ভোট কেন্দ্রে দায়িত্বরতরাই ভোট দেয়নি, এটা নির্বাচন কমিশনারের উপর তাদের অনাস্থার প্রমাণ, সুজন ।

আভা ডেস্কঃ ঢাকা দক্ষিণ সিটি নির্বাচনে মানিকনগর মডেল হাই স্কুল (উত্তর পার্শ্বের টিন শেড ভবন) কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস ভোট পেয়েছেন মাত্র ১৬টি। অথচ এ কেন্দ্রে সেদিন আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী ৯টি সংগঠনের ২১৭ স্থানীয় নেতাকর্মী পাহারা দিয়েছেন। এ কেন্দ্রে ভোটার ২৩০৮ জন। ভোট পড়েছে ৩৭৭টি।

শুধু মানিকনগর মডেল হাই স্কুল কেন্দ্রেই নয়, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণের অনেক কেন্দ্রেই দেখা গেছে এমন বিপর্যয়ের চিত্র। এতে সংশ্লিষ্টদের প্রশ্ন- দায়িত্বপ্রাপ্তরা কি ভোটদানে বিরত ছিলেন। কারণ প্রতিটি কেন্দ্র পাহারা দিতে পৃথকভাবে ১০টি কমিটি গঠন করে ক্ষমতাসীনরা। সেখানে প্রতি কেন্দ্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাকর্মীর সংখ্যা ছিল ২১৭। এসব নেতাকর্মী ও তাদের পরিবারের সদস্যরা নৌকায় ভোটাধিকার প্রয়োগ করলে অন্তত এ ধরনের বিপর্যয় কোনোভাবেই হতো না বলে মন্তব্য করেন সংশ্লিষ্টরা।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী সূত্রে জানা গেছে, কেন্দ্রভিত্তিক গঠিত কমিটির এসব নেতাদের ভোটের দিনের কর্মকাণ্ড নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ শুরু করেছে আওয়ামী লীগ। এরই অংশ হিসেবে ঢাকার দুই সিটির অন্তর্গত ১৬ এমপিকে নির্বাচনী প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। ইতিমধ্যে দু’জন সংসদ সদস্য তাদের প্রতিবেদন বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের কাছে জমা দিয়েছেন। প্রতিবেদনে কেন্দ্রভিত্তিক কমিটির সদস্য ও তাদের পরিবারের লোকজনের ভোট না দেয়ার বিষয়টি ওঠে এসেছে।

একই সঙ্গে মহানগর আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ ৯টি সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের অধিকাংশ নেতাকর্মী ও তাদের আত্মীয়স্বজনের ভোট না দেয়ার বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে প্রতিবেদনে। বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে খতিয়ে দেখে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। শনিবার আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমণ্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে সিটির অন্তর্গত ১৬ এমপি ও নবনির্বাচিত দুই মেয়রকে নিয়ে বৈঠক করেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। বৈঠকে ভোট বিপর্যয় ও তার কারণ নিয়ে মতামত তুলে ধরেন এমপি ও নির্বাচিত দুই মেয়র।

জানতে চাইলে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার শনিবার টেলিফোনে যুগান্তরকে বলেন, এটা নির্বাচন কমিশনের ওপর তাদেরও (আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী) অনাস্থারই প্রমাণ। ভোটকেন্দ্র পাহারায় থাকা দলীয় নেতাকর্মীরা যেহেতেু ধরেই নিয়েছিলেন তাদের দল জিতবেই, ফলে নিজের ভোটটিও প্রয়োগ করেননি। এটা নির্বাচন কমিশনের ওপর ভোটারদের অনাস্থা।

কেন্দ্রভিত্তিক গঠিত কমিটির দায়িত্বে থাকা নেতাদের বিষয় খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান। তিনি যুগান্তরকে বলেন, কেন সে সব কেন্দ্রে ভোট কম পড়ল তা পর্যালোচনা করা হচ্ছে। দায়িত্ব পালনে অবহেলাকারীদের দলের ও সহযোগী সংগঠনের কোনো কমিটিতে মূল্যায়ন করা হবে না। কম ভোট পড়ার জন্য মানুষের কর্মব্যস্ততা, আধুনিক ধ্যান-ধারণার পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনের অব্যবস্থাপনাকেও দায়ী করেন তিনি।

মেয়র পদের ফলাফল পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, দক্ষিণ সিটির ৫৬ নম্বর ওয়ার্ডের কামরাঙ্গীরচরে লিলি ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের নারী ভোটকেন্দ্রে ১ হাজার ৬৭২ ভোটের মধ্যে ভোট পড়েছে ৬৯টি। এর মধ্যে নৌকা প্রতীক পেয়েছে ৬২টি। একই এলাকার জননী কিন্ডারগার্টেন অ্যান্ড হাইস্কুল কেন্দ্রে ১ হাজার ৬৮৩ জন ভোটারের মধ্যে ভোট দিয়েছেন মাত্র ৯০ জন। এরমধ্যে ৮২ ভোট পেয়েছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী তাপস।

