মোহনপুরে গ্রাহকদের অর্ধ কোটি টাকা নিয়ে উধাও ডাচ্-বাংলা ব্যাংক এজেন্ট

মোহনপুর প্রতিনিধি: রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার মৌগাছি বাজারে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক এর এজেন্ট মেসার্স সরকার ফার্মেসী গ্রাহকদের প্রায় অর্ধ কোটি টাকা ব্যাংক হিসাবে জমা না করে আত্মসাৎ এর অভিযোগে লাপাত্তা হয়েছেন।

এজেন্ট শাহিনের বিরুদ্ধে টাকা আত্মসাত, লাখ টাকায় প্রতিদিন ২ হাজার টাকা সুদ গ্রহন, গ্রাহক হয়রানি ও সুদের টাকা উঠাতে আদালতে মামলা করে ব্যবসায়ীদের সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিসাধন,

সুদের টাকা দিতে না পেরে এলাকা ও ব্যবসা ছেড়েছেন অনেক ব্যবসায়ী এরকম অভিযোগ রয়েছে। বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধি ও ব্যাংকের উর্ধতন কর্তৃপক্ষ জানলেও কার্যকর কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে দেখা যায়নি।

মঙ্গলবার (২৮ মার্চ) সকালে ভুক্তভোগী গ্রাহকরা টাকা পাওয়ার দাবিতে শাখাটির সামনে অবস্থান করেন একপর্যায়ে ক্ষিপ্ত হয়ে ব্যাংকের গেটে তালা ঝুলিয়ে দেন। পরে মোহনপুর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিবেশ শান্ত করেন। ডাচ্-বাংলা ব্যাংক এর এজেন্ট মেসার্স সরকার ফার্মেসী। উপজেলার বাটুপাড়া গ্রামের ইদ্রিস সরকারের ছেলে আরজেদ সরকারের শ্যালক শাহিন আলম। বর্তমানে সে ও তার ম্যানেজার খোরশেদ গাঁ ঢাকা দিয়েছেন।

এজেন্ট ব্যাংকের ভুক্তভোগী গ্রাহকরা জানান, ব্যাংক হিসাবে টাকা জমা দেয়ার রসিদ, কারেন্ট বিল পরিশোধের রসিদ দিলেও সেই অর্থ জমা করেননি এজেন্ট ব্যাংকের মালিক শাহিন ও ম্যানেজার খোরশেদ। একারণে বিপাকে পড়েছেন গ্রাহকরা। টাকা পাওনার তালিকায় একজন ভিক্ষুক ও রয়েছেন।

ভুক্তভোগী ও এলাকাবাসীর মাধ্যমে জানা গেছে, নুড়িয়াক্ষেত্র গ্রামের মুজাহার আলী গত ১৬ মার্চ কৃষি ব্যাংক থেকে টাকা তুলে করে মৌগাছি বাজারে ডাচ্ বাংলা ব্যাংক এজেন্ট শাখায় ৫০ হাজার টাকা জমা দেন। কিন্তু পরদিন সেই টাকা তুলতে গেলে তিনি জানতে পারেন তার একাউন্টে কোন টাকা জমা নাই। হরিফলা গ্রামের মোস্তফা তার ব্যাংক হিসাবে ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা জমা করে পরবর্তীতে ৮০ হাজার টাকা তোলেন। বাকি ৯০ হাজার টাকা তুলতে গিয়ে তার একাউন্টে মাত্র ১০ হাজার টাকা জমা আছে বলে জানতে পারেন। এরপর বিষয়টি নিয়ে দিনের পর দিন তালবাহানা করতে থাকেক শাখার মালিক শাহিন ও তার ম্যানেজার। আরেক ভুক্তভোগী কালিগ্রামের মেহের আলী ৮ লাখ টাকা একাউন্টে জমা করেন। কিন্তু সেই টাকা জমার রসিদ দিলেও একাউন্টে জমা হয় মাত্র ৫৬ টাকা।

বাটুপাড়া এলাকার হামিদের স্ত্রী অহিজান ভিক্ষাবৃত্তি করে ব্যাংকে রেখেছিলেন ৪৫ হাজার টাকা। তার টাকাটিও হজম করেছেন ব্যাংক এজেন্ট।

