আভা ডেস্কঃ মোংলার চৌরিডাঙ্গা আহমাদিয়া দাখিল মাদ্রাসার ২২ শিক্ষার্থীর দাখিল পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে। শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা কেন্দ্রের প্রবেশপত্র না দিয়ে মাদ্রাসা সুপার আত্মগোপন করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ অবস্থায় শনিবার দুপুরে মোংলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন ক্ষুব্ধ অভিভাবকসহ মাদ্রাসার শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। শিক্ষা বোর্ড থেকে পরীক্ষার প্রবেশপত্র সংগ্রহে মাদ্রাসা সুপার ও সভাপতির অবহেলা ও খামখেয়ালীপনার অভিযোগ করেন তারা। আর এ বিষয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দপ্তরে মাদ্রাসা সুপার মাওলানা জালাল উদ্দিনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে।
একই মাদ্রাসার সহকারী সুপার আব্দুল হালিম লিখিত অভিযোগে জানান, চলতি মাসের ৩ ডিসেম্বর শুরু হতে যাওয়া ২০২০ সালের দাখিল পরীক্ষার্থী ছাত্র-ছাত্রীদের প্রবেশপত্র এক সপ্তাহ আগে দেয়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত তা দেয়া হয়নি। এতে পরীক্ষার্থীরা ও তাদের অভিভাবকরা হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন।
অপরদিকে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের চাপের মুখে আত্মগোপন করেছেন সভাপতি মো. জাহাঙ্গির হাওলাদার ও মাদ্রাসা সুপার মাওলানা জালাল উদ্দিন। এ মাদ্রাসা থেকে চলতি বছর ২২ শিক্ষার্থী দাখিল পরীক্ষায় অংশ নেয়ার কথা। কিন্তু তাদের কেউই এখন পর্যন্ত প্রবেশপত্র পায়নি। আগামীকাল সোমবার এসএসসি দাখিল ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হবে। আজ রোববারের মধ্যে ওই ২২ শিক্ষার্থী প্রবেশপত্র হাতে না পেলে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না বলে জানান মাদ্রাসার অন্য শিক্ষকরা। এ অবস্থায় হতাশার মধ্যে পড়েছে পরীক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা।
ওই মাদ্রাসার পরীক্ষার্থী সুমাইয়া আক্তারের বাবা শওকাত শেখ মেয়ের শিক্ষা জীবন অনিশ্চয়তা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, দুর্নীতিবাজ মাদ্রাসা সুপার ও সভাপতি কোমলমতি ছেলে মেয়েদের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে। প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে সভাপতি কিন্তু তার কাছে গেলে তিনি কিছুই জানেন না বলে জানান। আমার মেয়ে পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করতে না পারলে তাদের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করব।
এদিকে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা জানান, পরীক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন থেকে শুরু করে ফর্মপূরণ ও প্রবেশপত্র সংগ্রহের নামে কয়েক দফায় হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নেন মাদ্রাসা সুপার। এ ছাড়া ভিন্ন কৌশলে পরীক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের কাছ থেকে নগদ অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে তাদের বিরুদ্ধে।
পরীক্ষার্থী মুজাহিদ হাওলাদার জানায়, মাদ্রাসার সুপার ইচ্ছাকৃত ভাবে তার বাবার নাম রেজিস্ট্রেশনে ভুল লিখে শিক্ষা বোর্ডে পাঠান। পরে ভুল লেখা নামের সংশোধন ও সঠিক করতে তার কাছ থেকে ৩ হাজার ৫শ’ টাকা নেয়া হয়। একই ভাবে আয়শা আক্তার নামের অপর এক শিক্ষার্থীর কাছে থেকে ২ হাজার ৫শ’ টাকা আদায় করেন মাদ্রাসা সুপার মাওলানা জালাল উদ্দিন।
এ প্রসঙ্গে মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম জানান, তার বিরুদ্ধে অভিযোগ মিথ্যা। তবে পরীক্ষার্থীদের প্রবেশপত্র ইস্যুতে গত বৃহস্পতিবার ৩০ জানুয়ারি মাদ্রাসা ম্যানেজিং কমিটির জরুরি সভা হয়।
এ সময় সুপার মাওলানা জালাল উদ্দিন মাদ্রাসা ও সভায় উপস্থিত হননি। উদ্বুদ্ধ পরিস্থিতিতে সুপার আত্মগোপন করেছেন বলেও জানান তিনি।
সভাপতি আরও বলেন, মাদ্রাসার জমি দখল, বিক্রি এবং অন্যত্র ইজারা প্রদানসহ নানা কৌশলে মাদ্রাসার লাখ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে সুপার মাওলানা জালাল উদ্দিনের বিরুদ্ধে। এ সব অভিযোগের ভিত্তিতে ম্যানেজিং কমিটির সভায় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়।
এ বিষয়ে জানতে মাদ্রাসা সুপারের সঙ্গে দফায় দফায় মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রাহাত মান্নান জানান, চৌরীডাঙ্গা মাদ্রাসার দাখিল পরীক্ষার প্রবেশপত্র না পাওয়ার বিষয় একটি অভিযোগ পাওয়া গেছে এবং জেলা প্রশাসককেও অবহিত করা হয়েছে। তিনি এ ব্যাপারে বোর্ডে যোগাযোগ করছেন। তাছাড়া অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ারও আশ্বাস দেন নির্বাহী কর্মকর্তা।