ওয়ান টাইম প্লাস্টিক কাপে নষ্ট হচ্ছে পদ্মা পাড়ের সৌন্দর্য ।

আভা ডেস্কঃ করোনাকালের কিছুদিন আগেও এমন ছিলো না পদ্মাপাড়ের দৃশ্য। এমনকি লকডাউনের মধ্যেও ছিলো পরিচ্ছন্ন পরিবেশ। তবে লকডাউন তুলে দেওয়ার পরেই বদলে যেতে থাকে দৃশ্যপট।

চা পানের জন্য ব্যবহৃত কাচের কাপের পরিবর্তে এসেছে প্লাস্টিক কাপ। একসময় চা পান শেষে কাপটি চা বিক্রেতার কাছে ফেরত দেওয়া হলেও এখন ব্যবহৃত প্লাস্টিকের কাপটি ছুঁড়ে ফেলা হচ্ছে যেখানে সেখানে। এর ফলে ফেলে দেওয়া প্লাস্টিকের কাপে নষ্ট হচ্ছে পদ্মা পাড়ের সৌন্দর্য।

এর সুদূরপ্রসারী ফল পরিবেশের ওপর মারাত্মক ঝুঁকি বয়ে আনবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, রাজশাহীর কেশবপুর পুলিশ লাইন পদ্মার পাড়ে যত্রতত্র চা খেয়ে প্লাস্টিকের কাপ ফেলে রাখা হয়েছে। কোথাও রাখা হয়েছে স্তূপাকারে, কোথাও ছড়িয়ে ছিটিয়ে ফেলে রাখা হয়েছে।

শুধু সেখানেই নয়, পদ্মার পাড়ের শ্রীরামপুর টি-বাঁধ, পদ্মা গার্ডেন, দরগা পাড়া লালন শাহ মঞ্চসহ পদ্মা তীরের নানাস্থানে এসব প্লাস্টিকের কাপ ছড়িয়ে ছিটিয়ে ফেলা হচ্ছে। বিশেষ করে পদ্মা পাড়ের দর্শনীয় যেসব স্থানে জনাসমগম বেশি ঘটে সেখানেই এসব কাপ ফেলে রাখা হচ্ছে।

চা দোকানিরা বলছেন, দর্শনার্থীরা প্লাস্টিকের কাপে চা নিয়ে চলে যায়। তারপর চা খাওয়া হয়ে গেলে যেখানে-সেখানে ফেলে দেয়। এজন্য পদ্মার পাড়ে যেখানে-সেখানে প্লাস্টিকের কাপ পড়ে থাকছে।

নগরীর কেশবপুর পুলিশ লাইন বটতলার পদ্মাপাড় দর্শনীয় স্থান। লকডাউন ওঠার পর থেকেই প্রতিদিন সেখানে প্রচুর মানুষের জনসমাগম হয়। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, পদ্মা পাড়ে প্লাস্টিকের কাপগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকার পাশাপাশি কয়েকটি স্থানে স্তূপাকারেও রাখা হয়েছে। শহর রক্ষা বাঁধের উপর বাউন্ডারি দিয়ে ঘিরে রাখা গাছপালার মধ্যেও ফেলে রাখা হয়েছে সেই চা খেয়ে ব্যবহৃত প্লাস্টিকের কাপগুলো।

কেশবপুর পুলিশ লাইন বটতলার মিলু নামে আরেক নারী চা বিক্রেতা বলেন, কয়েকদিন ধরে ময়লার গাড়ি আসছে না। তাই চায়ের কাপ জমা হয়ে পড়ে আছে।

একই এলাকার খলিল নামে আরেক চা বিক্রেতা বলেন, রাত ১১টার দিকে ময়লার গাড়ি আসে, আর আমরা ফেলি রাত ৯টার দিকে। কয়েকদিন ধরে ময়লার গাড়ি না আসার জন্যই কাপগুলো স্তূপাকারে জমে রয়েছে।

নগরীর কেশবপুর শহর রক্ষা বাঁধে ঘুরতে আসা ফয়সাল হোসেন বলেন, প্লাস্টিক কাপে চা দেওয়াতে ভালো হয়েছে। কারণ নদীর তীরে বসে চা খেতে খেতে গল্প করা যায়। চায়ের স্টলে বসে ভিড়ের মধ্যে চা খাওয়ার ঝামেলা পোহাতে হয় না।

