কাউন্সিলর প্রার্থীকে নানাভাবে প্রলোভন ও হুমিক দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ স্থানীয় বিএনপির।

ava desk: বাইচ্চা থাকলে অনেকবার নির্বাচন করতে পারবা। এইবার নির্বাচন করতেই হবে এমন কোনো কথা আছে। যা কইছি তা শুনো’- এভাবেই বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী মো. ফরিদ উদ্দিন হাওলাদারকে নির্বাচন থেকে সরে যেতে হুমকি দেয়া হয়। অব্যাহত হুমকির মুখে সোমবার রাতে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের বর্তমান এ কাউন্সিলর। মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত তিনি নির্বাচনের প্রচারেও নামেননি। তবে দুপুরে এলাকাবাসীর দাবির মুখে সীমিত আকারে প্রচারে নামেন এ প্রার্থী। এ প্রসঙ্গে মো. ফরিদ উদ্দিন হাওলাদার বলেন, ‘অজ্ঞাত লোকের বারবারের চাপে রাগ হইয়া কইছি টাকা লাগব না, বইয়া (নির্বাচনে বসে পড়ব) যামু। এহন জনগণের চাপে আবার নামছি।’ শুধু ফরিদ উদ্দিন হাওলাদার নন, দলটির আরও কয়েকজন কাউন্সিলর প্রার্থীকে নানাভাবে প্রলোভন ও হুমিক দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ স্থানীয় বিএনপির। ভোটারদের মধ্যে নেতিবাচক প্রভাব ও কর্মীরা ভয় পেতে পারে- এমন আশঙ্কায় এখনই বিষয়টি সামনে আনতে নারাজ দলটি। তাদের আশঙ্কা, বর্তমানে কোনো বাধা ছাড়াই বিএনপি প্রচার চালাতে পারলেও ভোটগ্রহণের আগমুহূর্তে এমন পরিবেশ থাকবে না। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থীরা দলীয় সিদ্ধান্তেই ‘ঠেলাগাড়ী’ ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর প্রার্থীরা ‘বই’ প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার বিষয়টিকেও দুরভসন্ধিমূলক বলে মনে করছে দলটি। এ ছাড়া বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দলও স্থানীয় নেতাকর্মীদের ভাবিয়ে তুলছে।
তবে ভিন্ন কথা বলছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতারা। তাদের মতে, বিএনপির প্রচারে তারা বাধা দিচ্ছেন না, চাপও দিচ্ছেন না। ‘উন্নয়ন ইস্যু’ সামনে রেখে প্রচার চালিয়ে ভোটারদের মন জয় করছেন। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ নির্বাচনে নবীন হলেও গত কয়েক বছর ধরেই বিভিন্ন ধরনের সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত রয়েছেন। এর মধ্য দিয়ে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই মাঠ গুছিয়ে রেখেছেন তিনি। এ ছাড়া তরুণ ভোটারদের মধ্যেও জনপ্রিয়তা রয়েছে তার। সে ক্ষেত্রে অনেকটা আচমকা প্রচারে নেমেছেন বিএনপির মেয়র প্রার্থী মজিবর রহমান সরোয়ার। তবে চারবার এমপি, জাতীয় সংসদের হুইপ ও বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মজিবর রহমান সরোয়ারকে টপকে জয় পাওয়াটা অত্যন্ত কঠিন বলেও মনে করছেন আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতারা। এ বিষয়ে বিএনপির মেয়র প্রার্থী ও বরিশাল মহানগর সভাপতি মজিবর রহমান সরোয়ার যুগান্তরকে বলেন, বিএনপি সমর্থিত অনেক কাউন্সিলর প্রার্থীকে নির্বাচনী মাঠ থেকে সরে দাঁড়াতে বিভিন্ন মহল হুমকি-ধামকি দিচ্ছে। বিভিন্ন স্থানে নির্বাচনী প্রচারে বাধা দেয়া হচ্ছে। এভাবে কাউন্সিলর প্রার্থীদের হুমকি দিয়ে মেয়র পদে ভোটের তারতম্য সৃষ্টি করতে পারবে না। তিনি বলেন, খুলনা ও গাজীপুরে আওয়ামী লীগ যে পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছিল, বরিশালে তার চেয়ে কঠিন পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চাচ্ছে।
বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থীদের নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর অভিযোগ প্রসঙ্গে বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম আব্বাছ চৌধুরী দুলাল যুগান্তরকে বলেন, বিএনপি বরাবরের মতোই অসত্য অভিযোগ দিয়ে নির্বাচনী পরিবেশ ঘোলাটে করার চেষ্টা করছে।
তারা নির্বাচনকে বিতর্কিত করার মাধ্যমে রাজনৈতিক ফায়দা নিতে চায়। আমরা সেই সুযোগ দেব না। দলীয় কাউন্সিলর প্রার্থীকে একই প্রতীক দেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, দলীয় শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য ও একতার প্রতীক হিসেবে সাধারণ কাউন্সিলরদের ঠেলাগাড়ী ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর প্রার্থীদের বই প্রতীক নেয়ার জন্য বলা হয়েছে। দু’একটি বাদে সব জায়গায় এ প্রতীকে লড়ছেন আমাদের প্রার্থীরা। ভোটারদের সুবিধার্থে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এখানে অন্য কোনো উদ্দেশ্য নেই।
