রাজশাহীতে শ্রম আইন বাস্তবায়ন না থাকলেও চালু আছে মাসোহারা

নিজস্ব প্রতিনিধি, রাজশাহীঃ রাজশাহীতে শ্রম আইন বাস্তবায়ন নাই বললেই চলে। শ্রম আইন বাস্তবায়ন কারী প্রতিষ্ঠান কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের অবহেলায় শ্রমিকদের অধিকার খর্ব হচ্ছে। তবে শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠানটিও মালিকদের কাছে মাসিক মাসোহারায় বিক্রি। আইন বাস্তবায়ন না হওয়ায় শ্রমিকদের নেই পর্যাপ্ত নিরাপত্তা, নেই চাকুরির নিশ্চয়তা, নিয়োগপত্র,  ছবিসহ পরিচয় পত্র, সার্ভিস বুক, হাজিরা রেজিস্ট্রার, ছুটি রেজিস্ট্রার, মজুরি রেজিস্ট্রার, ওভার টাইম রেজিস্ট্রার, সাপ্তাহিক ছুটি, উৎসব ছূটি, পীড়া ছুটি। রাজশাহীতে শ্রমিক ইউনিয়নগুলো এ সকল দাবি দাওয়া নিয়ে কাজ করলে বা দাবি তুললে তাদের চাকুরিচ্যুত করা হুমকি দেন প্রতিষ্ঠান মালিকরা। দাবি নিয়ে ইউনিয়ন কাজ করলে শ্রমিকদের করা হয় নির্যাতন। শ্রমিকদের শ্রম আইন বাস্তবায়নে কাজ করতে গিয়ে মালিক পক্ষের বাধা মুখে পড়েছেন অনেকে।

এরকম নানা সমস্যা নিয়ে গত ২০-১২-২১ ইং তারিখে রাজশাহী শহর হোটেল ও রেষ্টুরেন্ট শ্রমিক ইউনিয়ন লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন রাজশাহী কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের উপ-মহা পরিদর্শক বরাবর। ইউনিয়নটির প্যাডে সভাপতি মকলেছুর রহমান ও সাধারন সম্পাদক আব্দুর রহমান স্বাক্ষরিত অভিযোগটি সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরের উচ্চ পদস্ত কর্মকর্তাদের দেওয়া হয়েছে। লিখিত অভিযোগ দেওয়া হলেও কার্যকর কোন ব্যবস্থা গ্রহন করেননি সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ।

অনুসন্ধানে অন্যান্য শ্রমিক ইউনিয়নগুলো অবস্থাও একই বলে জানা যায়। মালিক পক্ষের নেতারা কিছুটা কোণঠাসা করে শ্রমিকদের অধিকার খর্ব করেই চলেছে। হোটেলগুলোতে নেই সাপ্তাহিক ছুটি, ছুটির দিনেও খোলা থাকছে দোকানপাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। নজরদারি নেই কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের। এমনটাই দেখা যায় গত শুক্রবার রাজশাহী নিউ মার্কেট  এলাকার মোবাইল দোকানগুলোতে। বন্ধের দিনেও অধিকাংশ দোকান খোলা রেখেছেন তারা। খোলা রয়েছে নগরজুড়ে দোকানপাট ও কলকারখানা।  এদিকে নগরীর খাবার রেস্তোরাঁগুলো ঘুরে দেখা যায় শ্রম আইন বাস্তবায়নে কোন বালাই নেই। বরং ঐ সকল হোটেলে শ্রমিকদের আইন বহির্ভূত কাজ ও  নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া যায়।

অভিযোগ আছে দীর্ঘদিন ধরে রাজশাহী কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরে কর্মরত কিছু পরিদর্শক মাসিক মাসোহারা নিয়ে আইন বাস্তবায়নে কাজ করছেন না। ৫ বছর যাবৎ আছে পরিদর্শক তারেক।  সে তার পরিদর্শন এলাকার প্রতিটি প্রতিষ্ঠান থেকে মাসিক মাসোহারা নেন। তাঁর এলাকার কোল্ডস্টোর গুলোতে শ্রমিকরা ৮০ কেজির বস্তা ধারণ করছেন। আইনে ৫০ কেজির বেশি বস্তা ধারণ করা যাবে না। অথচ শুধু মাত্র মাসিক মাসোহারার কারণে জুট মিল সহ বিভিন্ন গ্রুপ অফ কম্পানিগুলোতে মোটা অংকের উৎকোচ নিয়ে শ্রমিকদের অধিকার খর্ব করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে রাজশাহী কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরে এ সকল বিষয়ের উপর বারংবার তাগাদা দেওয়ার পরও কোন ব্যবস্থা না নেওয়ায় হেড অফিস থেকে শোকজ নোটিশ প্রদান করেছেন।