চা খেয়ে কাপ কোথায় ফেলেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, নদীর পাড়ে তো কোথাও চায়ের কাপ ফেলার ডাস্টবিন নেই। তাইতো পাড়ের ওপরই ফেলি। যদিও বিষয়টা ঠিক না, কিন্তু ফেলার তো জায়গাও নেই।

রাফিদ ইফতিয়ার নামে আরেক তরুণ বলেন, নদীর পাড়ে বসে চা খেতে খেতে আড্ডা দেওয়া খুব মজার। প্লাস্টিক কাপের কারণে এই সুবিধাটা আমরা পাই। তবে পাড়ে আর্বজনা ফেলার ডাস্টবিন থাকলে ভালো হতো। বাধ্য হয়েই নদীর পাড়েই কাপ ফেলতে হয়। অনেকে নদীর পানিতেও ফেলে দেয়।

সেইভ দ্য ন্যাচার অ্যান্ড লাইফ সংগঠনের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বলেন, এমনিতেই প্লাস্টিক পরিবেশের জন্য বড় শত্রু। তারপর এই করোনাভাইরাসের সময় প্লাস্টিকের গায়ে দীর্ঘক্ষণ করোনাভাইরাসের জীবাণু টিকে থাকে। যদি কোনো চা বিক্রেতা কারোক্রান্ত হন, তাহলে তার দেওয়া প্লাস্টিকের কাপে চা খেলে বহু লোকের মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের শঙ্কা থাকে।

তিনি বলেন, আবার অনেককে প্লাস্টিকের কাপে চা খেয়ে যেখানে-সেখানে ফেলে দিতেও দেখা গেছে। এর মধ্যে যদি কোনো আক্রান্ত ব্যক্তি চা খাওয়ার পর ওই কাপ ফেলে দেন সেখান থেকেও বহু লোকের মধ্যে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে পারে। আর সবচেয়ে বড় কথা এখন ডেঙ্গু রোগের মৌসুমও চলছে। ওই কাপগুলো যত্রতত্র ফেলার ফলে কাপে জমে থাকা পানির মাধ্যমে ডেঙ্গু রোগের বিস্তার ঘটার শঙ্কা রয়েছে।

তিনি বলেন, শহরের ভেতরে অনেক চা বিক্রেতাদের দেখেছি তারা প্লাস্টিকের কাপগুলো জমা করে ড্রেনে ফেলে দেন। তখন ওই কাপগুলো ড্রেনের প্রবেশমুখ বন্ধ করে পানি চলাচলে বাধার সৃষ্টি করে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান জানান, প্লাস্টিক পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি। এটা মাটি ও পানির গুণাগুণ নষ্ট করে দেয়। তাই প্লাস্টিক কাপের ব্যবহার বন্ধ করা উচিত। তার পরিবর্তে মোটা কাগজের তৈরি কাপে চা পরিবেশন করা যেতে পারে।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজের কমিউনিটি মেডিসিনের সাবেক অধ্যাপক ডা. চিন্ময় কান্তি দাশ বলেন, প্লাস্টিক কাপে চা খাওয়া জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি। এর বিকল্প ভাবা উচিত।

এবিঃএস

Next Post

মেডিকেল টেকনোলজিষ্টদের লাগাতার কর্মবিরতির ঘোষণা স্থগিত ।

বুধ জুলাই ১৫ , ২০২০
আভা ডেস্কঃ স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালকের আশ্বাসে লাগাতার কর্মবিরতির ঘোষণা স্থগিত করেছে বাংলাদেশ মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট এসোসিয়েশন (বিএমটিএ)। মঙ্গলবার সংগঠনের সভাপতি মো. আলমাছ আলী খান স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ১২ জুলাই রোববার স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালকের অফিসকক্ষে তার সভাপতিত্বে অধিদফরের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং বিএমটিএ […]

Chief Editor

Johny Watshon

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat. Duis aute irure dolor in reprehenderit in voluptate velit esse cillum dolore eu fugiat nulla pariatur

Quick Links