সরেজমিন দেখা গেছে, মঙ্গলবার নগরীর বিভিন্ন স্থানে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীর পক্ষে ব্যাপক প্রচারণা চালানো হয়। নগরীর নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনালের সামনে দুই পক্ষ একই সড়কে মিছিলও করেছে। সেখানে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
বেলা ১টার দিকে বিএনপির মেয়র প্রার্থী মজিবর রহমান সরোয়ার নথুল্লাবাদ প্রচারে গেলে সেখানেও নেতাকর্মীদের ঢল নামে। তারা ধানের শীষের পক্ষে মিছিল করেন। যদিও প্রচারে বাধা দেয়ার অভিযোগ করে আসছে বিএনপি। অপর দিকে সিঅ্যান্ডবি সড়কে প্রচার শুরু করেন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ। তার প্রচারেও নেতাকর্মীদের ঢল নামে। নৌকার পক্ষে স্লোগান দেয়া হয়।
বিরোধী প্রার্থীদের অভিযোগ : ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসার সঙ্গে কেউ কেউ প্রচ্ছন্ন আবার কেউ কেউ সরাসরি চাপের মুখে পড়েছেন। এদেরই একজন ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী মো. ফরিদ উদ্দিন হাওলাদার। সোমবার রাতে তিনি চাপের মুখে নির্বাচন থেকে সরে গেছেন এমন খবর নগরীতে ছড়িয়ে পড়ে। এ নিয়ে দলটির অন্য কাউন্সিলর প্রার্থীর মধ্যেও আতঙ্ক দেখা দেয়।
এ খবরের সত্যতা জানতে মঙ্গলবার দুপুরে নগরীর হরিনাফুলিয়া গ্রামে মো. ফরিদ উদ্দিন হাওলাদারের বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে ঘরোয়া বৈঠক করছেন তিনি।
পরে তিনি যুগান্তরকে বলেন, প্রার্থী হওয়ার পর থেকেই একটি মহল তাকে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর জন্য চাপ দিয়ে আসছেন। তারা কখনও সরাসরি, আবার কখনও ফোনে হুমকি দিয়ে আসছেন।
নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে কখনও ১৫ লাখ আবার কখনও ২০ লাখ টাকা দেয়ার প্রস্তাব করেছেন। সর্বশেষ সোমবার রাতে ফোন করে চাপ সৃষ্টি করে সমঝোতা করতে বলে। তখন রাগ হয়ে বলেছি, টাকা লাগবে না। এমনিতেই সরে যাব। তবে কারা হুমকি দিয়েছে তাদের নাম বলতে রাজি হননি। ফরিদ উদ্দিন বলেন, ‘ফোনে যহন র‌্যাগ হইয়া কইছি, তখন কর্মীরা বিষয়টি হুনছে। তখনই নগরীতে রিউমার ছড়ানো হইছে। চাপের মুখে থাকায় এহনও বাইর হইনি। তবে এলাকাবাসী কওনে এহন (দুপুর সাড়ে ১২টা) বাইর হইতাছি।’
এ বিষয়ে আরও খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে তিনজন কাউন্সিলর প্রার্থী রয়েছেন। এর মধ্যে দু’জন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। বাকি একজন ফরিদ উদ্দিন বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর।
২৬ নম্বও ওয়ার্ডের হরিনাফুলিয়া গ্রামের বাসিন্দা আশরাফ হাওলাদার বলেন, ‘সোমবার রাইতে হুনছিলাম ফরিদ বইয়া পড়ছে। এহন হুনছি হে নির্বাচন করব। এইডা নিয়া ঘাডাঘাডি করছি না।’
এর আগে সোমবার নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদারের সামনে নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন অভিযোগ ও চাপের কথা তুলে ধরেন কয়েকজন মেয়র প্রার্থী। এ ছাড়াও কাউন্সিলর প্রার্থীদের কেউ কেউ তাদের আশঙ্কার কথা জানান। ওই অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (কাস্তে প্রতীক) মেয়র প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ বলেন, ভোটারদের মধ্যে নির্বাচন হওয়া নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। ভোটের মাঠে কালো টাকার ছড়াছড়ি।
বাসদের (মই প্রতীক) মেয়র প্রার্থী ডা. মনীষা চক্রবর্তী বলেন, টাকা ও পেশিশক্তি ব্যবহার হচ্ছে এই নির্বাচনে। ভোটারদের বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হচ্ছে। এমনকি বস্তিবাসীদের বলা হচ্ছে উচ্ছেদ করে দেয়া হবে। ওই অনুষ্ঠানে ৮ নম্বর ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর প্রার্থী সুরঞ্জিত দত্ত লিটু বলেন, ভোটারদের ভয় দেখানো হচ্ছে। হিন্দু ধর্মাবলম্বী এক ব্যবসায়ীকে হুমকি দেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে থানাসহ বিভিন্ন স্থানে অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে। ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী ও বর্তমান কাউন্সিলর অ্যাডভোকেট সালাউদ্দিন মাসুম বলেন, প্রতিপক্ষের চাপে আমি ক্যাম্প করতে পারছি না।
