আভা ডেস্ক :ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) ফের শিক্ষক নিয়োগে বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। এবার প্রার্থীর সঙ্গে নিয়োগ বাণিজ্যের চুক্তি হয়েছে ২০ লাখ টাকায়। এ নিয়ে অডিও ফাঁস হয়েছে, যা যুগান্তর প্রতিনিধির হাতে এসেছে।
এর আগেও যুগান্তরে নিয়োগ বাণিজ্যের অডিও প্রকাশ করা হয়। ওই অডিওতে ১২ থেকে ১৫ লাখ টাকায় দেনদরবার হয়েছিল। এ নিয়ে যুগান্তরে সংবাদের পর নিয়োগ বাতিল হয়ে যায়। এবার শিক্ষক নিয়োগে ২০ লাখ টাকার চুক্তি হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের এক প্রার্থীর সঙ্গে ওই বিভাগের সভাপতি প্রফেসর ড. জাহাঙ্গীর হোসেনের সম্মতিতে নিয়োগ বাণিজ্য হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
ওই নিয়োগ বাণিজ্যে সহযোগী হিসেবে টাকা লেনদেনের চুক্তি করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও দুই শিক্ষক। তারা হলেন- বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. বাকী বিল্লাহ বিকুল এবং ইংরেজি বিভাগের প্রফেসর ড. শাহাদৎ হোসেন আজাদ। প্রার্থী ও তার স্বামীর সঙ্গে টাকা লেনদেনের চারটি রেকর্ড যুগান্তরের হাতে এসেছে।
অডিওতে নগদ ১০ লাখ টাকা প্রদান এবং বাকি ১০ লাখ টাকার চেক প্রদান করা হয়েছে। তবে ওই প্রার্থীর নিয়োগ নিশ্চিত না করতে পারায় টাকা ফেরত দেয়া হয়েছে। ১৩ জুলাই রাতে ওই প্রার্থীর স্বামীকে ফোনে ডেকে নিয়ে টাকা ফেরত দিয়েছেন বলে অডিওতে বলা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ইবিতে শনিবার ৩৭ শিক্ষক নিয়োগের বিষয়টি চূড়ান্ত করতে ২৪১তম সিন্ডিকেট সভা হয়েছে। ওই সভার পরপরই প্রার্থী নিয়োগ নিয়ে অডিও রেকর্ড ফাঁস হয়ে যায়।
প্রার্থীর স্বামী শাহরিয়ার রাজ যুগান্তরকে বলেন, চাকরির ৯৯ শতাংশ কনফার্ম করেছিল বলেই টাকা দিয়েছিলাম। আমার স্ত্রীর আর চাকরির বয়স নেই। আমি তাদের বিচার চাই।
ইবি শিক্ষক ড. বাকী বিল্লাহ বিকুল বলেন, আমার কিছুই বলার নেই। এটা আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। রেকর্ডের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমি বিব্রত। একপর্যায়ে তিনি এ প্রতিবেদকের কাছে নিজেকে বাঁচানোর আকুতি জানান।
অভিযুক্ত ড. শাহাদাৎ হোসেন আজাদ বলেন, রাজনীতি করার কারণে বিভিন্ন লোকজনের সঙ্গে কথা বলতে হয়। তবে আমি কারও জন্য কখনও ভিসি স্যারের কাছে সুপারিশ করিনি।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের সভাপতি প্রফেসর ড. জাহাঙ্গীর হোসেন যুগান্তরকে বলেন, ‘এরকম কিছু প্রমাণিত হলে আমি চাকরি ছেড়ে দেব। আমি জানি না ওই প্রার্থীর নিয়োগ হয়েছে কিনা। তবে আমি এমন ধরনের কোনো বিষয়ে জড়িত নই।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. রাশিদ আসকারী যুগান্তরকে বলেন, ‘যদি এমন ধরনের কোনো চুক্তি তারা করে থাকে, সেটি কার্যকর হোক বা না হোক তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তিনি বলেন, এমন অসৎ এবং অশুভ চুক্তি করার জন্য অভিযোগ আকারে এলে আমরা অবশ্যই তদন্তসাপেক্ষে বিচারের আওতায় আনব। আমি দুর্নীতির ব্যাপারে জিরো টলারেন্স। সব দুর্নীতি অনিয়ম আমি দূর করবই।’
অডিও রেকর্ডের চুম্বক অংশ
ড. বাকী বিল্লাহ : এ মামুন ভাই আপনি আসতিছেন?
