খেলায় সৌভাগ্য বয়ে আনার প্রচেষ্টায় এমন ব্যবস্থা।

কোন কোন ফুটবলার এটা স্বীকার করেন, তবে অনেকেই এ নিয়ে পালন করেন নিরবতা।

তবে এটা এখন অনেকেই জেনে গেছেন যে বহু পেশাদার ফুটবলারেরই আছে বিচিত্র সব বাতিক ও কুসংস্কার, যা তারা নিষ্ঠার সাথে প্রতিটি ম্যাচেই পালন করে থাকেন।

এসব সংস্কারে আসলেই কোন কাজ কাজ হয় কিনা – তা বলা নিশ্চয়ই খুবই মুশকিল। তবে ফুটবলাররা নিশ্চিত যে এগুলো গুরুত্বপূর্ণ এবং এতে কাজ দেয়।

খেলায় সৌভাগ্য এনে দেবে – এই আশায় পৃথিবীর সেরা ফুটবলাররা কি ধরণের বিচিত্র সব কাজ করেন – তা কিছু দেখে নিন এখানে।
খেলার আগে যা করবেন: একটি রুশ ‘ক্লাসিক’

গেন্নারো গাত্তুসো ছিলেন ইতালি আর এসি মিলানের এক দুর্দান্ত মিডফিল্ডার। জার্মানিতে ২০০৬ সালের বিশ্বকাপে তার খেলা ইতালির শিরোপা জয়ের পেছনে বড় ভুমিকা রেখেছিল।

খেলার আগে গাত্তুসো করতেন এক বিচিত্র কাজ। তিনি ম্যাচ শুরু হবার আগে রুশ লেখক ফিওদর দস্তয়েভস্কির বই পড়তেন। দস্তয়েভস্কির ‘ক্রাইম এ্যান্ড পানিশমেন্ট’, ‘দি ব্রাদার্স কারামাজভ’ এবং ‘দি ইডিয়ট।’

তিনি কেন এটা করতেন তা স্পষ্ট নয়, কিন্তু এটা তার জন্য নিয়ম হয়ে গিয়েছিল।

তিনি ফিফাকে বলেছেন, তিনি নিজে খেলার সময় যে সব সংস্কার মেনে চলতেন – বিশ্বকাপে সেগুলো করা কঠিন।

“প্রতিদিন আমি সেই একই সোয়েটার পরে থাকতাম – যা আমি প্রথম দিন পরেছিলাম। আমি দরদর করে ঘামতাম, কিন্তু ওটা আমি গা থেকে খুলতেও পারতাম না। তাই আমার মেজাজ সব সময় খিঁচড়ে থাকতো।”

“আমার মনে ছিল কুসংস্কারের বাসা। যেমন, চেক প্রজাতন্ত্রের বিরুদ্ধে খেলার আগে আমি দেশে ফিরে যাবার জন্য ব্যাগ গুছিয়েছিলাম। আর এর পর থেকে প্রতিটি খেলার আগেই আমি এ কাজ করতে শুরু করলাম। কিছুতেই নিজেকে থামাতে পারছিলাম না। এটা চলেছিল টুর্নামেন্ট শেষ হওয়া পর্যন্ত।
সব সময় ডান পা

ব্রাজিলের উজ্জ্বলতম ফুটবল তারকাদের একজন রোনাল্ডো। তিনি বিশ্বকাপ জিতেছেন, গোল্ডেন বল আর বর্ষসেরা খেলোয়াড় সহ বহু পুরস্কার পেয়েছেন।
Ronaldo

তার সংস্কার ছিল: মাঠে ঢোকার সময় প্রথম ডান পা ফেলা।

অন্য আরো কিছু ফুটবলার এটা মেনে চলেন।

তাদের একজন ব্রাজিলিয়ান আরেক তারকা রবার্টো কার্লোস।
Ronaldo

এমনকি আরেক রোনাল্ডো – পর্তুগাল ও রেয়াল মাদ্রিদের ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডো – তিনিও এক সাক্ষাতকারে স্বীকার করেছেন যে তিনিও এটা মেনে চলেন।

