রাজশাহীতে করোনা প্রতিরোধে বিধিনিষেধ রাতে, দিনে নয়

নিজস্ব প্রতিনিধিঃ রাজশাহীতে করোনারোধে চলছে জেলা প্রশাসক কতৃক কঠোর বিধি-নিষেধ। আজ ৬ জুন বিধি-নিষেধের ৪র্থ দিন।

তবে কঠোর বিধি-নিষেধ অনুযায়ী রাজশাহীর রাতের চিত্রে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে থাকলেও দিনের চিত্র ছিল একেবারেই ভিন্ন। গণপরিবহন, শপিংমল ও মার্কেট চলছে। প্রয়োজন-অপ্রয়োজনে বাইরে বের হচ্ছে মানুষ। ফলে বেড়েই চলেছে সংক্রমনের ঝুঁকি।

বিধিনিষেধ অনুযায়ী জানা গেছে, রাজশাহীতে শপিংমলসহ অন্যান্য দোকানপাট বন্ধ থাকবে। সন্ধ্যা ৭টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত অতি জরুরি প্রয়োজন ব্যতীত বাড়ির বাইরে যাওয়া যাবে না। আর বাধ্যতামূলক মাস্ক পরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কথা বললেও তাতে ভ্রুক্ষেপই নেই মানুষের। ফলে নামে চলছে কঠোর বিধি-নিষেধ।

তবে দিনের বেলায় বিধি-নিষেধ মানার বালাই চোখে না পড়লেও সন্ধ্যা নামার পরই তা মেনে চলছেন অনেকেই। ফলে রাত নামলেই রাজশাহীর চিত্র পাল্টে যাচ্ছে। সন্ধ্যা ৭টা থেকে ৯টার মধ্যেই রাজশাহীর সড়ক, অলি-গলিতে নেমে আসছে সুনসান নীরবতা। জনসাধারণের যাতায়াত একেবারে কম চোখে পড়ছে।

রাজশাহী নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বিধি-নিষেধ অনুযায়ী সন্ধ্যা নামলেই রাজশাহীর রাস্তাঘাটে দেখা গেছে সুনসান নীরবতা। ফাঁকা রাস্তায় ছুটছে পণবাহী ট্রাক। মোড়ে মোড়ে রিকশাচালক যাত্রীর অপেক্ষা করলেও দেখা নেই। এছাড়া কঠোর অবস্থানে দেখা গেছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের। নির্দেশনা অনুযায়ী তারা সন্ধ্যার পর জনসমাগম এড়াতে মাইকিং করে স্বাস্থবিধি মানাতে ও বাড়ি বাড়ি চলে যেতে বলছেন।

এদিকে, কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার প্রভাব নেই দিনের বেলায়। রাজশাহী নগরীর সাহেব বাজারসহ বিভিন্ন মার্কেট থাকছে খোলা। রাস্তায় যেমন  থাকছে জনসমাগম তেমনেই থাকছে যানবাহনের উপস্থিতি। আর সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন এলাকা হয়ে রাজশাহীতে প্রবেশ করছে চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলা-উপজেলার মানুষ। আর গণপরিবহন চালু থাকায় আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে রাজশাহী হয়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এখনো প্রবেশ করছেন তারা। ফলে রাজশাহীতে রাতে কড়াকড়ি বিধি-নিষেধ মানা হলেও, দিনের বেলায় রয়েছে করোনা সংক্রমনের ঝুঁকি।

 

আর এবার করোনায় খেটে খাওয়া মানুষে পাশে দাঁড়াতে তেমন দেখা যায়নি সমাজের সমৃদ্ধশালী ব্যাক্তিদের। ফলে এসব খেটে খাওয়া মানুষের আগে খাবার ব্যবস্থা করে করে কঠোর লকডাউন বা স্বাস্থ্যবিধি দিতে সরকারের কাছে অনুরোধ জানান তারা।

আর মানুষ সচেতন না হলে লকডাউন কিংবা বিধিনিষেধ যতই আরোপ করা হোক না কেন, তা কোনো কাজে আসবে না। মানুষের এমন উদাসীনতার কারণে আমাদের সবাইকে মূল্য দিতে হবে। বিধিনিষেধ আরোপের ফলে সাময়িক একটু কষ্ট হলেও অন্তত জীবনটা রক্ষা হবে। এই বোধ থেকে আমাদের সবাইকে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা উচিত বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

