আভা ডেস্কঃ দেশের গন্ডি পেরিয়ে রাজশাহীর পাটপণ্য যাচ্ছে আন্তজার্তিক বাজারে। গুনগত মান বিবেচনায় শীর্ষে রয়েছে রাজশাহী অঞ্চলের পাট। স্থানীয় বাজারেও মিলছে ভালো দাম। প্রতিমণ পাট বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার ৯০০ টাকা মণ দরে। এতে আবারও লাভের মুখ দেখতে শুরু করেছে চাষিরা।
রাজশাহীতে এ বছর ১৮ হাজার ৩৯ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে। রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, রবি মৌসুমের শুরুতেই পাট চাষ শুরু হয়। পাট চাষে খরচ তুলনামূলক কম। পাটের জন্য প্রয়োজন পর্যাপ্ত পানি। এবার আষাঢ়ের শুরু থেকেই তা ছিল পর্যাপ্ত। তাই পাট চাষে প্রয়োজনীয় পানির জোগান মিলেছে প্রকৃতি থেকেই। এছাড়া বৃষ্টিপাত কম হলে খালে-বিলে পানি না থাকলে পাট জাগ দিতে সমস্যা হয়। কিন্তু এবছর সব জায়গাতেই পানি আছে। পাট জাগ দিতে তেমন কোনো সমস্যা হয় নি। এতে পাটের গুনগত মান ভালো থাকার পাশাপাশি জাগ দেয়া নিয়ে কৃষকের দুর্ভোগে পড়তে হয় নি।
রাজশাহীর পবা উপজেলার কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা যায়, খাল-বিল, পুকুরসহ ডোবায় পাট কেটে জাগ দেয়া হয়েছে। গ্রামের রাস্তার পাশে বাঁশের খুঁটি পুঁতে সারি সারি করে শুকাতে দেয়া হয়েছে পাট। অপরদিকে গুচ্ছ করে বোঝা বেঁধে রাখা হয়েছে পাটের খড়ি। জাগ দেয়া পাট ছড়াতেও ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে চাষিদের।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, রাজশাহীতে এরইমধ্যে শতভাগ পাট কর্তন করা হয়েছে। মোট উৎপাদন হয়েছে ৪৪ হাজার ৬৪৬ মেট্রিক টন। এ বছর হেক্টর প্রতি ফলন বেশি হয়েছে ২ দশমিক ৮০ শতাংশ।
সোমবার (২৩ আগস্ট) পবা উপজেলার নওহাটা পাট আড়ৎ ও জুট মিলস ঘুরে দেখা যায়, পাট কেনাবেচায় এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন ব্যবসায়ীরা। জুট মিলগুলোতে ফড়িয়াসহ কৃষকরাও সরসরি পাট বিক্রি করতে আসছেন। গুণ ও মানভেদে প্রতিমণ পাট বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৯০০ টাকা পর্যন্ত।
নওহাটা পৌরসভার বাসিন্দা পাটচাষী হবিবুর রহমান জানান, এবার তিনি আড়াই বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছিলেন। পাট চাষে তার বিঘাপতি ১৬ থেকে ১৮ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। পাট হয়েছে সাড়ে ৯ মণ। এবার পাটের দাম খুব একটা ভালো না হলেও খারাপ না। প্রত্যাশা পূরণ না হলেও লাভবান হয়েছি।
আরেকজন চাষী ও নওহাটা জুট মিলের কর্মচারী আবনি মন্ডল জানান, তিনি ১০ থেকে ১২ বছরের বেশি সময় ধরে পাট চাষ করেন। এবার পাটের দাম খারাপ না। তিনি দুই বিঘায় পাট চাষ করেছিলেন। যেখানে ২৫ মণ পাট পেয়েছেন। ইদের পরপরই তার পাট বিক্রির উপযোগী হয়েছিলো। পাটের ফলনের পাশাপাশি রঙটাও সুন্দর ছিলো। আর সেসময় তিনি প্রতিমণ পাট ৩ হাজার ৩০০ টাকা দরে বিক্রি করেছিলেন। কিন্তু এখন বাজার দর কমেছে।
আধা মণ পাট নিয়ে নওহাটা বাজারে বিক্রি করতে এসেছিলেন হাশেম আলী। তিনি জানান, তার এবার সাড়ে তিন বিঘা মতো পাট ছিলো। বিঘাপ্রতি ৯ মণ করে ফলন পেয়েছেন। কিন্তু এখন দাম নাই। হাতে টাকাও নাই। তাই এই আধমণ পাট বাজারে নিয়ে এসেছেন। সামনে দাম বাড়লে তবেই পাট বিক্রি করবেন বলে জানান এই চাষী।
হাসেম জুট মিলের জুট পার্সেল অফিসার আনওয়ার হোসেন জানান, বাজারে সরবরাহের পরিমাণের উপর দাম নির্ভর করে। এক সপ্তাহ আগে সরবরাহ কম থাকায় দাম বেশি ছিলো। এখন সরবরাহ বেশি তাই দাম কম। তবে খুব যে কমেছে এমনটা না। মৌসুমের শেষে এই পাটের দামই আবার বাড়বে।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কেজেএম আব্দুল আওয়াল জানান, পাট চাষ লাভজনক হওয়ায় রাজশাহীর চাষিরা আগ্রহী হচ্ছেন। কম খরচ ও শ্রমে ভালো লাভবান হচ্ছেন চাষিরা। একসময় পাটের জমিতে আগাছা নিধনের জন্য জমির মালিক বা চাষিকে জমিতে অতিরিক্ত শ্রমিক লাগিয়ে খরচ করতে হতো। বর্তমানে তা আর করতে হয় না। এখন আগাছা নিধনে কিটনাশক বের হয়েছে। কিটনাশক ও উন্নত চাষাবাদ প্রয়োগে কমেছে খরচ।
উপ-পরিচালক কেজেএম আব্দুল আওয়াল আরও জানান, পাটের আন্তজার্তিক বাজারটাকে সম্প্রসারণ ও গুণগত মান বৃদ্ধিতে কৃষকের সচেতনতা বাড়লে পাট চাষ আরও লাভবান হবে। রাজশাহীতে পাটের জাগ দেয়া দিয়ে নিয়ে চাষিরা কিছুটা সমস্যায় পড়েন। আবার অনেকে সঠিক পদ্ধতিতে জাগ না দেয়ায় কাক্সিক্ষত কালারটা আসে না। তারা এসকল সমস্যা দূর করতে তারা কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। সম্ভাবনাময় সোনালি পাটের হারানো গৌরব আবারও ফিরে আসবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।