২০৪১ পর্যন্ত বাঁচব না, কিন্তু উন্নয়নের কাঠামো দিয়ে গেলাম: প্রধানমন্ত্রী

আভা ডেস্কঃ ২০৪১ সালে বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে বলে আবার আশা প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলেছেন, তখন হয়তো নেতৃস্থানীয় অনেকে জীবিত নাও থাকতে পারে। তবে তরুণ প্রজন্মের সঙ্গে একযোগে ছাত্রলীগকে চলমান উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে হবে।

রাজধানীর ফার্মগেটে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে বুধবার দুপুরে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ৭৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনায় যোগ দিয়ে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। গণভবন প্রান্ত থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০৪১ সাল পর্যন্ত তো আমি থাকব না, বাঁচবও না। বাট আমরা একটা কাঠামো দিয়ে গেলাম…কাজেই আমাদের ছাত্রলীগের প্রত্যেকটা ছেলেমেয়েকে কিন্তু…এ ছাত্ররাই তো শিক্ষিত জাতি হিসেবে গড়ে উঠবে। সেভাবেই তৈরি হতে হবে। কারণ ৪১-এর বাংলাদেশ, যে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ, সেই বাংলাদেশের সৈনিক হিসেবে নিজেদেরকে এখন থেকে প্রস্তুতি নিতে হবে।’

যেসব দেশ বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন নিয়ে একদিন ব্যঙ্গ করেছিল, সেসব দেশের তুলনায় দারিদ্র্যের হার অন্তত একভাগ হলেও কমানোর চ্যালেঞ্জ নিয়েছেন সরকারপ্রধান।

উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনে ছাত্রলীগের প্রতিটি কর্মীকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ ধারণ করে গড়ে ওঠার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। সতর্ক করেছেন, লোভের ফাঁদে পড়ে কেউ যেন পিছলে না যায়।

বাংলাদেশে সক্ষমতা বিশ্ববাসীকে দেখিয়ে দিতে চান বলেও জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘যারা একদিন বাংলাদেশের স্বাধীনতা নিয়ে ব্যঙ্গ করেছিল, বলেছিল, স্বাধীন হয়ে বাংলাদেশ কী করবে, একটা বাস্কেট কেস হবে, আমার লক্ষ্য হচ্ছে সেই দেশে দারিদ্র্যের যে হার আছে তার থেকে যদি এক পার্সেন্টও কম হয়, তা এক পার্সেন্ট কম হলেও আমি বাংলাদেশ থেকে দারিদ্রের হার কমাব। এটাই আমার লক্ষ্য, এটা আমি দেখাতে চাই, হ্যাঁ এটা আমি পারি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অনেক চক্রান্ত ষড়যন্ত্র, এগুলো আমি মাথায়ও রাখি না, বিভ্রান্তও না। কারণ সারাজীবনই দেখেছি এগুলো হচ্ছে, হবেই। কিন্তু একটি আদর্শ নিয়ে চলতে গেলে, একটি লক্ষ্য স্থির করে চললে আর বাংলাদেশের তৃণমূলের, সাধারণ মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতে গেলে, যারা ওপরে থেকে বেশি বেশি খায়, বেশি বেশি পায়, তাদের তো একটু দুঃখ থাকেই।

‘তারা ভাবে যে আমাদের বোধ হয় জায়গা হবে না। সেজন্য ষড়যন্ত্র করতেই থাকে। কিছু লোকের তো লক্ষ্যই থাকে একটা পতাকা পেতে হবে, একটু ক্ষমতায় যেতে হবে ইত্যাদি। এই ধরনের যাদের আকাঙ্ক্ষা বেশি তারা তো দেশের মানুষের ভাগ্যের কথা চিন্তা করে না। তারা ষড়যন্ত্র নিয়ে থাকে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘নীতি আদর্শ নিয়ে চললে পরে, সৎপথে চললে পরে যে কোনো বাধা অতিক্রম করা যায় এবং সেটা প্রমাণ করেছি আমরা।’

পদ্মা সেতু বদলে দিয়েছে দেশের ভাবমূর্তি

একটি সিদ্ধান্ত থেকেই বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি পরিবর্তন হয়েছে বলে মনে করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘যেদিন পদ্মাসেতু নিয়ে আমাদের ওপর দোষারোপ করল, দুর্নীতি হয়েছে, যেটাকে আমি চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিলাম এবং ওয়ার্ল্ড ব্যাংক যখন প্রমাণ করতে পারেনি, তারপরই বিশ্ববাসী বা আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো যাদের কাছ থেকে একসময় ঋণ নিলে তারা মনে করত, আমাদের খুব করুণ করল, আমি কিন্তু সেই চিন্তা থেকে বাংলাদেশকে সরিয়ে এনেছি।’