বিশ্বাস্ত একটি সুত্র নিশ্চিত করেন, শ্রম আইন বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠানের পরিদর্শকরা মালিক পক্ষে নিকট অনৈতিক সুবিধা নিয়ে তাদের পক্ষে কাজ করছেন। মালিকদের বিপক্ষে বা বিরুদ্ধে কথা বলা শ্রমিকদেরও চাকুরিচ্যুত করা হয়। বিধায় কেউ মুখ খুলতে চায় না। এতে করে শ্রমিকরা দারুণভাবে নির্যাতিত ও নিপীড়ন শিকারসহ সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

রাজশাহী কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের কর্মরত নারী পরিদর্শক নাসরিন আক্তার চাকুরীর শুধু থেকে দীর্ঘ ৭ বছর যাবৎ  এক জায়গায় আছেন। তিনিও ঠিকমত কাজও করেন না মাঠে। তাঁর পরিদর্শন এলাকায় কোন শ্রম আইন বাস্তবায়ন নাই বললেই চলে। তিনিও মাসিক মাসোহারা নেন প্রতিটি প্রতিষ্ঠান থেকে। এর সাথে যুক্ত হয়েছেন সদ্য যোগদানকৃত পরিদর্শক ইলিয়াস হাইদার।

এদিকে রাজশাহী কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের উপ মহা পরিদর্শক আরিফুল ইসলামের বিরুদ্ধে উঠেছে নানা অভিযোগ।  প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে ৩ মাস ও ৬ মাস এমনকি ১ বছর চুক্তিতে মাসোহারা নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে তার বিরুদ্ধে। ইতিমধ্যে তিনি মন্ত্রীর ভাতিজির বিবাহের অনুষ্ঠান উপলক্ষে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে চাঁদা নিয়েছেন। তিনি নিয়ম বর্হিভূত ভাবে অফিসের ২য় তলায় ভাড়া থাকছেন।

কথা বললে পরিদর্শক তারেক (সাধারণ) ফোনে বলেন, আমি কোন মাসিক মাসোহারা নেই না। ৫০ কেজির বেশি বস্তা ধারণাকারী কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে নোটিশ দেওয়া হয়েছে। গত তিন মাসে কয়টি মামলা দিয়েছেন বলে জানতে চাইলে তিনি বলেন একটি মামলা হয়েছে।

এ বিষয়ে কথা বলতে উপ মহা পরিদর্শক আরিফুল ইসলাম কে সাংবাদিক পরিচয়ে ফোন দিলে তিনি বলেন, আমি কোর্টে আছি। বিকাল ৩ টার পরে ফোন দেন। ৩ টার পরে একাধিকবার ফোন দিলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

Next Post

প্রতিমন্ত্রী জানালেন কেন সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স বাড়ানো হচ্ছে না

মঙ্গল এপ্রিল ৫ , ২০২২
আভা ডেস্কঃ জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেছেন, সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স বাড়ানোর কোনো পরিকল্পনা নেই। জাতীয় সংসদে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রশ্নোত্তরে এ কথা বলেন প্রতিমন্ত্রী। বয়সসীমা কেন বাড়ানো হচ্ছে না, তা-ও বলেন তিনি। সরকারি দলের সাংসদ হাবিবে মিল্লাতের প্রশ্নের জবাব দেন প্রতিমন্ত্রী। প্রতিমন্ত্রী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বড় […]

Chief Editor

Johny Watshon

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat. Duis aute irure dolor in reprehenderit in voluptate velit esse cillum dolore eu fugiat nulla pariatur

Quick Links