“অন্য অনেক খেলোয়াড়ের মতো আমারও কিছু কুসংস্কার আছে” – ২০১৬ সালে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “এর একটা হলো প্রথম ডান পা ফেলে মাঠে ঢোকা।”

“আমি আরো কিছু রুটিন অনুসরণ করি। বিশেষ করে আগের ম্যাচে যেসব মানায় ভালো ফল হয়েছে – সেগুলো মেনে চলার চেষ্টা করি।”
জাদুর ব্যান্ডেজ

চিলির ফুটবলার হুয়ান কার্লোস পেরাল্টা বলেছিলেন, তার সংস্কার হচ্ছে ডান পায়ে ব্যান্ডেজ বেঁধে রাখা। এটা এই জন্য নয় যে আমি আহত হয়েছি। কিন্তু প্রথম যেদিন আমি পায়ে ব্যান্ডেজ বেঁধে খেলতে নেমেছিলাম – সেদিন জিতেছিলাম। তার পর থেকে আমি এটা করে আসছি।

তার দল কোলো কোলো-র আরেক খেলোয়াড় ইভান জামোরানোও ব্যান্ডেজ বেঁধে খেলতে নামতেন – তবে পায়ে নয়, ডান হাতে কব্জিতে।
Iván Zamorano

জামোরানো হাতে চোট পাবার কারণে একদিন ব্যান্ডেজ বেঁধে মাঠে নেমেছিলেন, এবং সেদিন তিনি তিনটি গোল করেছিলেন। তার পর থেকেই এটা তার স্থায়ী বাতিকে পরিণত হয়।
মাঠে চিহ্ন দিয়ে রাখা

দক্ষিণ আফ্রিকায় ২০১০ সালের বিশ্বকাপ জেতা স্পেন এবং রেয়াল মাদ্রিদের গোলকিপার ইকার কাসিয়াসও নানা রকমের কুসংস্কার মেনে চলেন।

তার নানা রকমের বাতিক এতই বেশি যে মারকা নামে একটি স্প্যানিশ ওয়েবসাইট একবার মন্তব্য করে, কাসিয়াস হচ্ছেন পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি কুসংস্কারাচ্ছন্ন খেলোয়াড়দের অন্যতম।
Iker Casillas

“তিনি তার জার্সির হাত কেটে বাদ দেন, মোজা উল্টো করে পরেন, আর প্রতি খেলার আগে তিনি গোল লাইন পর্যন্ত তার এলাকায় বাঁ পা দিয়ে দাগ টেনে চিহ্নিত করে রাখেন।”

“তা ছাড়া তার দল যখনই গোল করে, তখন তিনি গোল মুখে ফিরে এসে ছোট একটা লাফ দেন এবং বাঁ হাত দিয়ে গোল পোস্ট স্পর্শ করেন।
‘মুড আনার জন্য’ প্রতিবার একই গান শোনা

নিজের মাঠে ফ্রান্স বিশ্বকাপ জিতেছিল ১৯৯৮ সালে। ওই দলে ছিলেন লরাঁ ব্লাঁ, জিনেদিন জিদান, ফ্যাবিয়ান বার্থেজ-এর মতো তারকারা।

এই দলেরও সৌভাগ্যের পেছনে কিছু সংস্কারের ভুমিকা ছিল, এমনই মনে করতেন তাদের অনেকে।

তার একটা হলো – চেঞ্জিং রুমে এই দলের খেলোয়াড়রা একটি মাত্র গান বাজাতেন। সেটা হলো গ্লোরিয়া গেনরের ‘আই উইল সারভাইভ’।
The French national team in 1998

গানটা ১৯৭৮ সালের একটা হিট গান। কিন্তু ২০ বছর পর এটা বাজাতে বাধ্য করেছিলেন ডিফেন্ডার ভিনসেন্ট কানডেলা।

পরেই গানটি বিশ্বকাপজয়ী ফেঞ্চ দলের প্রতীকী গানে পরিণত হয়।

শুধু ফরাসী ড্রেসিংরুমে নয়, টিম বাসে এবং ট্রেনিংএর সময়ও এটা বাজানো হতো।
নীল অন্তর্বাস

