মোহনপুর তেঘর মাড়িয়া গ্রামে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার জাহানাবাদ ইউনিয়নে তেঘর মাড়িয়া গ্রামে আওয়ামী লীগের দু’গ্রুপে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে  সংঘাত- সহিংসতার ঘটনায় রক্তাক্ত জনপদে পরিনত হয়েছে।

গভীর নলকূপ, সরকারি জলাশয়, ঈদগাহ্ ও মসজিদের জমানো টাকার হিসাব নিয়ে দু’গ্রুপের মধ্যে কোন্দলের কারণেই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে বলে জানা গেছে। এতে করে দিন দিন এ এলাকার জনমনে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বাড়ছে। বাড়ছে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনাও।

বর্তমানে হামলা মামলা আতংকে গ্রামটি পুরুষ শূন্য রয়েছে। ৮০/৯০ পরিবারের বসবাস এখানে। গ্রামটি পুরুষ শূন্য থাকায় নারীরা করছেন বিভিন্ন ফসলের পরিচর্যা।

তবে মোহনপুর থানা পুলিশের কর্মকর্তা ওসি বলছেন, তেঘর মাড়িয়া গ্রামে দু’পক্ষের মাঝে বিরাজমান সমস্যা নিরসনে কয়েকবার মিমাংসার উদ্যেগ নেয়া হয়েছে। তারা আর মারামারি গন্ডগোল করবেনা বলে কথা দেয় কিন্তু পরবর্তীতে কথা রাখেনা। সংঘাত-সহিংসতা করে কেউ পার পাবে না। শান্তিপূর্ণ এলাকা যারা উত্তপ্ত করছেন তাদের প্রত্যেককে আইনের আওতায় আনা হবে।

সরজমিনে অনুসন্ধান করতে গিয়ে বেরিয়ে এসেছে থলের বিড়াল।

যার কারণে একের পর এক ঘটনার সুত্রপাত তিনি হলেন, মোহনপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের বিলুপ্ত কমিটির সাবেক কোষাধ্যক্ষ আবু বাক্কার সিদ্দিক। এক সময় তিনি উপজেলা জাতীয় পার্টির সাবেক সাধারণ সম্পাদকও ছিলেন। আবু বাক্কার সিদ্দিকের বড়ো ভাই বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব আব্দুস সাত্তার ২০১৭ সালের ২৫ ডিসেম্বর মারা যাবার পরে গ্রামের একক কর্তৃত্ব হাতে পাওয়ার পর শুরু হয় বাক্কারের রাজত্ব। তিনি একজন দলিল লেখকও বটে।

৩ বছর আগে তেঘর মাড়িয়া উত্তরপাড়া ২নম্বর গভীর নলকূপকে কেন্দ্র করে বাক্কারের সাথে মুনসুরের বিরোধের সুত্রপাত। দলীয় প্রভাব খাটিয়ে ঐ গভীর নলকূপটি দখলে নেয় আবু বাক্কার।

গভীর নলকূপটি তার দখলে নেওয়ার পর কৃষকদের জিম্মি করে একবার ধান চাষ করলে ২ হাজার ৪’শ টাকা হারি আদায় করেন। যেখানে আগে নেওয়া হতো ১ হাজার ৫’শ টাকা।

