করোনা উহানের ল্যাব থেকেই ছড়িয়েছে, প্রমাণ আছে: ট্রাম্প

রাপ্র ডেস্ক: করোনা ভাইরাস নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের চীনের বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই। ভাইরাস আসার পর থেকেই তিনি ধারাবাহিকভাবে দেশটির বিরুদ্ধে অভিযোগ করে আসছেন। মাঝে মধ্যে ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলছেন। এবার তিনি বলেই বসলেন, চীনের উহানের ল্যাব থেকেই কোভিড-১৯ ছড়িয়েছে। এবং এ ব্যাপারে তার কাছে শক্ত প্রমাণ আছে। বৃহস্পতিবার (৩০ এপ্রিল) হোয়াইট হাউসের প্রেস ব্রিফিংয়ে এ কথা বলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

চীনের ব্যাপারে অভিযোগ বিষয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে প্রশ্ন করা হয় যে করোনা ভাইরাস চীনের উহানের ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজি থেকে ছড়িয়েছে বলে তার যে দাবি- সে ব্যাপারে তার কাছে কোনো প্রমাণ আছে কি না। এর জবাবে তিনি বলেন, হ্যাঁ, আছে।

যখন জোর দিয়ে তাকে বলা হয়, আপনার কাছে এমন কি প্রমাণ আছে যার ভিত্তিতে আপনি এ ধরনের দাবি করছেন, তখন ট্রাম্প বলেন, ‘আমি তোমাদের কাছে তা বলতে পারব না।’

কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই দাবির মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের একটি গোয়েন্দা সংস্থা জানিয়েছে, করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) মানবসৃষ্ট বা জিনগতভাবে পরিবর্তিত হওয়ার এখনো কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি। বৃহস্পতিবার (৩০ এপ্রিল) যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্স পরিচালকের কার্যালয়ের এক বিবৃতিতে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। তবে সংস্থাটি বলেছে, করোনা মহামারির উৎস আক্রান্ত পশু, নাকি চীনা ল্যাবে দুর্ঘটনা; তা এখনও খতিয়ে দেখছে তারা। খবর আল জাজিরা।

ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্স এই বিবৃতি এমন সময় প্রদান করলো, যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তার সমর্থকরা দাবি করছেন, চীনের একটি ল্যাব থেকেই করোনা ভাইরাসের বিস্তার হয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র এই দাবির পক্ষে এখনও কোনো প্রমাণ হাজির করতে পারেনি।

ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্সের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বিস্তৃত বৈজ্ঞানিক ধারণার সঙ্গে গোয়েন্দা সংস্থা একমত যে, কোভিড-১৯ ভাইরাস মানবসৃষ্ট বা জিনগতভাবে পরিবর্তিত নয়। আক্রান্ত পশু বা উহানের ল্যাবে দুর্ঘটনায় ভাইরাসটির বিস্তার সম্পর্কে যে তথ্য সামনে আসছে তা কঠোরভাবে খতিয়ে দেখবে গোয়েন্দা সংস্থা।

এই বিবৃতি প্রকাশের দিনই মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউ ইয়র্ক টাইমস’র এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তারা গোয়েন্দা বিশ্লেষকদের চাপ দিচ্ছেন করোনার বিস্তারে চীনকে জড়িত করার জন্য, যাতে নভেম্বরে অনুষ্ঠিতব্য প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারণায় মহামারির জন্য চীনকে দায়ী করা যায়।

গোয়েন্দা বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন, এই চাপের ফলে সংস্থাগুলো রাজনৈতিক কারণে তাদের মূল্যায়ন বিকৃত করতে পারেন। যার ফলে ভাইরাসটি সঠিক মূল্যায়ণ ও তাৎপর্য হারাবে।

ব্রিফিংয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা সঠিকভাবে জানার চেষ্টা করছি, কোথা থেকে, কার মাধ্যমে এবং কীভাবে ভাইরাসটি ছড়িয়েছে’। খুব দ্রুতই বিষয়টি জানা যাবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

তবে ফিন্যান্সিয়াল টাইমস বলছে, একই ব্রিফিংয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ভাইরাসটির উৎপত্তি কোথায়, তার প্রশাসন এখনো তদন্ত করছে। এ কথা তার আগের দাবিকে গুরুত্বহীন করে দেয়।

এর আগের দিন বুধবার ডোনাল্ড ট্রাম্প অভিযোগ করেন, আগামী নভেম্বর মাসে দেশটিতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন, সেই নির্বাচনে তাকে হারাতেই চীন ইচ্ছাকৃতভাবে এই ভাইরাস ছড়িয়েছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট মনে করছেন, চীনের সঙ্গে তিনি যে বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু করেছেন, এতে চীনের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আর সে কারণেই বেইজিং চায়, তার প্রতিদ্বন্দ্বী সাবেক ভাইস-প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে ক্ষমতায় বসাতে।