এটা একটা খুবই সাধারণ সংস্কার। কলম্বিয়ার গোলকিপার ছিলেন রেনে হিগুইতা। তিনি প্রত্যেক খেলায় পরতেন নীল আন্ডারওয়্যার।

এর কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি ফিফার ওয়েবসাইটে একবার বলেছিলেন, ১৯৮০র দশকের শেষ দিকে তাদের দল এটলেটিকো নাসিওনাল যাতে মিলোনারিওসের বিরুদ্ধে জিততে পারে – সে জন্য আমরা এক মহিলা গণকের কাছে গিয়েছিলাম – যিনি ভাগ্যে কি আছে বলতে পারেন।

তিনি বললেন, “আমাদের ওপর অভিশাপ লেগেছে। তিনি একটি বেল্ট এবং সব খেলোয়াড়ের পরার জন্য নীল আন্ডারওয়্যার পাঠালেন।”

“এর পরই সব ঠিক হয়ে গেল । আমরা কাপও জিতেছিলাম ।”
René Higuita
টয়লেট বাঁ দিকে

মারিও গোমেজ ছিলেন দারুণ গোলস্কোরার। তিনি স্টুটগার্ট, বায়ার্ন মিউনিখ, ফিওরেন্টিনা, আর বেসিকটাসের হয়ে খেলেছেন। চ্যাম্পিয়ন্স লিগও জিতেছেন।

তাকে বলা হয় জার্মান ফুটবলের ‘সুপার মারিও’।

তবে তার অভ্যাস যে শুধু গোল করার ক্ষেত্রেই তা নয়। ফিফার ওয়েবসাইট অনুযায়ী, খেলোয়াড়দের চেঞ্জিং রুমে তিনি সবসময়ই প্রস্রাব করার জন্য বাঁ দিকের একেবারে শেষ ইউরিনালটি ব্যবহার করেন।
Mario Gomez
পেনাল্টির আগে মাঠেই প্রস্রাব করতেন গয়কোচিয়া

সাবেক আর্জেন্টাইন গোলরক্ষক সেরজিও গয়কোচিয়া হলেন আরেক ফুটবল তারকা – যার টয়লেট ‘বাতিক’ রয়েছে।

ইতালিতে ১৯৯০ বিশ্বকাপে যুগোশ্লাভিয়ার বিরুদ্ধে ম্যাচে পেনাল্টির আগে তার বাথরুমে যাবার দরকার হয়েছিল, কারণ তিনি প্রচুর পানীয় খেয়েছিলেন।

গয়কোচিয়া বলছিলেন, কিন্তু তার টয়লেটে যাবার সময় সময় ছিল না। তাই তিনি মাঠের মধ্যেই প্রস্রাব করেছিলেন।

এর পর আর্জেন্টিনা পেনাল্টিতে ম্যাচটি জিতে গেল। এর পর সেমিফাইনালে আর্জেন্টিনার খেলা ছিল ইতালির বিরুদ্ধে, এবং সে খেলাও পেনাণ্টিতে চলে গেল। তখন গয়কোচিয়া করলেন ঠিক সেটাই – যা তিনি আগের ম্যাচে করেছিলেন।

তিনি আবার মাঠের মধ্যে প্রস্রাব করলেন।

পেনাল্টিতে আবার আর্জেন্টিনাই জিতেছিল। গয়কোচিয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, তিনি এমনভাবে কাজটা করতেন যে কেউ তা বুঝতে পারতো না।
টেপ প্যাঁচানো মোজা পরেন টেরি

ইংলিশ ডিফেন্ডার জন টেরি ইংল্যান্ডের হয়ে কোন ট্রফি জেতেন নি। তবে তার ক্লাব চেলসির হয়ে তিনি প্রিমিয়ার লিগ, এফএ কাপ, চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, ইউরোপা লিগ – সবই জিতেছেন।
John Terry

