না!”

“এর মধ্যেই তো ভারতে দলিত সমাজের অনেকেই নিজেদের নাম বদলে ফেলেছেন, নামের পেছনে সিং-ফিং জাতীয় পদবীও জুড়ে নিয়ে রাজপুত হয়ে গেছেন। গুজরাতে তো যেমন প্রায় শতকরা নব্বই ভাগ ক্ষত্রিয় বা রাজপুতই তো আসলে দলিত!”

সাংবাদিক ও অ্যাক্টিভিস্ট সাবাহ নাকভি আবার সতর্ক করে দিচ্ছেন – এখানে গণমাধ্যম যদি বিনা প্রতিবাদে সরকারের পরামর্শ মেনে নেয় তাহলে একদিন হিন্দু বা মুসলিম সম্প্রদায় বলাটাও হয়তো অসুবিধাজনক হয়ে পড়বে।

তিনি যুক্তি দিচ্ছেন, “দলিত শব্দটা তারা নিজেরাই বেছে নিয়েছে – এমন কী গান্ধীর পছন্দ করা হরিজন শব্দটির চেয়েও দলিত কথাটি তাদের বেশি পছন্দের। হরিজন তো আজ আর কেউ বলেই না। তাহলে আপনি কীভাবে দলিত বলা বন্ধ করবেন?”

“আর এভাবে চললে তো একদিন হিন্দুদেরও সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্প্রদায় বা মুসলিমদের সংখ্যালঘু, এভাবেই বলতে হবে। দলিত শব্দটা যদি সমাজের একটা অংশকে শক্তি ও মনোবল দেয়, সরকারের সমস্যাটা কোথায়?”

ভারতে বেশির ভাগ টেলিভিশন চ্যানেলই অবশ্য এখনও দলিত শব্দটির ব্যবহার বন্ধ করা নিয়ে কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি। কিন্তু সরকারের বিতর্কিত ওই নির্দেশিকা অবশ্যই দলিতদের মধ্যে নতুন সন্দেহের জন্ম দিয়েছে।
বিবিসি

Next Post

‘বাংলাদেশ, বাংলাদেশ’— গর্জন। গ্যালারিতে লাল-সবুজ পতাকার সমারোহ।

মঙ্গল সেপ্টে. ৪ , ২০১৮
ঘরের মাঠে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে ভুটানকে ২-০ গোলে হারিয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের পরের ম্যাচে ৬ সেপ্টেম্বর পাকিস্তানের বিপক্ষে ‘বাংলাদেশ, বাংলাদেশ’— গর্জন। গ্যালারিতে লাল-সবুজ পতাকার সমারোহ। ১৫ হাজার দর্শকের প্রতীক্ষা। বাংলাদেশের ফুটবলে প্রায় বিস্মৃত এক দৃশ্যই যেন আজ ফিরে এসেছিল বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে। নিজেদের মাঠ আর দর্শকদের অনুপ্রেরণায় উজ্জীবিত বাংলাদেশের ফুটবলাররা হতাশ করেননি […]

এই রকম আরও খবর

Chief Editor

Johny Watshon

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat. Duis aute irure dolor in reprehenderit in voluptate velit esse cillum dolore eu fugiat nulla pariatur

Quick Links