ava desk: আদালতে হাজিরা দিতে গেলে দুর্নীতির কাহিনী প্রকাশ হয়ে যাবে। সে কারণেই কারাবন্দি খালেদা জিয়া অসুস্থতার ‘ভান’ করছেন বলে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেছেন, ‘তার দুর্নীতির কাহিনী আছে। অসুস্থতার ভান করে কোর্টে হাজিরা দেয় না। হাজিরা দিলেই ধরা খাবে। সেজন্যই হাজিরা দেয় না; এটা হলে বাস্তবতা।’
গণভবনে শনিবার আওয়ামী লীগের এক বর্ধিত সভায় একথা বলেন দলীয় সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় দণ্ড নিয়ে বন্দি বিএনপি চেয়ারপারসনের জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলার শুনানিতে অনুপস্থিতিকে কেন্দ্র করে একথা বলেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী।
গত ১৩ মার্চ দাতব্য ট্রাস্ট মামলার অন্যতম আসামি জিয়াউল ইসলাম মুন্নার পক্ষে আংশিক যুক্তিতর্ক হয়। এরপর বিচারক কয়েকটি তারিখ রাখলেও কোনোদিনই খালেদা জিয়াকে হাজির করা হয়নি।
তারিখ নির্ধারণ হলেই খালোদার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই) এজেন্টরা বাংলাদেশে আসবেন বলে প্রধানমন্ত্রী জানান।
জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় পাঁচ বছরের সাজার রায়ের পর গত ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে খালেদা কারাবন্দি; তাকে রাখা হয়েছে পুরান ঢাকার নাজিম উদ্দিন রোডের পুরনো কারাগারে।
৭৩ বছর বয়সী খালেদা গুরুতর অসুস্থ বলে তার ব্যক্তিগত চিকিৎসকরা দেখে এসে দাবি করেছেন। তারা তাকে বেসরকারি ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তির সুপারিশ করেছেন। এরপর কারা কর্তৃপক্ষ তাকে সরকারি হাসপাতাল বিএসএমএমইউ কিংবা সিএমএইচে নিতে চাইলেও তিনি সেখানে যেতে রাজি হননি।
বিএনপি নেতারা দাবি করছেন, চিকিৎসা না দিয়ে তাদের নেত্রীকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে সরকার। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ হলে হাসপাতালেই যেতেন, কোন হাসপাতাল, তা দেখতেন না।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘অসুখ তো তার আছেই। হার্টের অপারেশন করে আসছে, অনেক কিছু করে আসছে। ক্ষমতায় থাকতে আমেরিকায় গিয়ে চিকিৎসা করে আসছে, সৌদিতে চিকিৎসা… আমরা দেখেছি।’
২০০১ সালে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর খালেদা জিয়া চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছিলেন। এছাড়াও সৌদি আরবে হাঁটুর চিকিৎসা করান তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘কিন্তু, কোর্টে হাজিরা দিতে পারবে না, এমন তো অবস্থা না। কিন্তু, সেটা করছে। কেন? কারণ, আমেরিকার এফবিআইয়ের লোকেরা বসে আছে সাক্ষি দেবার জন্য। সে যে দুর্নীতি করেছে, সে সাক্ষি দেওয়ার জন্য বসে আছে। তারিখ পেলেই তারা চলে আসে।’
বিএনপি অভিযোগ করে আসছে, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলায় দণ্ড দিয়ে তাদের নেত্রীকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘শাস্তি হয়েছে, জেলে গেছে। এখানে তো আমাদের কোনো দায় নাই। ১০ বছর ধরে মামলা চলেছে। বিএনপির যারা আইনজীবী.. এত জাঁদরেল-জাদঁরেল আইনজীবী, তারা কী করল? তারা তো ব্যর্থ হয়েছে; এটা প্রমাণ করতে যে, খালেদা জিয়া দুর্নীতি করে নাই।’
‘এভাবে কেউ এতিমের টাকা চুরি করে খেতে পারে? এটা কেউ পারে না। অথচ এতিমখানার জন্য টাকা এনে, সেই টাকা কীভাবে নয়-ছয় করেছে; আপনারা সেটা দেখেছেন। একটা এতিমকে একটা টাকা দিতে পারল না।’
বর্ধিত সভায় উপস্থিত আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতাদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ায় বিশ্ব সমর্থন অর্জন করেছি। এই সমর্থন নিয়েই এগিয়ে যেতে হবে।’
বছর শেষে নির্বাচনের জন্য দলের ভেতরে বিভেদ ভুলে সবাইকে প্রস্তুত হওয়ার আহ্বান জানান আওয়ামী লীগ সভানেত্রী।
‘সংগঠনের দ্বন্দ্ব ভুলে যেতে হবে। সামনে নির্বাচন অনেক কঠিন হবে। আগামী নির্বাচনে সবাইকে প্রস্তুত হতে হবে।’
রাজনৈতিক জোট অটুট রাখার উপর জোর দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা জোট করেছিলাম, অবশ্যই আমাদের জোট বজায় রাখতে হবে। যেন সবাই আমাদের বিরুদ্ধে চলে না যায়, সেজন্য।’
সংসদ নির্বাচনে দল থেকে যাদের মনোনয়ন দেওয়া হবে, তাদের পক্ষে সবাইকে কাজ করার নির্দেশ দেন তিনি।
‘নমিনেশন দেওয়ার সময় আমরা তৃণমূলের সাথে কথা বলি। ইতিমধ্যে তিনদফা সার্ভে আমাদের হয়ে গেছে। এই সার্ভে করে আমরা যাকে নমিনেশন দেব, যাকেই নমিনেশন দেব, তার পক্ষে সকলকে একযোগে কাজ করতে হবে। যেন নৌকা কোনোভাবেই না হারে।’
দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার কারণে ‘অধিক আত্মবিশ্বাসী’ না হতেও দলের নেতা-কর্মীদের সতর্ক করেন শেখ হাসিনা।
‘দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকলে একটা ভাব হয়ে যায়; সব সিটে তো আমরা জিতব। ওই একটা সিটে না জিতলে কী হবে? মনে রাখতে হবে; একটা সিট হারালে আমরা সরকার গঠন করতে পারব না। এই কথা মনে রেখে সকলকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে কাজ করতে হবে।’
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
কালেরকণ্ঠ