চেলসিতে খেলার সময় একবার টেরি বলেছিলেন, তিনি খুবই কুসংস্কার প্রবণ।

“আমি সব সময়ই টিম বাসে নির্দিষ্ট একটি সিটে বসি। আমার প্রতিটি মোজার চারদিকে তিনটি পাক দিয়ে টেপ লাগাই। আমি স্টেডিয়ামে যাবার পথে একটি নির্দিষ্ট সিডিই বাজিয়ে গান শোনেন। খেলার আগে স্ট্যামফোর্ড ব্রিজে এসে একই জায়গায় তার গাড়ি পার্ক করেন।

এর পর আরো আছে।

টেরিও খেলার দিন চেলসির চেঞ্জিং রুমে একই ইউরিনাল ব্যবহার করতেন। তবে সেটা মারিও গোমেজের মতো বাঁ দিকেরটা নয়, ডান দিকে একেবার শেষ মাথার ইউরিনাল।
সবার শেষে বেরুতেন ববি মুর

ইংলিশ ফুটবল কিংবদন্তী ববি মুর চাইতেন সবার শেষে চেঞ্জিং রুম থেকে বের হতে।

কারণ তিনি তার শর্টস পরতেন সবার শেষে – যাতে ভাঁজ পড়ে না যায়।

আরেক ইংলিশ খেলোয়াড় পল ইন্স-ও ড্রেসিংরুম থেকে বেরুতেন সবার শেষে। তিনি বেরিয়েই মাঠের দিকে দৌড় দিতেন এবং তার মধ্যেই তিনি গায়ে জার্সিটি পরতেন।
Bobby Moore

আইভরি কোস্টের কোলো তুরেও সবার শেষে মাঠে নামতেন ।

একবার ২০০৯ সালে আর্সেনালের হয়ে লিগে খেলার সময় তাকে উইলিয়াম গালাসের বদলি হিসেবে নামানো হয়েছিল।

কিন্তু তিনি মাঠে ঢোকেন দু’মিনিট পর। তার ফলে দ্বিতীয়ার্ধের প্রথম দুই মিনিট আর্সেনালকে ৯ জন নিয়ে খেলতে হয়েছিল।
Kolo Touré

তার পর তিনি যখন মাঠে নামলেন তুরেকে সতর্ক করে দেয়া হলো অনুমতি ছাড়া মাঠে ঢোকার জন্য।
শটের ‘অপচয়’ করতেন না লিনেকার

ইংল্যান্ডের হয়ে বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি গোল করেছেন স্ট্রাইকার গ্যারি লিনেকার।

তিনি ওয়ার্ম-আপের সময় গোলে শট নিতেন না। কারণ তার ধারণা ছিল, এতে আসল খেলার সময় তার গোল করার সম্ভাবনা কমে যাবে।
বিশ্বকাপ ফুটবল ২০১৮

একই বাতিক ছিল মেক্সিকো আর রেয়াল মাদ্রিদের কিংবদন্তী হুগো সানচেজের।

তিনিও ওয়ার্ম-আপে গোলে শট নিতে চাইতেন না।

কারণ তিনি মনে করতেন, এতে শটের ‘অপচয়’ হবে। বিবিসি বাংলা

Next Post

ভারত থেকে বৈধ পথে গরু আসা শুরু করেছে।

রবি জুন ১৭ , ২০১৮
নিজস্ব প্রতিবেদক, চাঁপাইনবাববগঞ্জ: চাঁপাইনবাবগঞ্জের ফতেপুর সীমান্ত দিয়ে ভারতীয় থেকে বৈধ পথে গরু-মহিষ আসা শুরু হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদিত বিটে সরকারি বিধি-বিধান মোতাবেক গরু-মহিষ আসছে। বিটের মালিক কেনাল আলী জানান, চলতি বছরের ২৫ জানুয়ারী স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েরর মন্ত্রীর একান্ত সচিব ডা. হারুন অর রশিদ বিশ্বাসের স্বাক্ষরিত ০.২৮.১২৮.০০০০.১৬৭-২৩ পত্রে জানা যায়, সুপ্রীম কোর্টের […]

Chief Editor

Johny Watshon

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat. Duis aute irure dolor in reprehenderit in voluptate velit esse cillum dolore eu fugiat nulla pariatur

Quick Links