বাংলাদেশ এখন পরনির্ভরশীল নয় দাবি করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা এখন পরনির্ভরশীল না, আমাদের উন্নয়ন প্রকল্প আমরা স্ব-অর্থে করতে পারি। সেটা আমরা দেখিয়েছি। পদ্মা সেতু যে আমরা নিজেদের অর্থায়নে করতে পারি সেটা আমরা প্রমাণ করে দিয়েছি। এই একটা সিদ্ধান্ত থেকে কিন্তু বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি পাল্টে গেছে। এখন কেউ আমাদের করুণা করতে সাহস পায় না। বরং সমীহ করতে পারে। এটা আমাদের ধরে রাখতে হবে।’

আওয়ামী লীগের সব সহযোগী সংগঠনকে উদ্দেশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আবার যেন কখনও এই হায়েনার দল এসে এদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে না পারে। এদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে কাউকে ছিনিমিনি খেলতে দেয়া হবে না।’

তিনি বলেন, ‘ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট বিলিয়ে সৃষ্ট দল কিন্তু ছাত্রলীগও না বা আওয়ামী লীগও না বা আমাদের সহযোগী সংগঠনও না। আমাদের দল গণমানুষের দল। অধিকার হারা মানুষের কথা বলে কিন্তু এই সংগঠন তৈরি। এই কথা সবসময় মাথায় রাখতে হবে। এটাই আমাদের গর্বের বিষয়। কাজেই সেই গর্বটা থাকতে হবে, কিন্তু অহমিকা নয়। সেখানে বিনয়ী হতে হবে। আর দেশের মানুষকে ভালোবাসতে হবে।’

আগামী দিনের বাংলাদেশ গড়তে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের প্রস্তুত হওয়ার নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেন, ‘নিজেদেরকে গড়ে তুলবা আদর্শবান কর্মী হিসেবে। খেয়াল রাখবা, কোনো লোভের বশবর্তী হয়ে পা পিছলে পড়ে যেও না যেন। নিজেকে শক্ত করে, সততার পথে থেকে এগিয়ে যাবে, সংগঠন শক্তিশালী করবে, জাতির পিতা আদর্শ নিয়ে কাজ করবে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় কাজ করবে, সেভাবেই নেতৃত্ব গড়ে ওঠবে।’

করোনাভাইরাসের ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে ছাত্রলীগের সবাইকে সতর্ক করে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী জানান, সবাইকে মাস্ক পরতে হবে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।

বঙ্গবন্ধু হত্যা পরাজয়ের প্রতিশোধ

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে আরও আগেই বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হতে পারত বলে বিশ্বাস করেন প্রধানমন্ত্রী। মাত্র সাড়ে তিন বছরে যুদ্ধ বিধ্বস্ত একটি দেশকে স্বল্পোন্নত দেশে উন্নীত করাকে ‘অসাধ্য সাধন’ বলে উল্লেখ করেন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘বোধয় এত দ্রুত একটি বিধ্বস্ত দেশকে গড়ে তুলবেন, তা স্বাধীনতা বিরোধী চক্র, মহান মুক্তিযুদ্ধে বিরোধিতাকারী যে সমস্ত বড় দেশ আমাদের স্বাধীনতাকে সমর্থন করেনি, বরং ওই ঘাতক পাকিস্তানিদের সহযোগী ছিল তারা এটা মেনে নিতে পারেনি- বাংলাদেশের অভ্যুত্থান। সেই প্রতিশোধটা নিয়েছিল তারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে হত্যা করে, তাদের পরাজয়ের প্রতিশোধ। এটাই তারা গ্রহণ করেছিল। এটাই তারা করেছিল। সেই জিঘাংসা চরিতার্থ করেছিল।’

এসময় ছাত্রলীগের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ছাত্রলীগকে কিন্তু সবসময় সেই আদর্শ নিয়ে গড়ে উঠতে হবে। ক্ষমতা লোভ লালসা- এগুলো ঊর্ধ্বে ওঠে নিজেদের আদর্শ কর্মী হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। জাতির পিতার আদর্শটা যদি একবার ধারণ করা যায়, তাহলে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হওয়া কঠিন কাজ নয়।’

বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনী, কারগারের রোজনামচা, চীন ভ্রমণ নিয়ে রচিত বইগুলো ছাত্রলীগ ও সংগঠনটির সাবেক নেতাদের অবশ্যই পড়া উচিত বলেও মন্তব্য করেন তিনি। তাহলেই জাতির পিতা আদর্শ উদ্বুদ্ধ হওয়া সম্ভব বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘যদি দেশপ্রেম না থাকে, জনগণের পতি দায়িত্ববোধ না থাকে, তাহলে ক্ষমতায় বসে শুধু ক্ষমতাকে উপভোগ করা যায়, দেশের উন্নতি করা যায় না।’