ফারজানা : আসসালামু আলাইকুম স্যার।
ড. বাকী বিল্লাহ : হ্যাঁ, দেখ বাবু আমি…
ফারজানা : স্যার আমি তো আপনাদের কথা শুনে অনেকখানি একদম ডিপেন্ডেবল। যে কালকে আপনারা আমাকে এত করে বললেন, জাহাঙ্গীর স্যার যখন বলল, আপনাকে, আপনার মাধ্যমে টাকাটাও ডিল-ট্রিল করবে। আপনার কথা শুনে আমি একদম ২০ লাখ টাকাও হাতে ধরায় দিলাম। তুলে দিলাম। আশা করলাম। স্যার কেন এমনটা করল? জাহাঙ্গীর হোসেন স্যার।
ড. বাকী বিল্লাহ : এখন আমি তোমার স্যারের সাথে এতক্ষণ বসে থেকে কথা বললাম, ফারজানা : স্যার তো সিগনেচার না করলে নিয়োগ হতো না। স্যার তো আমাকে বলতে পারত। আমাকে আরও অ্যামাউন্ট দেয়া লাগত। আমি তাতেও রাজি ছিলাম।
ড. বাকী বিল্লাহ : না না, ওসব না, ওসব না। মনি, ওসব কোনো কিছুই না। ফারজানা : তাহলে কেন আপনারা আমাকে কনফার্ম দিলেন? আমি রিটেনে ভালো করলাম। ভাইভাতেও ভালো করলাম। আমাকে সব আশ্বস্ত করে দিলেন। আর এখন শেষ মুহূর্তে এসে এমন করলেন আপনারা আমার সাথে।
ড. বাকী বিল্লাহ : এখন কুষ্টিয়া থেকে তোমাকে বলি, হয়ত অন্য কারও হয়েছে বা, যাহোক আমি তো বলতে পারব না।
ফারজানা : কুষ্টিয়ার ক্যান্ডিডেট তো আমিই ছিলাম স্যার।
ড. বাকী বিল্লাহ : হুমমম, আরে বাবা আরও ক্যান্ডিডেট আছে।
ফারজানা : নুসরাত ছিল। নুসরাতের কি হইছে?
ড. বাকী বিল্লাহ : সেটা বলতে পারছি না।
ফারজানা : স্যার কাইন্ডলি, আপনারা যদি একটু দেখতেন…
ড. বাকী বিল্লাহ : আরে বাবু
ড. বাকী বিল্লাহ: না না, আমি তো জাহাঙ্গীর স্যারের সাথে এখনই উঠে এলাম। এখন এই জিনিসটা এখনই আবার। মামুন ভাই জিনিসটা বারবারই জানতে চাচ্ছে। আমি কিন্তু তাকে জানাচ্ছিলাম না। আমি তাকে পরে জানাব। কালকে সিন্ডিকেট হবে। সিন্ডিকেটের পরে জানাব। কিন্তু আগে জানিয়েই আমি আরও বিব্রত হলাম দেখছি।
ফারজানা : জ্বি স্যার, আপনি আমাকে কনফার্ম করলেন। তোমার এইটটি পার্সেন্ট হয়ে গেছে। তোমার কোনো অসুবিধা নেই। এর জন্য আপনি যখন যে শর্ত দিয়েছেন, টাকা দেয়া বলেন, জাহাঙ্গীর স্যারের… কোনো সত্যতা যাচাই ও করতে যায়নি। আপনাকে সঙ্গে সঙ্গে টাকাটা পে করে দিয়েছি। সব করে দিয়েছি স্যার।
ড. বাকী বিল্লাহ : সেটা নিয়ে তো আর সমস্যা নাই। আমরা তো কোনো মিস ইউস করিনি। জাহাঙ্গীর স্যার তো এটা মিস ইউস করেননি। তাই না? এখন সে না পারলে, আমি তো মাঝখানে থেকে মানুষের উপকার করে এখানে তো কোনো ইন্টারেস্ট নেই।
ফারজানা : জাহাঙ্গীর স্যার এটা করত না? ড. বাকী বিল্লাহ : পারত কিনা সেটা আমার জানা নেই। রাতে ব্যস্ত হয়ে গেছেন। সরি বলেছেন উনি। এখন কি করব বল? কিছু করার নেই বাবু। মামুন ভাইকে, আমি তো বসে আছি। উনি আসলে আমি তো উনাকে পৌঁছে দিয়ে…
ফারজানা : আচ্ছা আপনি উনার (স্বামী) সাথে কথা বলেন।
এবার তার স্বামীর সাথে কথা বলার জন্য ফোন এগিয়ে দেন তার স্ত্রী ফারজানাÑ
ড. বাকী বিল্লাহ : হ্যাঁ।
ফারজানার স্বামী : হ্যালো…।
ড. বাকী বিল্লাহ : হ্যাঁ, মামুন ভাই ভয় পাচ্ছেন কেন? কুষ্টিয়ার ছেলে। আপনি আসেন। আমি তো আপনাকে নিজে পৌঁছে দেব। কি মুশকিল রে ভাই…মানুষের উপকার করতে গিয়ে আমি নিজেই তো একটা বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে পড়েছি।
যুগান্তর