তার আগেও চীনের বিরুদ্ধে কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণ না করতে পারার অভিযোগ আনেন ট্রাম্প। তার ধারণা, ভাইরাসটি সম্পর্কে চীন বিশ্বকে যথাযথ তথ্য দেয়নি।

আবার চীনকে জড়িয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিরুদ্ধেও অভিযোগ আনেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। বলেন, তার দেশ বেশি অর্থ দিলেও সংস্থাটির চীনমুখিতা দেখা যাচ্ছে এবং কোভিড-১৯ মোকাবেলায় সংস্থাটি তাদের মৌলিক দায়িত্ব পালন করতে পারছে না। এ অভিযোগ তুলে সংস্থাটিতে অর্থায়ন বন্ধের নির্দেশও দেন তিনি।

তারও দুই দিন আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, করোনা ভাইরাস ছড়ানোর ক্ষেত্রে চীনের ভূমিকা রয়েছে। তাই সব দেশের উচিত, চীনের কাছে ক্ষতিপূরণ চাওয়া।

ট্রাম্প যখন এসব কথা বলছেন, তখন মহামারি আকার ধারণ করা ভাইরাসটিতে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত ও মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে যুক্তরাষ্ট্রেই। দেশটিতে এখন পর্যন্ত করোনায় মারা গেছে ৬৩ হাজার ৮৭১ জন, আক্রান্ত হয়েছে ১০ লাখ ৯৫ হাজার ৩০৪ জন। চিকিৎসা নিয়ে করোনা মুক্ত হয়েছে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৭৩৭ জন।

গত বছরের ডিসেম্বরের শেষ নাগাদ চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে নভেল করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর থেকে দেশটির বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ করে যাচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বা তার প্রশাসন কিংবা দেশটির গোয়েন্দারা। প্রথমদিকে তো বিষয়টি নিয়ে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা হয়েছে। তার পর আস্তে আস্তে যখন ভাইরাসটি যুক্তরাষ্ট্রে তাণ্ডব শুরু করতে থাকে, তখন সমালোচনা বা অভিযোগের পারদ বাড়তে থাকে।

অন্যদিকে, মার্কিন গোয়েন্দারা এর আগে অভিযোগ করেন, চীনের উহানের একটি গবেষণাগার ছড়িয়েছে করোনা ভাইরাস। সেখানে তারা জৈব অস্ত্র নিয়ে গবেষণা করছে। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রে চীনের বিরুদ্ধে মামলা করার ঘটনাও ঘটেছে। সেখানে ক্ষতিপূরণও দাবি করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, চীনের উহান থেকে গত ডিসেম্বরে করোনা ভাইরাসের (কোভিড-১৯) প্রাদুর্ভাব। এ ভাইরাসে গোটা বিশ্বই বিপর্যস্ত। ভাইরাস মোকাবিলায় দেশে দেশে চলছে লকডাউন, জরুরি অবস্থাসহ নানা পদক্ষেপ। এখন পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে আক্রান্তের সংখ্যা ৩৩ লাখ আর মারা গেছে ২ লাখেরও বেশি মানুষ।

ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত বিশ্বে করোনা শনাক্ত হয়েছে ৩৩ লাখ ১০ হাজার ৩৯ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়েছে ৮৬ হাজার ৩৭ জন। এর মধ্যে সুস্থ হয়েছে ১০ লাখ ৪২ হাজার ৮৭৪ জন। বিশ্বজুড়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৩৪ হাজার ১৪৩ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় ৫ হাজার ৮০১ জনের মৃত্যু হয়েছে।

বর্তমানে বিশ্বে ২০ লাখ ৩১ হাজার ৫১৭ জন শনাক্ত রোগী রয়েছে। তাদের মধ্যে ১৯ লাখ ৮০ হাজার ৫৭৩ জন চিকিৎসাধীন, যাদের অবস্থা স্থিতিশীল। আর ৫০ হাজার ৯৪৪ জনের অবস্থা গুরুতর, যাদের অধিকাংশই আইসিউতে রয়েছে।

ভাইরাসটি চীন থেকে ছড়ালেও বর্তমানে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা যুক্তরাষ্ট্রে। দেশটিতে মোট আক্রান্ত ১০ লাখ ৯৫ হাজার ২১০, মারা গেছে ৬৩ হাজার ৮৬১ জন। এখন পর্যন্ত করোনায় সর্বোচ্চ মৃত্যু এবং আক্রান্ত যুক্তরাষ্ট্রে। পুরো বিশ্বে মারা যাওয়া মানুষের এক-চতুর্থাংশ এবং আক্রান্তের এক-তৃতীয়াংশ যুক্তরাষ্ট্রে।