এদিকে, সীমান্তবর্তী জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জের পর এবার করোনায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে বিভাগীয় শহর রাজশাহী। প্রতিদিনই বাড়ছে সংক্রমণ, করোনা শনাক্তের হার প্রায় ৫০ শতাংশের কাছে। প্রতিদিনই রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের করোনা ইউনিটে ঘটছে মৃত্যুর ঘটনা। শনিবার সকাল ৮টা থেকে আজ রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় এই হাসপাতালে ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। মৃতদের মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জের তিনজন, নাটোরের একজন, চুয়াডাঙ্গার একজন এবং রাজশাহীর একজন রোগী ছিলেন।

এর আগে গত শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে শনিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত হাসপাতালে আটজনের মৃত্যু হয়। এছাড়া বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত সর্বোচ্চ ১৬ জনের মৃত্যু হয়।

এমন উদ্বেগজনক পরিস্থিতিতে করোনা মোকাবিলায় নিম্ন আয়ের মানুষকে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করে রাজশাহীতে ‘কঠোর লকডাউন’ দেওয়ার দাবিতে শনিবার (৫ জুন) বিকেলে রাজশাহী জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিলের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন ১৪ দলীয় জোটের রাজশাহীর নেতারা।

তারা কেবল রাতের বেলায় রাজশাহীতে বিধিনিষেধ জারিকে অপর্যাপ্ত বলে উল্লেখ করেন এবং সম্পূর্ণ  লকডাউনের জন্য জেলা প্রশাসককে অনুরোধ জানান।

জবাবে জেলা প্রশাসক বলেন, নগর পুলিশ ও সিটি মেয়র যদি রাজি থাকেন এবং কঠোর লকডাউন কার্যকরে ভূমিকা রাখেন তাহলে লকডাউন দিতে তার কোনো আপত্তি নেই।রাজশাহী জেলা প্রশাসক আরও বলেন, কঠোর লকডাউন দিলে ১৫ হাজার রিকশাচালক, ১ লাখ বস্তিবাসীর দায়িত্ব কে নেবে? ২০০০ কোটি টাকার আম ব্যবসার কী হবে? তাদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া কীভাবে সম্ভব? কঠোর লকডাউন দিতে হলে কাঁচাবাজারসহ সবই বন্ধ করতে হবে। এছাড়া সম্পূর্ণ লকডাউন সম্ভব নয় বলে উল্লেখ করেন তিনি।

১৪ দলের নেতারা সম্মিলিত উদ্যোগের কথা বললে জেলা প্রশাসক সমন্বয় সভার প্রস্তাব দেন। সেই অনুযায়ী আজ রোববার (৬ জুন) বেলা ৩টায় সিটি মেয়র, সংসদ সদস্য, ডিসি, পুলিশ কমিশনার, এসপি, সিভিল সার্জন ও ১৪ দলের নেতাদের বৈঠকের সিদ্ধান্ত হয়। সেখানে সমন্বিত আলোচনার পর ‘কঠোর লকডাউন’ প্রশ্নে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে বলেও জানান জেলা প্রশাসক।

Next Post

পরিবেশ দিবসে বগুড়ায় গাছ লাগালেন ছাত্রলীগ

রবি জুন ৬ , ২০২১
বগুড়া প্রতিনিধিঃ বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে বগুড়া শহর ছাত্রলীগ নেতা কাওছার আহমেদ জয় এর উদ্যোগে সরকারি আজিজুল হক কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক ভবনে ফলজ,  বনজ ও ঔষধি ১০টি গাছ লাগানো হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বগুড়া শহর ছাত্রলীগ নেতা সৈকত হোসেন লালন, রাফিউল ইসলাম পারভেজ, সিজান খলিফা, আব্দুল্লা আল যোহা, সৌরভ, […]

এই রকম আরও খবর

Chief Editor

Johny Watshon

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat. Duis aute irure dolor in reprehenderit in voluptate velit esse cillum dolore eu fugiat nulla pariatur

Quick Links