নিজস্ব প্রতিবেদক : আসন্ন রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে দলীয় কোন্দল আর বিভেদ ভুলে অবশেষে বিএনপির মেয়র প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের পক্ষে মাঠে নামতে শুরু করেছেন নেতাকর্মীরা। ১০ জুলাই (মঙ্গলবার) আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরুর পর থেকে রোববার পর্যন্ত নির্বাচনী মাঠে বুলবুল তেমন নেতাকর্মী নিয়ে নামতে না পারলেও এখন তা আর নেই, সতঃস্ফূতভাবেই মাঠে নেমেছেন নেতা কর্মীরা। অপরদিকে শনিবার থেকে পাল্টে যায় এ দৃশ্যপট। এদিন বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী নিয়ে ব্যাপক প্রচারণা চালিয়েছেন তিনি। দলটির কেন্দ্রের হস্তক্ষেপে দলীয় কোন্দল নিরসন হওয়ায় নেতাকর্মীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নির্বাচনী মাঠে নেমেছেন বলে জানান দলের এক নেতা । এতদিন নির্বাচনী মাঠে আওয়ামী লীগ মেয়র প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের একচেটিয়া আধিপত্য ছিল।
এদিকে ১০ জুলাই আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরুর পর কয়েকদিন কর্মী সংকটের কারণে প্রচারণায় তেমন সুবিধা করতে পারেননি বিএনপির মেয়র প্রার্থী বুলবুল। ধানের শীষের পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুনও সেভাবে দেখা যায়নি রাজশাহীতে। কিন্তু শনিবার থেকে বিএনপি নেতাকর্মীদের কোমর বেঁধে মাঠে নামতে দেখা যাচ্ছে। রোববার ও সোমবার ভোটের প্রচারে নগরীতে রীতিমতো শোডাউন দিয়েছে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এদিকে বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন (রাসিক) নির্বাচনের প্রচারণায় ঘুরে দাঁড়িয়েছেন বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্র্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল। ধানের শীষের এ প্রার্থীকে জেতাতে দলীয় নেতাকর্মীরাও একত্রিত হয়েছেন। ফলে রাজশাহীতে আসন্ন এ নির্বাচনে বিশেষ করে মেয়র পদে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস দিচ্ছে বিএনপি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দলীয় অন্তর্দ্বন্দ্বে কিছুটা সমস্যা ছিল রাজশাহী বিএনপির। সিটি নির্বাচনে এটিই ছিল সরকার দলীয়দের প্রধান হাতিয়ার, কিন্তু তা কেটে উঠতে পেরেছে স্থায়ী বিএনপি । তবে সম্প্রতি দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় গোপনে রাজশাহীতে গিয়ে কয়েকদিন অবস্থান করে সেই অন্তদ্বন্দ মিটিয়ে দিয়েছে । ফলে সকল নেতা কর্মী অভিমান ভুলে একত্র হয়েছেন রাজশাহী জেলা ও নগর বিএনপি । অন্যদিকে রোববার থেকে বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ধানের শীষে ভোট চেয়ে বাড়ি বাড়ি গেছেন। এ সময় বিপুলসংখ্যক দলীয় নেতাকর্মীও তার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ি বাড়ি গিয়ে বুলবুলের জন্য ভোট প্রার্থনা করেন।
জানা গেছে, জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি নাদিম মোস্তফা ইতিমধ্যেই বুলবুলের জন্য ভোট চেয়ে মাঠে নেমেছেন। জেলা বিএনপির সভাপতি তোফাজ্জল হোসেন তপু, সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান মন্টুসহ জেলার যেসব নেতা নানা কারণে বুলবুলের প্রার্থিতার বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করেন, তারাও জোটবদ্ধভাবে বুলবুলের পক্ষে ব্যাপক গণসংযোগ করছেন। বিএনপির একাধিক সূত্র জানিয়েছে, রাজশাহীতে অসম্পূর্ণ নগর ও জেলা কমিটি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই বিরোধ চলে আসছিল বিএনপিতে। সিটি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিরোধের অবসান হল বলে মনে করেন নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল হক মিলন।
এ প্রসঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান মিনু বলেন, রাজশাহীতে বিএনপিতে কোনো বিভেদ নেই, তবে সামান্য মতবিরোধ ছিল তা কেটে গেছে । এখন সব অতীত ভুলে মাঠে কাজ করছেন আসন্ন ৩০ জুলাই নির্বাচনে। মিনু আরও বলেন, রাজশাহীতে বিএনপির নেতাকর্র্মীরা এখন দারুণভাবে উজ্জীবিত। নেতা কর্মীদের মাঝে সরকার দলীয় দেওয়া মামলা হামলা নিয়ে গ্রেপ্তারের পরোয়া না করে তারা যে মাঠে নেমেছে এটাই আমাদের কাছে অনেক বড় পাওয়া।
আসন্ন সিটি নির্বাচনে রাজশাহী বিএনপির ঘাঁটি উল্লেখ করে শাহীন শওকত বলেন ফেয়ার নির্বাচন হলে কোনোদিনই আওয়ামীলীগ রাজশাহীতে জিততে পারবে না। তিনি আরো বলেন এখন সরকার পুলিশ দিয়ে বিএনপির নেতা কর্মীদের মামলা হামলা সহ হয়রানির ভয়ে অনেকেই ইচ্ছা থাকা শর্তেও মাঠে নামতে পারছে না। কিন্তু মনে প্রাণে তারা বিএনপিকে ভালোবাসে আজ তাদের মাঝে গ্রেপ্তার হওয়ার ভয় কাজ করছে, বিধায় অনেকেই আত্ন গোপন করে আছে একাধিক মামলা কাঁধের উপর নিয়ে।
জ/সে