বিএনপির স্থানীয় নেতাদের অভিযোগ, চাপের মুখে তাদের কোনো কোনো কাউন্সিলর প্রার্থীকে সরে যেতে হয়েছে। বিষয়টি নিয়েও তারা মুখ খুলছেন না। এ বিষয়টি রহস্যজনক বলছেন মজিবর রহমান সরোয়ার। তিনি বলেন, আমাদের প্রার্থীর বাসায় গিয়ে আওয়ামী লীগ নেতারা প্রত্যাহারপত্রে স্বাক্ষর করিয়েছেন। তারাই নির্বাচন অফিসে গিয়ে তা জমা দিয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ৩০টি ওয়ার্ডের মধ্যে সাধারণ ৩টিতে (ওয়ার্ড নম্বর ১৫, ১৬ ও ১৯) ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগ প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় পেয়েছেন। এর মধ্যে ১৫ ও ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে তিনজন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ছিল।
প্রতিটি ওয়ার্ডে দু’জন প্রার্থী প্রত্যাহার করায় একক প্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগ জয় পেয়েছে। এ দুটি ওয়ার্ডে বিএনপি নেতারা কাউন্সিলর প্রার্থী হয়েছিলেন। এ ছাড়া সংরক্ষিত একটি ওয়ার্ডে বিএনপির নারী কাউন্সিলর প্রার্থী বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছেন। এই প্রার্থী স্থানীয়ভাবে একটি প্রভাবশালী পরিবারের সদস্য। ক্ষমতাসীনদের সঙ্গেও রয়েছে এ পরিবারের সুসম্পর্ক। আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, নগরীর ৩০টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২৮টিতে দলীয় সমর্থিত প্রার্থী রয়েছেন। দুটি ওয়ার্ড ২০ ও ২৩ নম্বরে একাধিক প্রার্থী থাকায় তা উন্মুক্ত রাখা হয়েছে। এখানে আওয়ামী লীগ কাউকে সমর্থন দেয়নি।
বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতার তিনটি বাদে বাকি ২৫টির মধ্যে ২১টিতেই আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীরা ঠেলাগাড়ি প্রতীকে নির্বাচন করছেন। যে চারজন পাননি, তাদের মধ্যে দু’জন ঠেলাগাড়ি চাইলেও লটারিতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছেন। একইভাবে সংরক্ষিত ১০টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৪ নম্বর ওয়ার্ডে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছেন বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী। বাকি ৯টির মধ্যে আটটিতেই আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীরা বই প্রতীক পেয়েছেন।
বিএনপির আশঙ্কা, ভোটে কারচুপির জন্যই দলীয় সমর্থিত কাউন্সিলরদের একই প্রতীক নিয়েছে ক্ষমতাসীন দলের কাউন্সিলর প্রার্থীরা। দলীয় সিদ্ধান্তে এমন প্রতীক নেয়ায় তাদের মধ্যে শঙ্কাও বাড়ছে। তবে ওই আশঙ্কা নাকচ করে দিয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতারা।
এ প্রসঙ্গে বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি আফজালুল করিম যুগান্তরকে বলেন, বরিশাল সিটি নির্বাচনের পরিবেশ ভালো ও সুন্দর রয়েছে। বিএনপির নেতাকর্মীরা কোনো বাধা ছাড়াই প্রচার চালাচ্ছেন। আমাদের প্রার্থীও প্রচার চালাচ্ছেন। বরিশালে উৎসবমুখর পরিবেশ রয়েছে। তবুও বিএনপি নির্বাচনকে বিতর্কিত করতেই নানা আশঙ্কার কথা বলছে।

jugantor

Next Post

এটা আল্লাহর ওপরও নির্ভর করে; তিনি যদি চান।

বুধ জুলাই ১৮ , ২০১৮
আভা ডেস্ক :প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘সামনে নির্বাচন, জনগণ যদি ভোট দেয় তাহলে আবার ক্ষমতায় আসব- না হলে আসব না। এটা আল্লাহর ওপরও নির্ভর করে; তিনি যদি চান। তবে তার আগেই আমি আমার কাজগুলোকে সুরক্ষিত করতে চাই।’ কোটা সংস্কার প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা আদালতের নির্দেশ অমান্য করতে পারি না […]

এই রকম আরও খবর

Chief Editor

Johny Watshon

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat. Duis aute irure dolor in reprehenderit in voluptate velit esse cillum dolore eu fugiat nulla pariatur

Quick Links