মুসলিমবিদ্বেষী নাগরিক সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে শুক্রবার ভারতজুড়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে।

আভা ডেস্কঃ মুসলিমবিদ্বেষী নাগরিক সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে শুক্রবার ভারতজুড়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। একদিন আগে আইনটির বিরুদ্ধে ক্ষোভের কেন্দ্রস্থল উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যে পুলিশের গুলিতে দুইজন নিহত হয়েছেন।

ফরাসি বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে এমন তথ্য জানা গেছে।

নয়াদিল্লিতে হাজার হাজার লোক সড়কে নেমে আসলে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দিতে পুলিশ লাঠিপেটা ও কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করেছে। অমৃতসরসহ কলকাতা, কেরালা ও হিন্দুত্ববাদী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির এলাকা গুজরাটে মুসলমান বিক্ষোভকারীরা প্ল্যাকার্ডে আগুন দিয়েছে।

আসামের মূলশহর গুয়াহাটিতে বৃহস্পতিবার রাতে চিকিৎসাকর্মীরা জানিয়েছেন, পুলিশের গুলিতে দুই বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছেন। এছাড়াও ২৬ জন আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

এতে রোববার ওই এলাকায় সফর বাতিল করেছেন জাপানি প্রধানমন্ত্রী শিনজো অ্যাবে। শুক্রবার আরও চারজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলেও খবরে দাবি করা হয়েছে।

বিক্ষোভের জবাব দিতে বলপ্রয়োগের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক নীতিমালা ও মানদণ্ড বজায় রাখতে এবং শান্তিপূর্ণ সমাবেশের প্রতি সম্মান জানাতে ভারতের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে জেনেভায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়।

ধ্বংসাত্মক কার্যক্রমের পথ ধরে বৃহস্পতিবার গুয়াহাটিতে যানবাহনে অগ্নিসংযোগ, রাস্তাঘাট অবরোধ, টায়ারে আগুন ও নিরাপত্তা বাহিনীর দিকে পাথর নিক্ষেপ করেছেন হাজার হাজার স্থানীয় অধিবাসীরা।

দাঙ্গা পুলিশের সহায়তায় সামরিক বাহিনীকেও প্রস্তুত রাখা হয়েছিল। শহরের বহু এলাকায় ইন্টারনেট সেবা বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়েছে। শুক্রবার অবস্থান কর্মসূচিতে কয়েক হাজার পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

এছাড়াও অধিকাংশ ক্যাশ মেশিন ও দোকানপাট বন্ধ ছিল। পেট্রোল স্টেশনও খুলতে দেখা যায়নি।

মেঘালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা রাজ্যটির ইন্টারনেট সেবা বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছেন ও রাজধানী শিলংয়ের কিছু অংশে কারফিউ জারি করা হয়েছে। সেখানে সহিংসতায় অন্তত ২০ ব্যক্তি আহত হয়েছেন বলে খবরে জানা গেছে।

বিভিন্ন কারণে উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে এই আইনের বিরুদ্ধে আপত্তি উঠছে। তাদের আশঙ্কা, এতে প্রতিবেশী বাংলাদেশের বহু অভিবাসী তাদের নাগরিক হতে যাচ্ছে। যাদের বড় একটা অংশ হিন্দু সম্প্রদায়ের।

নাগরিকত্ব নিয়ে এসব অভিবাসীরা তাদের চাকরি কেড়ে নেবে ও সাংস্কৃতিক পরিচয়কেও হুমকিতে ঢেলে দেবে বলে শঙ্কার কথা জানিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা।

চলতি সপ্তাহে ভারতীয় পার্লামেন্টের দুই কক্ষেই এই আইন পাসকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত বিতর্ক হয়েছে। ১৯৩০ সালের দিকে জার্মানিতে ইহুদিবিদ্বেষী আইনের সঙ্গে তুলনা করা হচ্ছে ভারতের নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলকে।

এ আইনটি বাস্তবায়ন করবে না বলে জানিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ, পাঞ্জাব, কেরালা, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়সহ দেশটির বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা।

আইনটির বিরুদ্ধে পশ্চিমবঙ্গের ক্ষুব্ধ নেত্রী মমতা ব্যানার্জি বলেছেন, মোদি জাতিকে বিভক্ত করতে চাচ্ছেন। সোমবার রাজধানী কলকাতায় তিনি একটি বড় বিক্ষোভের ডাক দিয়েছেন।

জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের (জেএনইউ) অধ্যাপক আদিত্য মুখার্জি বলেছেন, এটা সম্পূর্ণ অসাংবিধানিক আইন। এটা ভারতীয় চেতনার সঙ্গে যায় না।

মানদেব দাস নামের এক বিক্ষোভকারী বলেন, তারা আমাদের দেশের কোথাও স্থায়ী হতে পারে না। আমরা মারা যাব, কিন্তু তাদের এখানে বসতি গড়তে দেব না।

সমুজ্জল ভট্টাচার্য নামের স্থানীয় আরেক বিক্ষোভকারী বলেন, জনশক্তি দিয়ে আমরা সরকারকে পরাজিত করবো। সরকার এই আইন বাতিলে বাধ্য হবে।

নতুন এই আইনে প্রতিবেশী পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও বাংলাদেশের মুসলমান ছাড়া বাকি ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা ভারতের নাগরিকত্ব আবেদন করতে পারবেন।

বিভিন্ন ইসলামপন্থী গোষ্ঠীর দাবি, এটা মোদির হিন্দু জাতীয়তাবাদী এজেন্ডারই অংশ। এর মধ্য দিয়ে ভারতের ২০ কোটি মুসলমানকে কোণঠাসা করতে চাচ্ছে বিজেপি।

তবে মোদি সেই অভিযোগ অস্বীকার করে বলছে, এই তিন দেশের মুসলমানদের ভারতের সুরক্ষা নেয়ার দরকার নেই। তাই আইন থেকে তাদের বাদ দেয়া হয়েছে।

বৃহস্পতিবার ব্লুমবার্গের খবর বলছে, ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষায় ভারতীয় সরকারে প্রতি আহ্বান জানিয়েছে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় বলছে, ভারতের সংবিধানে প্রতিশ্রুত সমনাধিকার এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়বে।

যুগান্তর

 

Next Post

ভারতে বিতর্কিত নতুন নাগরিকত্ব আইনকে সাম্প্রদায়িক ও বৈষম্যমূলক আখ্যায়িত করেন, জাতিসংঘ ।

শনি ডিসে. ১৪ , ২০১৯
আভা ডেস্কঃ ভারতে বিতর্কিত নতুন নাগরিকত্ব আইনকে সাম্প্রদায়িক ও বৈষম্যমূলক আখ্যায়িত করে তা পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ। বর্ণবাদী ওই আইন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক মুখপাত্র জেরেমি লরেন্স শুক্রবার সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় এক ব্রিফিংয়ে বলেন, ভারতের নতুন নাগরিকত্ব আইনটি মৌলিক চরিত্রের দিক দিয়েই বৈষম্যমূলক। খবর রয়টার্সের। এ কারণে এ […]

এই রকম আরও খবর

Chief Editor

Johny Watshon

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat. Duis aute irure dolor in reprehenderit in voluptate velit esse cillum dolore eu fugiat nulla pariatur

Quick Links