এভাবে তিনি আওয়ামীলীগ নেতা পরিচয়ে ৩বছর গভীর নলকূপের দ্বায়িত্বে ছিলেন। নলকূপ পরিচালনা কমিটিকে বাৎসরিক হিসাব না দিয়ে ১লাখ ৮০ হাজার টাকা, গ্রামের মসজিদ ও মন্দিরের নামে ৩ টি জলাশয় লীজ নিয়ে গত পাঁচ বছরের পুকুর লীজের ১৫ লাখ টাকা, তেঘর মাড়িয়া ইদগাহ্ কমিটির সভাপতি হয়ে বার্ষিক জালসার আদায়কৃত ২ বছরের ৫লাখ ৩৩ হাজার টাকা জনগণকে হিসাব না দিয়ে টাকাগুলি  আত্মসাত করেছেন বলে অভিযোগ করেন এলাকাবাসী। হিসাব চেয়ে না পাওয়ার কারণেই আ’লীগের মুনসুরগ্রুপসহ সাধারণ জনগণ আবু বাক্কার সিদ্দিকের উপর চরমভাবে ক্ষিপ্ত হয়েছেন। সাধারণ জনগণ গভীর নলকূপের পানি সেচ বাবদ বেশি টাকা আদায় করায় বাক্কারের বিরোধিতা করেন এবং গভীর নলকূপটি বাক্কারের হাত থেকে ছুটে যায়। জনগণ গভীর নলকূপটির দ্বায়িত্ব দেয় আ’লীগ নেতা মুনসুরকে।   ক্ষোভে ফুঁসে উঠে বাক্কারগ্রুপ। গত ১৫ জুন তেঘর মাড়িয়া গ্রামের শ্রী উপেন্দ্রনাথ সাহা’র ছেলে শ্রী নিখিল চন্দ্র শাহা তার জমিতে নতুন বাড়ির বুনন কাটার সময় মুনসুরের ছেলে জমি মাপ করার পরে বাড়ি করতে হবে বলে কাজে বাঁধা দিলে বাক্কার ও মুনসুর গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এবিষয়ে থানায় একটি মামলা হলে ৩জন আসামীকে আটক করে পুলিশ। এ মামলায় মুনসুরসহ অন্যান্যরা আদালত হতে জামিন নেয়। পরিস্থিতি আরো বেগতিক হতে থাকে। ঘটনার রেশ ধরে গত ১৬ আগষ্ট  জাহানাবাদ ইউপি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রানা হোসেন বিদ্যুৎ, সহ-সভাপতি বেলাল, রনি, এক নম্বর ওয়ার্ড আ’লীগের সেক্রেটারি কাজেম, কামরুল, ইউপি স্বেচ্ছাসেবক লীগের জাকিরসহ কয়েকজনের উপর হামলা চালায় মুনসুর গ্রুপের লোকজন। এঘটনায়ও থানায় মামলা হয়েছে।

জাহানাবাদ ইউপি চেয়ারম্যানসহ দলীয় নেতৃবৃন্দ দু’গ্রুপের মধ্যেকার বিবাদ নিরসনে উদ্যেগ গ্রহণ করে।  এ উদ্যেগকে সাধুবাদ জানায় মোহনপুর থানা পুলিশ। এদিকে মিমাংসায় বসবে উপজেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা এ কথা বলে মিমাংসায় দিন ঠেলতে থাকে বাক্কার।

গত ১২ সেপ্টেম্বর সকালে আবু বাক্কারকে পিটিয়ে আহত করে মুনসুর গ্রুপের লোকজন। এঘটনায় আবু বক্কর গুরুতর আহত হয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধিন রয়েছেন। শারিরীক পরীক্ষা নীরিক্ষায় জানা গেছে তার শরীরের ৫টি অঙ্গ ভেঙ্গে গেছে।

ঘটনার পর পরই বাক্কারের লোকজন মাইরের পরিবর্তে মাইর দিতে হবে বলে মুনসুর গ্রুপের সদস্য রুহুলের বাড়িতে হামলা চালিয়ে আসবাবপত্র ফ্রিজ, টেলিভিশন, পানির পাম্প, মোটর সাইকেল ভাংচুর করে এবং জমির মুল দলিলপত্র ও সমিতির কাগজপত্র নিয়ে চলে যায়। এছাড়াও রাজ্জাকের বাড়িতে হামলা চালিয়েছে তারা বলে জানান ভুক্তভোগী ও তার পরিবার।

গত ১৪ সেপ্টেম্বর বুধবার বাক্কার গ্রুপ দেশীয় অস্ত্র দিয়ে মুনসুর গ্রুপের সুরুজ মাল এর উপর হামলা করলে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভর্তি করে পরিবার। ১৬ সেপ্টেম্বর শুক্রবার সকালে আবারো বাক্কার গ্রুপ আবু তাহের এর উপর চাইনিজ কুড়াল দিয়ে মাথায় কুপিয়ে ৭ জায়গা ও দুই পায়ে হাঁসুয়া দিয়ে কুপিয়ে ৪ জায়গায় জখম করে। জখমী জায়গায় মোট ৮০টি সেলাই পড়েছে। সে রামেক ৮ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

