মাথা পিছু ঋন ৬০ হাজার।

ঋণের সুদ পরিশোধে আগামী বাজেটে তৃতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ * সুদের পরিমাণ পদ্মা সেতুর ব্যয়ের দ্বিগুণ * অর্থনীতিবিদরা বলছেন, কর আদায়ে ব্যর্থতায় ঋণ নির্ভরশীল হতে হচ্ছে

আভা ডেস্ক : ৯ ই জুন ২০১৮ইং

আভা ডেস্ক : ৯ ই জুন ২০১৮ইং

মাথাপিছু ঋণ ৬০ হাজার টাকা
আজ যে শিশু জন্ম নেবে, তার মাথায় ৬০ হাজার টাকা ঋণের দায় চাপবে। কারণ বর্তমানে দেশের প্রতিটি নাগরিকের মাথাপিছু এ পরিমাণ ঋণ রয়েছে। গত এক বছরে যা বেড়েছে প্রায় ৯ হাজার টাকা। আগামী এক বছরে তা আরও সাড়ে ৭ হাজার টাকা বাড়বে। ফলে ওই সময়ে মাথাপিছু ঋণের স্থিতি দাঁড়াবে ৬৭ হাজার ৫০০ টাকা। তাই আগামী ২০১৮-১৯ অর্থবছরেও প্রস্তাবিত বাজেটে ঋণের সুদ পরিশোধে তৃতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ রেখেছে সরকার। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, কর আদায় করতে না পারায় সরকারকে বেশি ঋণের আশ্রয় নিতে হচ্ছে। আর এ অবস্থা চলতে থাকলে আগামী ৪-৫ বছরের মধ্যে ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, সরকার প্রতিবছর দেশীয় উৎস থেকে যে হারে ঋণ নিচ্ছে, তা অর্থনীতির ব্যবস্থাপনার জন্য ইতিবাচক নয়। কারণ সুদের হার বেড়ে যায়, যা বিনিয়োগকে বাধাগ্রস্ত করে। তিনি বলেন, প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশে কর আদায়ের হার অত্যন্ত কম। বর্তমানে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) তুলনায় কর আদায় ১০ শতাংশের কম। অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করতে হলে জিডিপির তুলনায় কর আদায় অন্তত ১৫-১৬ শতাংশ থাকা উচিত। তিনি বলেন, করের হার বাড়াতে না পারলে ঋণ কমবে না। তিনি আরও বলেন, ঋণ নিয়ে বাজেট ঘাটতি মেটানো ভালো পদক্ষেপ নয়। এতে আর্থিক খাতের শৃঙ্খলা নষ্ট হয়।

অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরীণ ঋণের পরিমাণ ৯ লাখ ৮৫২ কোটি টাকা। এর মধ্যে বেসরকারি খাতে ঋণ ৮ লাখ ৬২ হাজার ২২৪ কোটি এবং সরকারি ও রাষ্ট্রায়ত্ত মিলিয়ে ৯৩ হাজার ৬২৭ কোটি টাকা। এ ছাড়া এ পরিমাণ ঋণ জিডিপির প্রায় ৩৯ শতাংশ। অন্যদিকে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ তথ্য অনুসারে বর্তমানে দেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি ১৭ লাখ। এ হিসাবে প্রতিটি নাগরিকের মাথাপিছু ঋণ ৬০ হাজার টাকা। আগের বছরের একই সময়ে যা ছিল ৫১ হাজার ৭৫৫ টাকা। এ হিসাবে এক বছরে বেড়েছে প্রায় ৯ হাজার টাকা। এরপর আগামী অর্থবছরে আরও ১ লাখ ২১ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিতে যাচ্ছে সরকার। এর মধ্যে বিদেশি ঋণ ৫০ হাজার ১৬ কোটি টাকা, বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণ ৪২ হাজার ২৯ কোটি টাকা এবং সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে ২৬ হাজার ১৯৭ কোটি টাকা ঋণ নেয়া হবে। ফলে ঋণের স্থিতি আরও ৭ হাজার ৫০০ টাকা বাড়বে। এ ঋণ অত্যন্ত ব্যয়বহুল। কারণ সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে যে ঋণ নেয়া হয়, তার বিপরীতে সরকারকে বছরে ১১ শতাংশ পর্যন্ত সুদ গুনতে হচ্ছে। এ কারণে আগামী ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ঋণ পরিশোধে ৫১ হাজার ৩৪০ কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছে সরকার। যা দুটি পদ্মা সেতুর নির্মাণ ব্যয়ের সমান। এ ক্ষেত্রে ঋণ কমলে এ টাকা বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যয় করা যেত।

