আভা ডেস্ক; রাজধানীর গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালে অগ্নিকাণ্ডে কোভিড-১৯ ইউনিটের পাঁচ রোগীর মৃত্যু হয়েছে। স্বজনদের নানা অভিযোগ উপেক্ষা করে দায় সাড়া দুঃখ প্রকাশ করেছে হাসপাতাল কতৃপক্ষ বলে জানিয়েছেন নিহতদের পরিবার ।
বুধবার রাতে বেসরকারি হাসপাতালটির নিচের প্রাঙ্গণে করোনাভাইরাসের রোগীদের জন্য স্থাপিত আইসোলেশন ইউনিটে আগুন লাগে।
আধা ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হলেও তার মধ্যেই পাঁচ রোগীর মৃত্যু ঘটে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস কতৃপক্ষ ।
কী কারণে এই অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে পুলিশ বলছে, শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র (এসি) থেকে আগুনের সূত্রপাত বলে তারা জানতে পেরেছেন।
এদিকে দু’বার কোভিড নেগেটিভ আসার পরও রোগীকে করোনা ইউনিটে রাখে ইউনাইটেড হাসপাতাল। আগুনে মৃত ৫ জনের মধ্যে দু’জনের ছিল করোনামুক্তির সনদ। হাসপাতালটিতে করোনা চিকিৎসা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন মৃতদের স্বজনরা।
বিবৃতিতে দুঃখ প্রকাশেই দায় সারছে ইউনাইটেড কর্তৃপক্ষ। তদন্তে ৪ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে ফায়ার সার্ভিস।
এদিকে মৃতদের স্বজনেরা জানান, তাদের মধ্যে তিনজন করোনা রোগী ছিলেন। এদের একজনের দুই দফা নেগেটিভ রিপোর্ট এলেও নানা অজুহাতে রাখা হয় আইসোলেশন ইউনিটে। বাকি দু’জনেরও কোভিড নেগেটিভ সার্টিফিকেট জমা দেয়া হয়েছিল।
নিহতদের স্বজনদের একজন বলেন, ‘আমাকে বলা হয়েছিল আমার আম্মার টেস্ট রিপোর্ট যদি নেগেটিভ আসে তাহলে সরিয়ে উপরে নিয়ে যাবে
নিহতদের আরেক স্বজন বলেন, ‘দুইটা স্যাম্পল নিয়েছে দুটোই নেগেটিভ। তখন বলেছিল ছেড়ে দেবে। এরপর দিচ্ছি, দিব করে আর ছাড়েনি।’
অগ্নি নির্বাপণ ও চিকিৎসা ব্যবস্থাসহ নানা বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ভুল তথ্য দিচ্ছে বলেও অভিযোগ স্বজনদের।
এ ঘটনায় ইউনাইটেড হাসপাতাল নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরে গণমাধ্যমে একটি বিবৃতি পাঠিয়েছে । যা নিচে তুলে ধরা হলো:
গভীর দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি যে ২৭ মে (বুধবার ) আনুমানিক রাত সাড়ে ৯টায় হাসপাতাল সংলগ্ন তবে মূলভবনের বাইরের কোভিড-১৯ আইসোলেশন ইউনিটে সম্ভবত বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিটের মাধ্যমে অগ্নিকাণ্ডের সৃষ্টি হয় এবং কয়েক মিনিটের মধ্যে আগুন আইসোলেশন ইউনিটের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে।
সে সময় আবহাওয়া খারাপ ছিল ও বিদ্যুৎ চমকাচ্ছিল। বাতাসের তীব্রতায় আগুন প্রচণ্ড দ্রুততার সঙ্গে ছড়িয়ে পড়ার ফলে দুর্ভাগ্যজনকভাবে এখানে ভর্তি ৫ রোগীকে বাইরে বের করে আনা সম্ভব হয়নি। ভেতরে থাকা এই পাঁচজন রোগী মৃত্যুবরণ করেছেন।
এই আইসোলেশন ইউনিটের ৫ রোগীর সবাই করোনা উপসর্গ নিয়ে ভর্তি ছিলেন। রোগীরা হলেন, রিয়াজুল আলম(৪৫), খোদেজা বেগম(৭০), ভেরুন এন্থনি পল(৭৪), মনির হোসেন(৭৫), মাহাবুব(৫০)।
দমকল বাহিনীকে তাৎক্ষণিক খবর দেয়া হয়। হাসপাতালের নিজস্ব অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা ও দমকল বাহিনীর সহায়তায় ১৫ থেকে ২০মিনিটে আগুন নিভিয়ে ফেলা হয়। অগ্নিকাণ্ডের কারণ অনুসন্ধানে দমকল বাহিনী তদন্ত করছে। ইউনাইটেড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এ সম্পর্কে তাদের পূর্ণ সহায়তা করছে।
এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আমাদের যথেষ্ট সহায়তা করছেন। ইউনাইটেড হাসপাতালের সব চিকিৎসক, নার্স ও কর্মকর্তা-কর্মচারীর পক্ষ থেকে আমরা এই শোকাবহ ঘটনায় গভীর দুঃখপ্রকাশ করছি।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ভর্তি সব রোগীর নিরাপত্তার ব্যাপারে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিয়েছি। কাজেই হাসপাতালে ভর্তি রোগী ও তাদের পরিবারকে এই অনভিপ্রেত ঘটনায় আতঙ্কিত না হতে অনুরোধ করছি।
একই সঙ্গে দুর্যোগের সময়ে ধৈর্য ও সহনশীলতার সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য ইউনাইটেড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে সহযোগিতা করার জন্য সবাইকে আন্তরিক অনুরোধ করছি।