প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যাকে নয়া চাচা সম্বোধন করতেন, সেই ব্যাক্তির নামও রাজাকার তালিকায় ।

আভা ডেস্কঃ মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত কথিত রাজাকারের তালিকায় রাষ্ট্র স্বীকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের নাম থাকা নিয়ে বিতর্কের মধ্যে জানা গেলো ওই তালিকায় যুক্ত করা হয়েছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক মো. মজিবুল হকের (নয়া ভাই) নাম। নিজের অত্যন্ত প্রিয় মানুষটিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হক চাচা বলে সম্বোধন করতেন।

মজিবুল হকের মেজো ছেলে অ্যাডভোকেট রেজাউল হক শাহীন কে জানান, ১৯৭১ সালে তিনি ছিলেন পাথরঘাটা মুক্তি সংগ্রাম পরিষদের চেয়ারম্যান। সেই মুক্তি সংগ্রাম পরিষদ গঠন থেকে শুরু করে দেশের স্বাধীনতা অর্জন পর্যন্ত তাদের নেতৃত্ব দিয়েছে। ছিলেন পাথরঘাটা উপজেলা আওয়ামী লীগের টানা ৪০ বছরের সভাপতি।

আজীবন মানুষের জন্য রাজনীতি করে যাওয়া ‘নয়া চাচা’র ৮ সন্তান নিয়ে টানাটানির মধ্যে সংসার চললেও সততার সঙ্গে কোনোদিনও আপোস করেননি। নিজের টানাটানির সংসার নিয়ে নিয়ে তার বিন্দুমাত্র আক্ষেপও ছিল না।

এমন একজন ত্যাগী মানুষের মৃত্যুর পর এভাবে সম্মানহানির ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তার পরিবার ও এলাকার মুক্তিযোদ্ধাসহ সাধারণ মানুষ।

অ্যাডভোকেট রেজাউল হক শাহীন আরও বলেন: তালিকা প্রকাশের পর প্রথম রাত খাওয়া-দাওয়া একদম বন্ধ হয়ে গেছিল। এ যে কী লজ্জার তা আমাদের পরিবারের প্রতিটি সদস্যই বুঝেছি।

‘‘সবচেয়ে বেশি কষ্ট পেয়েছেন আমার মা নুরজাহান বেগম (৮৫)। কারণ আমার বাবার রাজনীতির কারণে সবচেয়ে বেশি সাফার করেছেন আমার মা।’’

আমার বাবা ৬০ বছর ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন: ‘আমরা সবসময় দেখেছি আমাদের বাসায় শত শত মানুষ আসতো। তাদের খাওয়া-দাওয়ার সব ব্যবস্থা আমার মা করতেন। সেই বাবার নাম যখন রাজাকারের তালিকায় তখন আমার ৮৫ বছর বয়সী মায়ের জন্য এটা সহ্য করা খুব কষ্টের।’

‘‘আজ স্বাধীনতার ৪৮ বছর পরে যখন আমার বাবার নাম রাজাকারের তালিকায় তখন বলবো আমার বাবা যদি অপরাধী হয় তাহলে তার শাস্তি হোক।’’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অত্যন্ত প্রিয় ব্যক্তি ছিলেন তার বাবা উল্লেখ করে রেজাউল হক শাহীন বলেন: ‘বাবা ঢাকায় আসলেই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে চাইতেন। ওখানে দেখা করা অনেক বেশি সময়সাপেক্ষ বলে বাবাকে গণভবনে নামিয়ে দিয়েই চলে আসতাম। যতবার বাবা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন ততবারই অ্যাপয়েন্টমেন্ট ছাড়া। বাবা ওখানে গিয়ে চিরকুটে নিজের নামটা লিখে বলতেন আমার নামটা দেখলেই প্রধানমন্ত্রী আমাকে ডাকবেন।

প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধাভাজন নয়া চাচার চিকিৎসার ব্যবস্থা খোদ শেখ হাসিনাই করেছিলেন উল্লেখ করে রেজাউল হক শাহীন বলেন: ‘বাবা একবার ডাক্তর দেখাতে ঢাকা এসেছিলেন। সেবারও তিনি চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফেরার আগে দেখা করার জন্য যান প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে। প্রধানমন্ত্রী তার চিকিৎসার কথা শুনে বলেন: আপনি কোথায় ডাক্তার দেখিয়েছেন?। আপনার চিকিৎসা হয়নি। আপনি আগামীকাল আমার কার্যালয়ে আসবেন। আমি আপনার চিকিৎসা করাবো।’

পরদিন নয়া চাচা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে গেলে প্রধানমন্ত্রীর চিকিৎসক তাকে দেখেন। পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর নিজ হাতে একটি চিঠি লিখে দেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানে তার প্রিয় নয়া চাচার পরীক্ষা-নিরীক্ষা বিনামূল্যে করার ব্যবস্থাসহ তার চিকিৎসার যাবতীয় ব্যবস্থা করার নির্দেশ দেন।

মজিবুল হক ১৯৮৬ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে (পাথরঘাটা-বামনা) সংসদীয় আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছেন। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি হিসেবে কাজ করেছেন। ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত তিনি পাথরঘাটা থানা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন।

মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পর পাথরঘাটার প্রত্যন্ত গ্রামে নয়া ভাইয়ের বাড়িতে আশ্রয় ও প্রশিক্ষণ নিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধারা। আশ্রয় নিয়েছেন মুক্তিকামী মানুষও। স্বাধীনতার স্বপক্ষের সংগঠক ও মুক্তিকামী মানুষ এবং মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতাকারী মজিবুল হক নয়া ভাইয়ের নাম সদ্য প্রকাশিত রাজাকারের তালিকায় আসায় ক্ষুব্ধ পরিবারের সদস্যরাও।

২০০৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর মারা যান তিনি।

রোববার প্রথম দফায় ১০,৭৮৯ জন  রাজাকারের তালিকা প্রকাশ করে

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। অনেকেই বলছেন, রাজাকারের তালিকা সংশোধন করে, নতুনভাবে আবার তালিকা করা হোক ।

চ্যানেল আই অনলাইন

Next Post

১৯৭১ সালের এই দিনে শক্রমুক্ত হয় রাজশাহী । আজ রাজশাহী হানাদার মুক্ত দিবস ।

বুধ ডিসে. ১৮ , ২০১৯
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ আজ ১৮ ডিসেম্বর। ১৯৭১ সালের এই দিনে শক্রমুক্ত হয় রাজশাহী। ১৬ ডিসেম্বর দেশবাসী যখন বিজয়ের আনন্দে আত্মহারা ছিলো, তখনো রাজশাহী শহরের রাস্তা ঘাটে টহলরত ছিলো শত্রু পক্ষের কনভয়। ১৭ ডিসেম্বর রাতে পাকিস্তানি আর্মি গোপনে নাটোর গিয়ে ১৮ ডিসেম্বর সকালে আত্মসমর্পণ করে। ওই দিনই রাজশাহীবাসী নেমে আসে রাজপথে। মাদ্রাসা […]

Chief Editor

Johny Watshon

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat. Duis aute irure dolor in reprehenderit in voluptate velit esse cillum dolore eu fugiat nulla pariatur

Quick Links