দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেছেন, ‘শুধু বাংলাদেশ নয়, সারা বিশ্বই মহাসংকটকাল অতিক্রম করছে। করোনাকালেও দেশে দুষ্টুচক্রের কালো হাত থেমে নেই। সে কারণেই মাস্ক কেলেঙ্কারি, করোনা টেস্ট জালিয়াতি, ত্রাণ সামগ্রী আত্মসাৎ, চিকিৎসা জালিয়াতির মতো ঘটনা আমাদের সামনে এসেছে। আমরাও দায়িত্ব পালনে পিছপা হইনি। তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থার উদ্যোগ নিয়েছি।
শনিবার (২১ নভেম্বর) দুদকের ষোড়শ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনা সভা আত্মজিজ্ঞাসা বা আত্মসমালোচনার প্ল্যাটফরম। এর মাধ্যমে দুদকের প্রতিটি কর্মীকে নিজ নিজ দর্শনের প্রতি অঙ্গীকারাবদ্ধ হতে হবে।
তিনি বলেন, ‘দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আমাদের ৭০ জনেরও বেশি কর্মকর্তা-কর্মচারী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। করোনায় তিনজন প্রতিশ্রুতিশীল কর্মকর্তা-কর্মচারীকে হারিয়েছি। তারপরও দুর্নীতিপরায়ণদের সুখকর সময় পার করতে দেওয়া হচ্ছে না। আমাদের কাজটি ধন্যবাদহীন। এ কারণেই দুর্নীতির মূলোৎপাটনে দেশের সর্বস্তরের মানুষের সম্পৃক্ততার প্রয়োজন। তাই দুর্নীতির বিরুদ্ধে ছাত্র-শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, গণমাধ্যম, সুশীল সমাজ, রাজনীতিবিদসহ সবার সমন্বিত সামাজিক আন্দোলন করতে হবে।
গঠনমূলক সমালোচনাই কর্ম প্রক্রিয়াকে শাণিত করে ও সঠিক পথ দেখায়, উল্লেখ করে ইকবাল মাহমুদ বলেন, ‘সবাই সবকিছু জানে না। তাই অন্য কেউ যদি ভালো পথ দেখায়, তা গ্রহণ করতে আমাদের আপত্তি নেই। আমরা সমালোচনার প্রতিউত্তর দেই না, বরং তা গ্রহণ করি। নিজেদেরকে পরিশুদ্ধ করার চেষ্টা করি। আমরা আইনি দায়িত্ব পালনে অঙ্গীকারাবদ্ধ। তাই আমাদের ঝুঁকি নিতে কোনো ভয় নেই। আমরা ঝুঁকি নিয়েছি। আমরা সবাই সমন্বিতভাবেই ঝুঁকি নিয়েছি। কোনো হুমকি-ধমকি আমাদেরকে আইনি দায়িত্ব পালনে বিরত রাখতে পারেনি। আমরা সবাই একই সমতলে থেকে দায়িত্ব পালন করেছি।
দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘সমাজে কেউই দুর্নীতি চায় না। সমাজের কতিপয় ব্যক্তি দুর্নীতিগ্রস্ত। তাদের সংখ্যা সত্যিই নগণ্য। তাই সমাজের কাছে আমাদের অঙ্গীকার থাকতে হবে। মানবিক দৃষ্টিভঙ্গী মানে অপরাধ বা অপরাধীর সঙ্গে আপোস নয়। সকল প্রকার ভয়-ভীতি, লোভ-লালসার ঊর্ধ্বে উঠে কাজ করতে হবে। সবাই মিলে শেষ দিন পর্যন্ত জনগণের কল্যাণে দুর্নীতি প্রশমন, দমন, প্রতিরোধ নিয়ন্ত্রণে কাজ করব, এটাই হবে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আমাদের দৃঢ় অঙ্গীকার।
দুদক চেয়ারম্যানের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন—সংস্থাটির সচিব মুহাম্মদ দিলোয়ার বখ্ত, বিশেষ অনুসন্ধান ও তদন্ত অনুবিভাগের মহাপিরচালক সাঈদ মাহবুব খান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অনুবিভাগের মহাপিরচালক এ কে এম সোহেল, গোয়েন্দা অনুবিভাগের পরিচালক মীর মো. জয়নুল আবেদীন শিবলী, ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক মো. আক্তার হোসেন প্রমুখ।