আরো জানা গেছে, বাটুপাড়া গ্রামের শিউলি বেগম জমা রাখেন ৯০ হাজার। উত্তোলন করেন মাত্র ৩৫ হাজার টাকা। পরবর্তীতে ৫৫ হাজার টাকা তুলতে গিয়ে একাউন্টে মাত্র ৫ হাজার টাকা আছে বলে জানতে পারেন। একারণে তার সংসার ভাংঙার উপক্রম হয়েছে। তিনি আর টাকা ফেরত পাননি। মৌগাছি গ্রামের রেজিয়া বিবি ৫৬ হাজার টাকা জমা রেখে ৫ হাজার টাকা উত্তোলন করেন। বাকি ৫১ হাজার টাকার কোন হদিস নাই। বাটুপাড়া গ্রামের যাদু বেগম ২ লক্ষ ৪৫ হাজার টাকা জমা করেন কিন্তু তার একাউন্টে কোন টাকাই জমা হয়নি। হরিহরপাড়ার মিনারুল জমা রাখেন ১ লাখ  ৩২ হাজার টাকা কিন্তু কয়দিন পর উত্তোলন করতে গিয়ে দেখেন তার একাউন্টে কোন টাকা নাই। নুড়িয়াক্ষেত্র গ্রামের অনেক বিদ্যুৎ গ্রাহক বিল পরিশোধ করতে টাকা জমা দেন এ শাখায়। গ্রাহককে বিদ্যুৎ বিল জমার রশিদ দিলেও বিল পরিশোধ না করায় বৈদ্যুতিক লাইন বিচ্ছিন্ন করেছেন বিদ্যুৎ বিভাগ। তবে ভুক্তভোগী গ্রাহকরা বলেন যদি ব্যাংক কর্তৃপক্ষ আমাদের টাকার ব্যবস্থা না করে দেন তাহলে আমরা আন্দোলনসহ কঠোর ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হব।

এবিষয়ে মৌগাছি ইউপি চেয়ারম্যান আল আমিন বিশ্বাস বলেন,এজেন্ট ব্যাংকের এই শাখা খোলার পর জনগণ হাতের কাছে সেবা পাওয়ায় বিশ্বাস ভরসা নিয়ে টাকা পয়সা সেখানে জমা রাখে। এসুযোগকে কাজে লাগিয়ে এজেন্ট শাহিন পান ব্যবসায়ী দের চড়া সুদে টাকা দেন। গ্রাহকের টাকা আত্মসাত করার অভিযোগ পেয়েছি। সে স্থানীয় না। তার সুদের ব্যবসার ব্যাপারে অনেকবার বিচার শালিস করেছি। সে স্থানীয় আদালতকে মানেনা। আমার ভোটারদের টাকা আত্মসাত করার কারণে তাকে ছাড় দেওয়া হবেনা।

মোহনপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সেলিম বাদশাহ বলেন, মৌগাছি বাজারে ডাচ্ বাংলা এজেন্ট শাখায় প্রতারিত গ্রাহকরা জড়ো হওয়ার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে শাখাটি তালাবদ্ধ পায়। এসময় মালিক পক্ষের কাউকে পাওয়া যায়নি। এবিষয়ে অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এজেন্ট ব্যাংক মালিক শাহিন এভাবে জনগনের লাখ লাখ টাকা আত্মসাত করলেও যেন কোন দায় নেই ডাচ্-বাংলা ব্যাংক কর্তৃপক্ষের। এবিষয়ে মোহনপুর উপজেলার দায়িত্ব নিয়োজিত সিনিয়র  এরিয়া ম্যানেজার তাপস কুমার দাশকে ফোন করা হলে তিনি এবিষয়ে কিছুই জানেন না বলে তার দায় এড়িয়ে তাড়াতাড়ি ফোনটি কেটে দেন। পরে তার নাম্বারে যোগাযোগ করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

Next Post

মোহনপুর প্রেসক্লাবের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রুবেল সরকার মতিন বহিষ্কার

মঙ্গল মার্চ ২৮ , ২০২৩
নিজস্ব প্রতিনিধিঃ রাজশাহীর মোহনপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি মিরাজুল ইসলাম মতিনকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। প্রেসক্লাবের গঠনতন্ত্র বহির্ভুত কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ার কারণে এক জরুরী সভায় সর্বসম্মতিক্রমে সিনিয়র সহ-সভাপতি রুবেল সরকারকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার  (২৮ মার্চ) সন্ধায় জরুরী সভায় রুবেল সরকারের সভাপতিত্বে ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুর কাদের […]

এই রকম আরও খবর

Chief Editor

Johny Watshon

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat. Duis aute irure dolor in reprehenderit in voluptate velit esse cillum dolore eu fugiat nulla pariatur

Quick Links