নিজস্ব প্রতিনিধিঃ রাজশাহী নগরীর বাসিন্দা আসমা খাতুন। বাড়ি তৈরী করার জন্য একটি ব্যাংক থেকে ৯৫ লাখ টাকা ঋণ নিচ্ছেন। চলতি গত ২ ডিসেম্বর একটি ওই ঋণটি পাশ হয় তাঁর। কিন্তু সাবরেজিষ্ট্রি অফিসের মাধ্যমে ওই ব্যাংকে জমি বন্ধক দলিল সম্পাদন না করতে পারায় সেই টাকা আজো হাতে পাননি আসমা খাতুন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, রাজশাহী সদর সাবরেজিষ্ট্রার জমিনুল হক হঠাৎ করে অফিস করছেন না। এতে করে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন আসমা খাতুনসহ শত শত জমির মালিক। শুধু আসমা খাতুনই নন, তাঁর মতো শত শত জমির মালিক সাবরেজিষ্ট্রি অফিসের মাধ্যমে জমির দলিল সময়মতো সম্পাদন না করতে পারায় ব্যাপক ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন মানুষ। আবার জমি রেজিষ্ট্রি করতে গিয়েও পদে পদে ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। কোথাও কোথাও বাড়িত অর্থ আদায় করা হচ্ছে নানা ছলে-বলে কৌশলে।
অভিযোগ উঠেছে, এইভাবে বাড়তি অর্থ আদায় করতে গিয়েই বিপাকে পড়েছেন রাজশাহী সদর সাবরেষ্ট্রার জামিনুল হক জৈনক এক ব্যক্তির নিকট থেকে তিনটার পরে জমি রেজিষ্ট্রি হবে না বলে দাবি করে ৪০ হাজার টাকা ঘুষ নেন। এরপর ওই ব্যক্তির জমির দালিল সম্পাদন করেন। কিন্তু জৈনক ওই ব্যক্তিটি হলেন সরকারি একজন উর্দ্ধতন কর্মকর্তা। জমির দলিলটি সম্পাদনের পর তিনি বিষয়টি নিয়ে চেপে ধরেন সাব রেজিষ্ট্রার জামিনুল হককে। এরপর ভয়ে আর অফিস করছেন না ওই সাবরেজিষ্ট্রার।
সদর সাবরেজিষ্ট্রি অফিসের একাধিক দলিল লেখক বলেন, ‘এই রেজিষ্ট্রারের অত্যাচারে আমরা অতিষ্ঠ ছিলাম। টাকা ছাড়া তিনি কোনো কাজ করেন না। কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে হঠাৎ করে আর অফিস করছেন না। শুনেছি একটি জমির দলিল সম্পাদনকে কেন্দ্র করে ঝামেলা হয়েছে এ কারণে তিনি অফিসে আসছেন না। তাঁর পরিবর্তে রাজশাহীর পবা উপজেলা সাবরেজিষ্ট্রি অফিসের সাবরেজিষ্ট্রার বাদল কৃষ্ণ বিশ্বাস সপ্তাহে একদিন এসে দলিল সম্পাদন করে যাচ্ছেন। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন জমির মালিকরা।’
দলিল লেখকরা জানান, অনেকেই সময়মতো দলিল সম্পাদন না করতে পেরে জমি বিক্রি করা টাকা হাতে না পেয়ে বা ব্যাংকে বন্ধক রেখে ঋণ না নিতে পেরে অসহায়ের মতো ঘুরছেন।
এদিকে রাজশাহী নগরীর তেরোখাদিয়া এলাকার বাসিন্দা আবু তাহের বলেন, ‘এই সাবরেজিষ্ট্রি অফিসে দলিল সম্পাদন করতে গেলেই নানা ফাঁদ পেতে অর্থ আদায় করেন দলিল লেখকরাও। অনেকটা জিম্মি করেই অর্থ আদায় করা হয়। ফলে একেকটা দলিল অতিরিক্ত ১০-৫০ হাজার বা লক্ষাধিক টাকা ব্যয় করতে হয় জমির মালিকদের। এই টাকার ভাগ সাবরেজিষ্ট্রাররাও পেয়ে থাকেন।’
এ নিয়ে গতকাল সাবরেজিষ্ট্রার জামিনুল হকের সঙ্গে বার বার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। তাঁর ব্যবহৃত ফোনটি বন্ধ পাওয়া গেছে।
অন্যদিকে পুঠিয়ার সাবরেজিষ্ট্রার একেএম মীর হাসান একটি প্রশিক্ষণের জন্য সিঙ্গাপুরে গেছেন। তাঁর অনুপস্থিতিতে সপ্তাহে একদিন এসে এখানে জমির দলিল সম্পাদন করছেন দুর্গাপুরের সাবরেজিষ্ট্রার। পুঠযার বাসিন্দা সোলাইমান হোসেন বলেন, ‘তিনি একটি জমি বিক্রি করেছেন। কিন্তু গত ১০-১২দিন ধরে সেই জমির দলিল সম্পাদন না করতে পারায় তিনি জমি বিক্রির টাকাও হাতে পাচ্ছেন না। এতে করে জরুরী ব্যবসার কাজে টাকার প্রয়োজন হলেও তিনি সেই টাকা হাতে না পেয়ে বিপাকে পড়েছেন দলিল সম্পাদন না হওয়ায়। আগামী ১৯ ডিসেম্বর দুর্গাপুরের সাবরেজিষ্ট্রার পুঠিয়াতে গিয়ে দলিল সম্পাদন করে দেওয়ার কথা রয়েছে। ওইদিন হয়তো আমার দলিলটি সম্পাদন হবে।’
এদিকে জেলার তানোরেও দলিল সম্পাদনে চরম ভোগান্তির অভিযোগ রয়েছে। সাব-রেজিষ্ট্রার সাজ্জাদুল কবির এ এখানকার দলিল লেখকদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। এ নিয়ে সম্প্রতি কয়েকজনভূক্তভোগীদের অভিযোগ নিয়ে একটি অনুসন্ধানী খবরও প্রকাশ হয়।
একই অবস্থা বিরাজ করছে জেলার বাঘা, পুঠিয়া, চারঘাট, বাগমারা গোদাগাড়ী ও মোহনপুর ও পবাতেও। জেলার প্রায় প্রত্যেকটি সাবরেজিষ্ট্রি অফিসেই জিম্মি হয়ে পড়ছেন সাধারণ মানুষ। কিন্তু এ নিয়ে প্রশাসন যেন একেবারেই নিরব ভূমিকা পালন করছে।
তবে জেলা প্রশাসক হামিদুল হক বলেন, ‘জমির দলিল সম্পাদন নিয়ে ভোগান্তির কোনো অভিযোগ পেলেই আমরা তদন্ত করে ব্যবস্থা নিব। কাউকে এ নিয়ে বাণিজ্য বা অনিয়ম করতে দেওয়া হবে না।’
সিল্কসিটি নিউজ