ক্ষমতা নয়, মানুষের জন্য দেশে ফিরেছেন হাসিনা

দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের লক্ষ্য নিয়েই ১৯৮১ সালের ঝঞ্ঝা বিক্ষুব্ধ দিনে দেশের ফিরে আসার কথা স্মরণ করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা।

তিনি বলেন, ‘ক্ষমতার লোভে যেন তেনভাবে ক্ষমতায় যাওয়ার চিন্তা আমি কখনোই করিনি বা পদের লোভও আমার ছিল না। আমার অবর্তমানে আওয়ামী লীগ আমাকে সভাপতি নির্বাচিত করেছিল। সেখানও আমার শর্ত ছিল, কাউন্সিলের একটি মানুষও যদি কোনোদিন আপত্তি করে আমি থাকব না।’

দল পরিচালনায় করতে গিয়ে নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘দলে তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা কখনও ভুল করেন না। হয়তো ওপরের কিছু নেতারা বিভ্রান্ত হন বা ক্ষমতার লোভে পড়ে যান। কিন্তু আমার তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা কখনও ভুল করে না।’

তারই আলোকে ছাত্রলীগকে নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেন, ‘সংগঠনটা গড়তে হবে। কারণ সংগঠনটেই থাকে শক্তি।’

খালেদা দিয়েছিল অস্ত্র, আ.লীগ দিয়েছে কাগজ-কলম

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার রাজনীতির সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘আমি ছাত্রলীগের হাতে কাগজ কলম তুলে দিয়েছিলাম। সেটা একটা চ্যালেঞ্জের সময় ছিল। কারণ খালেদা জিয়া ধমক দিয়েছিল যে ছাত্রদলের অস্ত্রই নাকি যথেষ্ট আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করতে। সে দিয়েছিল অস্ত্র, বোমা, গুলি। এটা জিয়াউর রহমানের আমল থেকে শুরু। এরশাদ, খালেদা জিয়াও তাই করেছে। আর আমি দিয়েছি কাগজ কলম, অর্থাৎ পড়াশোনা শেখ, দেশকে ভালোবাসো, দেশের জন্য কাজ করো।’

শিক্ষা শান্তি প্রগতি- ছাত্রলীগের এই মূলনীতি মেনে সবাইকে পড়াশোনার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমি কারও নাম বলব না। একটু বলতে চাই। অল্পশিক্ষিত বা স্বশিক্ষিত বা অশিক্ষিত নেতৃত্ব একটা দেশকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়। আাজকে সেই ধ্বংসস্তুপ থেকে একটি দেশকে আমরা উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত করেছি।’

ছাত্রলীগের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘এখনও যদি নিজের গ্রামে ছুটিতে বাড়িতে যেয়ে নিজের গ্রামে কোনো মানুষ যদি নিরক্ষর থাকে তাদের স্বাক্ষরতার ব্যবস্থা করা, ছোটো ছোটো বাচ্চাদের ভলান্টারি শিক্ষা দিতে হবে।’

দুর্নীতি, সন্ত্রাস জঙ্গিবাদ থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘করোনা একটা শিক্ষা দিয়ে গেছে মানুষকে, ধন সম্পদ কোনো কিছু কাজে লাগে না, অর্থ সম্পদ কোনো কিছু কাজে লাগে না।’

‘কাজেই অহেতুক অর্থের পেছনে না ছুটে মানুষের জন্য কাজ করা, একজন রাজনৈতিক নেতার কাজ। সেটা মাথায় রাখতে হবে। মহান অর্জনের জন্য আত্মত্যাগ দরকার।’

Next Post

কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই রাজশাহীর ১৯ ইউনিয়নে ভোট গ্রহণ চলছে

বুধ জানু. ৫ , ২০২২
নিজস্ব প্রতিনিধিঃ পঞ্চম ধাপে আজ বুধবার রাজশাহীর তিনটি উপজেলার ১৯ ইউনিয়নে ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। রয়েছে বাগমারা উপজেলার ১৬টি, পুঠিয়ার দুইটি ও দুর্গাপুর উপজেলার একটি ইউনিয়ন। সকাল আটটা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়ে বেলা ৩ টা পর্যন্ত কেন্দ্রগুলোতে কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। নির্বাচন সংশ্লিষ্টরা বলছেন- কেন্দ্রগুলোতে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটগ্রহণ […]

Chief Editor

Johny Watshon

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat. Duis aute irure dolor in reprehenderit in voluptate velit esse cillum dolore eu fugiat nulla pariatur

Quick Links