এ ছাড়া, যেসব দেশে বেশি আক্রান্ত আক্রন্ত ও মৃত্যু হয়েছে, সেগুলো হলো- স্পেনে আক্রান্ত ২ লাখ ৩৯ হাজার ৬৩৯, মারা গেছে ২৪ হাজার ৫৪৩ জন। ইতালিতে আক্রান্ত ২ লাখ ৫ হাজার ৪৬৩, মারা গেছে ২৭ হাজার ৯৬৭ জন। ইংল্যান্ডে আক্রান্ত ১ লাখ ৭১ হাজার ২৫৩, মারা গেছে ২৬ হাজার ৭৭১ জন। ফ্রান্সে আক্রান্ত ১ লাখ ৬৭ হাজার ১৭৮, মারা গেছে ২৪ হাজার ৩৭৬ জন। জার্মানিতে আক্রান্ত ১ লাখ ৬৩ হাজার ৯, মারা গেছে ৬ হাজার ৬২৩ জন। তুরস্কে আক্রান্ত ১ লাখ ২০ হাজার ২০৪, মারা গেছে ৩ হাজার ১৭৪ জন। রাশিয়ায় আক্রান্ত ১ লাখ ৬ হাজার ৪৯৮, মারা গেছে ১ হাজার ৭৩ জন। ইরানে আক্রান্ত ৯৪ হাজার ৬৪০, মারা গেছে ৬ হাজার ২৮ জন। ব্রাজিলে আক্রান্ত ৮৭ হাজার ১৮৭, মারা গেছে ৬ হাজার ৬ জন।

এদিকে, করোনার উৎপত্তিস্থল চীনে আক্রান্ত ৮২ হাজার ৮৭৪, মারা গেছে ৪ হাজার ৬৩৩ জন। কানাডাতে আক্রান্ত ৫৩ হাজার ২৩৬, মারা গেছে ৩ হাজার ১৮৪ জন। বেলজিয়ামে আক্রান্ত ৪৮ হাজার ৫১৯, মারা গেছে ৭ হাজার ৫৯৪ জন। নেদারল্যান্ডসে আক্রান্ত ৩৯ হাজার ৩১৬, মারা গেছে ৪ হাজার ৭৯৫ জন। পেরুতে আক্রান্ত ৩৬ হাজার ৯৭৬, মারা গেছে ১ হাজার ৫১ জন। সুইজারল্যান্ডে আক্রান্ত ২৯ হাজার ৫৮৬, মারা গেছে ১ হাজার ৭৩৭ জন। সুইডেনে আক্রান্ত ২১ হাজার ৯২, মারা গেছে ২ হাজার ৫৮৬ জন। আয়ারল্যান্ডে আক্রান্ত ২০ হাজার ৬১২, মারা গেছে ১ হাজার ২৩২ জন। মেক্সিকোতে আক্রান্ত ১৯ হাজার ২২৪, মারা গেছে ১ হাজার ৮৫৯ জন।

অন্যদিকে, দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতে আক্রান্ত ৩৫ হাজার ৪৩, মারা গেছে ১ হাজার ১৫৪ জন। পাকিস্তানে আক্রান্ত ১৬ হাজার ৮১৭, মারা গেছে ৩৮৫ জন। বাংলাদেশে আক্রান্ত ৭ হাজার ৬৬৭, মারা গেছে ১৬৮ জন।

প্রসঙ্গত, এ রোগের কোনো উপসর্গ যেমন জ্বর, গলা ব্যথা, শুকনো কাশি, শ্বাসকষ্ট, শ্বাসকষ্টের সঙ্গে কাশি, শরীর ঠাণ্ডা হয়ে যাওয়া, বারবার কাঁপুনি, পেশিতে ব্যথা, মাথা ব্যথা এবং হঠাৎ করে স্বাদ বা গন্ধ না পাওয়া। তাই এগুলো দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। বাইরে চলাফেরার সময় মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। বাড়িঘর পরিষ্কার রাখতে হবে। বাইরে থেকে ঘরে ফিরে এবং খাবার আগে সাবান দিয়ে হাত পরিষ্কার করতে হবে। খাবার ভালোভাবে সিদ্ধ করে খেতে হবে।

Next Post

করোনা দুর্যোগ মোকাবেলায় ঐক্যের বিকল্প নেই: কাদের

শুক্র মে ১ , ২০২০
রাপ্র ডেস্ক: করোনা দুর্যোগ মোকাবেলায় ঐক্যের বিকল্প নেই বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ঐক্যবদ্ধভাবে আসুন আমরা দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে চলমান কার্যক্রমকে এগিয়ে নিয়ে যাই। আমাদের সকলের সম্মিলিত প্রয়াসে করোনার কালো মেঘ অচিরেই কেটে যাবে। ইনশাআল্লাহ্। শুক্রবার (১ মে) এক ভিডিও […]

Chief Editor

Johny Watshon

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat. Duis aute irure dolor in reprehenderit in voluptate velit esse cillum dolore eu fugiat nulla pariatur

Quick Links