আভা ডেস্কঃ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন বলেছেন, চীনে আটকে পড়া অবশিষ্ট বাংলাদেশিদের আনতে সে দেশে আর বিমান পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না। কারণ আগে যে বিমানটি পাঠানো হয়েছিল সেটির ক্রুরা এখনো বসে আছেন। ১৪ দিনের আগে তাদের কোথাও আর পাঠানো যাবে না। শনিবার ঢাকায় সেন্টার ফর এনআরবি আয়োজিত এক সম্মেলন শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন বলেন, চীনে আরও ১৭১ জন বাংলাদেশি আটকা পড়ে আছেন। তারা দেশে আসার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। আমরা তাদের ব্যাপারে খুবই সংবেদনশীল। এর আগে চীন থেকে ৩১২ জনকে আনা হয়েছে। চীনারা প্রথম বলেছিলেন ১৪ দিনের আগে তারা কাউকে ছাড়বেন না। পরে যুক্তরাষ্ট্র নিজেদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিলে আমাদেরও সুযোগ হয়।
তিনি বলেন, যারা ফেরত এসেছেন, তাদের কারও শরীরে করোনাভাইরাস নেই। এখনও যারা চীনে আছেন তাদের আমরা আনতে চাই। কিন্তু আগে যে বিমানটি সেখানে গিয়েছিল সেই বিমানের ক্রুরা ও বিমানটি আর কোথাও যেতে পারছে না। বিমানটিকে বসিয়ে রাখা হয়েছে। এমনকি সিঙ্গাপুরেও যেতে পারছে না। ওই বিমানের জন্য এক লাখ ৩০ হাজার ডলার খরচ হয়েছে। চীন থেকে কাউকে আনতে চাইলে চীনা বিমান ভাড়া করতে হবে। তিনি বলেন, চীন কাউকে দিতে রাজি নয়। তারা রাজি হলে বাংলাদেশ সরকার নিজ খরচে তাদের নিয়ে আসবে। তিনি আরও বলেন, দেশটি চায় না ভাইরাসটি অন্য কোনো দেশে ছড়িয়ে পড়ুক।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন বলেন, বাংলাদেশিদের আনা নিয়ে আমরা দ্বিধাদ্বন্দ্বে আছি। তবে তাদের খাওয়া-দাওয়া নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। দেশটির সরকার তাদের দায়িত্ব নিয়েছে। একজন ডেপুর্টি লিডারকে তাদের জন্য নিয়োজিত করেছে চীন। বাংলাদেশিরা ২৩টি জায়গায় থাকে। প্রত্যেক জায়গায় একজন করে লোক নিয়োগ করেছে। খাওয়া-দাওয়া পানিসহ সব কিছু যথাসময়ে তাদের পৌঁছে দিচ্ছে।
তিনি বলেন, চীনারা যা বলেন তা করেন। বাংলাদেশি দূতাবাস কী করছে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দূতাবাস সার্বক্ষণিক বাংলাদেশিদের খোঁজখবর নিচ্ছে। আমরা গ্রুপ করে দিয়েছি। ওই গ্রুপ তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে। তিনি আরও বলেন, বিনা পয়সায় যাতে নিয়ে আসা হয় সেজন্য আটকে পড়াদের আগ্রহ বেশি। আর টাকা দিতে হলে আটকে পড়াদের ৮০ শতাংশই আসবে না। এ ছাড়া বাংলাদেশে এলেই তারা ভালো হয়ে যাবে, এমনও নয়।
শেষ পর্যন্ত সরকার তাদের আনছে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা তাদের আনতে পারি না। কারণ বিমান পাঠানো সম্ভব নয়। পাইলট ও ক্রুরা কেউ যেতে রাজি নন। শামীমা বেগম নামে যুক্তরাজ্যের একজন আইএসে যোগ দিয়েছিলেন।
তাকে এখনো প্রাথমিকভাবে নাগরিকত্ব দেয়নি যুক্তরাজ্য। এ ব্যাপারে বাংলাদেশের অবস্থান কী- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা খুবই দুঃখজনক। কারণ শামীমা বেগমের সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। তার বাবা বাংলাদেশের নাগরিক ছিলেন। তবে তার মা যুক্তরাজ্যের নাগরিক। জন্মও ওই দেশে। শামীমা কখনো বাংলাদেশের নাগরিকত্বের জন্য আবেদনও করেননি। শামীমা যুক্তরাজ্যের নাগরিক।
সেন্টার ফর এনআরবি সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন সেন্টার ফর এনআরবির চেয়ারম্যান সেকিল চৌধুরী। এতে প্রধানমন্ত্রীর অর্থনীতিবিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান, বাংলাদেশি নিযুক্ত কয়েকটি দূতাবাসের কর্মকর্তা এবং ন্যাশনাল আইডি কার্ড প্রকল্পের কর্মকর্তা প্রমুখ বক্তব্য দেন। দেশের প্রবাসী আয় বাড়াতে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে অনুষ্ঠানে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে সম্মাননা দেয়া হয়।