একইভাবে ঢাকা উত্তর সিটি নির্বাচনে ঢাকা পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট কেন্দ্রে ১৯৭ ভোট পেয়েছেন আতিকুল ইসলাম। এ কেন্দ্রে ২ হাজার ২৫৯টির মধ্যে ২০১টি ভোট পড়েছে। তেজগাঁও সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে আতিকুল ইসলাম ভোট পেয়েছেন ৪১ ভোট। আতিকুল ইসলাম ৩৯টি কেন্দ্রে একশ’র কম করে ভোট পেয়েছেন। ৫০ থেকে ৯৯ ভোট করে পেয়েছেন ৩৭টি কেন্দ্রে, আর ১০০ থেকে ১৪৯ ভোট করে পেয়েছেন ৯২টি কেন্দ্রে।

ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ এবং ৯টি সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন- যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষক লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ, শ্রমিক লীগ, তাঁতী লীগ, মৎস্যজীবী লীগ, ছাত্রলীগের পৃথকভাবে কেন্দ্রভিত্তিক কমিটি ছিল। ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের প্রত্যেক ভোট কেন্দ্রের কমিটি ছিল ৩৭ সদস্য বিশিষ্ট। ২০ সদস্য বিশিষ্ট ছিল সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম ৯ সংগঠনের কেন্দ্রভিত্তিক কমিটি।

মোট হিসাব করে দেখা যায়, প্রতি কেন্দ্রে ১০টি টিমে মোট ২১৭ জন সক্রিয় নেতাকর্মী পাহারা দিয়েছেন। একই সঙ্গে প্রতিটি কেন্দ্রে পোলিং এজেন্ট হিসেবে কমপক্ষে ৫ জন করে দলীয় নেতাকর্মী ভোট শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেছেন। সেই হিসাবে বাইরে থেকে আর কেউই ভোট দিলেও প্রতি কেন্দ্রে কমপক্ষে ২২২ ভোট নিশ্চিত পাওয়ার কথা আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীর। কিন্তু উত্তর ও দক্ষিণ সিটির অনেক কেন্দ্রে নৌকার প্রার্থীর ভোট বিপর্যয় ঘটেছে। দুই সিটির উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কেন্দ্রে ২০০-এর নিচে ভোট পড়েছে যা ভাবিয়ে তুলছে ক্ষমতাসীনদের।

পহেলা ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ঢাকা উত্তর সিটিতে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ও দক্ষিণে শেখ ফজলে নূর তাপস মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। এ দুই সিটিতে এবার সবচেয়ে কম ভোটে মেয়র হওয়ার রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। দক্ষিণে ভোটের হার ছিল ২৯ শতাংশ আর উত্তরে ২৫ দশমিক ৩। এরমধ্যে দক্ষিণে আতিকুল ইসলাম ১৪ দশমিক ৮৪ এবং শেখ তাপস ১৭ দশমিক ৩০ ভাগ ভোট পেয়েছেন।

জানা গেছে, ঢাকা উত্তর সিটির অন্তর্গত একজন এমপি তার প্রতিবেদনে কম সংখ্যক ভোট পড়ার ৭টি কারণ উল্লেখ করেছেন। সেখানে ভোট কেন্দ্রভিত্তিক কমিটির সদস্য ও তাদের পরিবারের লোকজন, আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা ও তাদের পরিবারের লোকজনের ভোট না দেয়ার কথা উল্লেখ করেছেন। এছাড়া প্রচারের চেয়ে নেতাদের সঙ্গে আড্ডাবাজি, প্রচারে থাকা অনেক নেতাকর্মীর ভোট কেন্দ্রে না যাওয়া, কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ, মারামারি আশঙ্কা থেকেও ভোটার উপস্থিতি কম হওয়ার কারণ উল্লেখ করেছেন তিনি।

আরকজন এমপি ভোটের বিপর্যয় সংক্রান্ত প্রতিবেদনে খসড়া তৈরি করেছেন। সেখানে তিনি উল্লেখ করেছেন- কাউন্সিলর প্রার্থীদের অনেকে বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে আঁতাত করে ভোট চাওয়ায় নৌকার পক্ষে কম ভোট পড়েছে। এছাড়া বাইরে গণসংযোগ করলেও অনেক নেতাকর্মী নিজস্ব আত্মীয়স্বজনদের কাছেই ভোট চাননি। ভোটের দিনও অনেককেই ভোট না চেয়ে গালগল্প করতে দেখা গেছে। ফলে নৌকায় ভোট কম পড়েছে।

যুগান্তর

Next Post

চীনে আটকা পড়া বাংলাদেশীদের আনতে আর বিমান পাঠানো হচ্ছে না, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ।

রবি ফেব্রু. ৯ , ২০২০
আভা ডেস্কঃ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন বলেছেন, চীনে আটকে পড়া অবশিষ্ট বাংলাদেশিদের আনতে সে দেশে আর বিমান পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না। কারণ আগে যে বিমানটি পাঠানো হয়েছিল সেটির ক্রুরা এখনো বসে আছেন। ১৪ দিনের আগে তাদের কোথাও আর পাঠানো যাবে না। শনিবার ঢাকায় সেন্টার ফর এনআরবি আয়োজিত এক সম্মেলন […]

এই রকম আরও খবর

Chief Editor

Johny Watshon

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat. Duis aute irure dolor in reprehenderit in voluptate velit esse cillum dolore eu fugiat nulla pariatur

Quick Links