বাক্কার গ্রুপও আহত হয়েছেন। তারা হলেন বেলাল, আমিনুল, সবুজ, মেরাজুল সহ ৭/৮ জন। সবুজ ও মেরাজুল রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।

প্রতিদিনের ঘটনায় মোহনপুর থানা পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেন। পুলিশ চলে আসলে আবার পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়। সেকারণে মোহনপুর থানা পুলিশ  কয়েক জনকে আটক করে থানায় নিয়ে আসেন এবং জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ঘটনায় সম্পৃক্ত না থাকায় ছেড়ে দেন।

এবিষয়ে জাহানাবাদ ইউপি চেয়ারম্যান হযরত আলী বলেন, ইতোপুর্বে মোহনপুর থানা পুলিশসহ আমি দু’পক্ষকে নিয়ে কয়েকবার দু’পক্ষের বিরোধ নিরসনের চেষ্টা করেছি। তারা মেনে নেয় আবার কিছুদিন পর সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।

আমি শান্তির লক্ষে উভয় পক্ষের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ রক্ষা করছি দু’পক্ষ চাইলে বিবাদমান সমস্যার সমাধান করা হবে।

এদিকে তেঘর মাড়িয়া গ্রামের সোনা উল্লাহ’র ছেলে পানচাষী রফিকুল ইসলাম বলেন, বাক্কারের লোকজন তার পান বরজ হতে দু’বারে ৪০ হাজার টাকার পান ভেঙ্গে নেন। এঘটনায় তিনি থানায় লিখিত অভিযোগ দিলে পান বরজটি পরিদর্শন করেন মোহনপুর থানার এসআই আলহাজ উদ্দিন।

অনুসন্ধানের আরো জানা গেছে, বাক্কার ও মুনসুর গ্রুপের মধ্যে একের পর বিরোধ সৃষ্টি হওয়ায় নিজ বাড়ি ছেড়ে তেঘর মাড়িয়া গ্রামের শ্রী উপেন্দ্রনাথ সাহা’র ছেলে শ্রী নিখিল চন্দ্র শাহা বউ ছেলে গরু ছাগলসহ আসবাবপত্র নিয়ে তানোর উপজেলার কামার গাঁ ইউনিয়নের গাংঘাটি নামক স্থানে বসবাস করছেন।

এ বিষয়ে মোহনপুর থানা কর্মকর্তা (ওসি) মোহা.তৌহিদুল ইসলাম বলেন, তেঘরমাড়িয়া গ্রামে শান্তি শৃংখলা রক্ষায় একটি কমিটি রয়েছে। কমিটির লোকজনের ব্যর্থতার কারণে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে।

কয়েকদিন আগে দু’পক্ষের বিরোধ নিয়ে থানায় বসার কথা ছিল। কিন্তু বাক্কারের কারণে বসা হয়নি। হঠাৎ বাক্কারের উপর হামলায় একটি অভিযোগ দায়ের হয়। এঘটনায় পুলিশ আসামীদের ধরতে অভিযান চালাচ্ছেন।

তিনি আরো বলেন, শুক্রবার হঠাৎ করে মারামারির ঘটনা ঘটলে পরিস্থিতি শান্ত করতে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে কয়েক জনকে পুলিশ আটক করেছিল। মারামারির সাথে তাদের সম্পৃক্ততা না পাওয়ায় ছেড়ে দেয়া হয়েছে। ঘটনার পর থেকে ওই এলাকায় পুলিশী টহল ও নজরদারী অব্যাহত রয়েছে।

Next Post

ডাঃ চিন্ময় দাসের সহধর্মিণী কমলিনী গোলদার এঁর মৃত্যুতে রাজশাহী মহানগর যুবলীগের শোক প্রকাশ

মঙ্গল সেপ্টে. ২০ , ২০২২
আভা ডেস্কঃ রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ, রাজশাহী জেলার সভাপতি ডাঃ চিন্ময় দাস এঁর সহধর্মিণী এবং রাজশাহী মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি ডাঃ মনন দাস এর মাতা কমলিনী গোলদার এর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ, রাজশাহী মহানগর শাখার সভাপতি মোঃ রমজান […]

Chief Editor

Johny Watshon

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat. Duis aute irure dolor in reprehenderit in voluptate velit esse cillum dolore eu fugiat nulla pariatur

Quick Links