এ ব্যাপারে মির্জ্জা আজিজ আরও বলেন, আমাদের অভ্যন্তরীণ ঋণ অনেক ব্যয়বহুল। সেই ঋণের একটা মোটা অংশ যদি হয় সঞ্চয়পত্র, তাহলে তা আরও ব্যয়বহুল। সরকার ব্যয়বহুল ঋণ বেশি নিচ্ছে, এর অর্থই হচ্ছে স্বাস্থ্য ও শিক্ষার মতো অগ্রাধিকার খাতগুলোয় সরকার প্রয়োজন অনুযায়ী বরাদ্দ রাখতে পারছে না।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের সম্মানিত ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, সরকার বর্তমানে যে ঋণ নিচ্ছে তার ৬০ শতাংশই অভ্যন্তরীণ উৎসের। এতে আগামী ৪-৫ বছরের মধ্যে দায় পরিশোধের ক্ষেত্রে বড় ধরনের চাপ সৃষ্টি হবে। তিনি বলেন, ঋণনির্ভরতা কমানোর জন্য রাজস্ব আয় বাড়াতে হবে। এ ক্ষেত্রে রাজস্ব খাতে বিভিন্ন সংস্কার জরুরি।

পলিসি রিসার্চ ইন্সটিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর মনে করেন, সরকার ঠিকমতো ঋণ ব্যবস্থাপনা করতে পারছে না বলেই এর দায় নিতে হচ্ছে জনগণকে। তুলনামূলকভাবে বিদেশি ঋণ অনেক সাশ্রয়ী। কিন্তু সরকার সহজ পথ হিসেবে বেছে নেয় বেশি সুদের অভ্যন্তরীণ উৎসকে। এতে আর্থিক খাতে চাপ বেড়ে যায়।

অন্যদিকে মুদ্রা পরিস্থিতি ইতিবাচক অবস্থায় নেই। ব্যাংকের আমানতের চেয়ে জনগণের হাতে টাকা বেশি বাড়ছে। বর্তমানে দেশে ব্যাপক (এম২) মুদ্রার পরিমাণ ১০ লাখ ৫১ হাজার ৫৪৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে মেয়াদি আমানত ৮ লাখ ২৫ হাজার কোটি, তলবি আমানত ৯৮ হাজার ২০৭ কোটি এবং ব্যাংকের বাইরে জনগণের হাতে ১ লাখ ২৮ হাজার ৩৩৮ কোটি টাকা।

যুগান্তর।

Next Post

নাটোর সিংড়ায় ৪ মাদক সেবী আটক।

শনি জুন ৯ , ২০১৮
সিংড়া প্রতিনিধি: নাটোরের সিংড়ায় ২৫ গ্রাম গাঁজা ও ০.১০ গ্রাম হেরোইনসহ ৪ মাদক সেবীকে আটক করেছে সিংড়া থানা পুলিশ। শুক্রবার রাতে সিংড়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় পৃথক পৃথক অভিযান পরিচালনা করে তাদেরকে আটক করা হয়। আটককৃতরা হলেন, সরকার পাড়া মহল্লার মতলেব (৫০), হাট সিংড়ার আব্দুর রশিদ (৪৫), শেরকোল গ্রামের আল আমিন […]

এই রকম আরও খবর

Chief Editor

Johny Watshon

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat. Duis aute irure dolor in reprehenderit in voluptate velit esse cillum dolore eu fugiat nulla pariatur

Quick Links