গোমস্তাপুর প্রতিনিধিঃ চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুরে গ্রাম্য সালিশে বিচার না পেয়ে সামিয়া খাতুন সাম্মি নামের এক স্কুলছাত্রী আত্মহত্যার অভিযোগ উঠেছে।
এর আগে গ্রাম্য সালিশ বসে স্থানীয় মাতাবররা ধর্ষণের ঘটনায় ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করে। তবে ভুক্তভোগি সেই টাকা না নিয়ে বাড়ি ফিরে যায়। পুরো ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা ছিলো না বলে পরিবারের অভিযোগ নিহত সাম্মির নানি মার্জিনা বেগমের।
তবে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপপরিদর্শক মোতাহার আলী জানান, বিষয়টি নিয়ে ইউডি মামলা হয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন হাতে আসলে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। সাম্মির নানি মার্জিনা জানান, মরার আগে সাম্মি বলেছিল ‘আমি টাকা চাই না। ছেলে কে চাই। টাকা নিয়ে তোমরা মিমাংশা করো না। আমি নয়নকে বিয়ে করবো।
এর আগে সালিশ বসে রোববার সন্ধ্যায়। আর সাম্মি মারা যায় মঙ্গলবার বেলা ১১ টার দিকে। সাম্মির নানি মার্জিনা অভিযোগ করে বলেন, গত ৭ আগস্ট সাম্মিকে তুলে নিয়ে যায় নয়ন। তার পরের দিন ফেরত আসে বিষয়টি থানায় জানানো হয়। এবিষয়টি নিয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান শফি আনসারী মিমাংশার করা কথা জানায়।
তবে আমি (সাম্মির নানি) মিমাংশায় বসতে চাইনি। আইনের মাধ্যমে যেতে চেয়েছিলাম। কিন্ত এক এসআইসহ স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান শফি আনসারী বসে মিমাংশার ব্যবস্থা করে দেন।
তিনি জানান, গত ৩০ আগস্ট সন্ধ্যায় মিমাংশার সময় চেয়ারম্যান শফি আনসারীর নেতৃত্বে দুই ইউপি সদস্য বারর আলী ও মনিরুল ইসলাম মনির উপস্থিতি ছিলো। সালিশে বিষয়টি সামাজিকভাবে মিমাংসা করে দেয়া ইউপি চেয়ারম্যান। এসময় ৫৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
তবে সাম্মি বিষয়টি মেনে না নিয়ে বিয়ের দাবি জানায়। অনুসন্ধানে জানা গেছে, রহনপুর ইউনিয়নের মিরাপুর তিনপুকুর গ্রামের সাদিকুল ইসলামের মেয়ে ও রহনপুর রাবেয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রীর প্রতিবেশী কেতবুলের ছেলে নয়নের (১৮) সাথে প্রেমের সর্ম্পক ছিল। বিষয়টি ছেলের পরিবার মেনে না নিয়ে প্রায় তিনমাস আগে নয়নের অন্যত্র বিয়ে দেয়। বিয়ের পরও ওই ছেলে তার সাথে সর্ম্পক চালিয়ে আসছিল। এর ধারাবাহিকতায় গত ৭ আগস্ট তারা বাড়ি থেকে পালিয়ে যায় ।
পরে দিন গত ৮ আগস্ট সন্ধ্যায় ছেলের পরিবারের লোকজন তাদের কে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে উদ্ধার করে এলাকায় নিয়ে আসে। পরে ওই স্কুলছাত্রী সাম্মিকে নয়নের পরিবারের লোকজন মারধর করে বাড়ি থাকে বের করে দেয়। মারধরে গুরুত্বর আহত ওই স্কুলছাত্রীকে স্থানীয়দের সহয়তায় পরিবারের লোকজন রহনপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে।
পরদিন এ ঘটনায় ওই স্কুল ছাত্রীর নানা তিনকড়ি গোমস্তাপুর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। এব্যাপারে পুলিশ কোন ভূমিকা না নেওয়ায় স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান শফি আনসারীর নেতৃত্বে দুই ইউপি সদস্য বারর আলী ও মনিরুল ইসলাম মনির উপস্থিতিতে গত ৩০ আগস্ট সন্ধ্যায় ওই এলাকায় একটি সালিশ অনুষ্ঠিত হয়।
সালিশে ৫৫ হাজার টাকা জরিমানার বিষয়টি মেনে নেয়নি। তার একদিন পরে সাম্মি আত্মহত্যা করে। এই ঘটনার পরে নয়নের পরিবার এলাকা ছেড়ে আত্মগোপনে রয়েছে। ওই স্কুল ছাত্রীর পরিবারের অভিযোগ প্রসঙ্গে ইউডি মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপপরিদর্শক মোতাহার আলী জানান, ময়না তদন্তের রিপোর্ট হাতে পেলেই বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।