গোদাগাড়ীতে প্রতারণা করা সেই ছাত্রলীগ নেতা আটক

নিজস্ব প্রতিনিধিঃ টাকার বিনিময়ে প্রতিবন্ধী ও ভিজিডি কার্ড করে দেওয়ার নামে প্রতারণা করা সেই ছাত্রলীগ নেতাকে আটক করেছে গোদাগাড়ী থানা পুলিশ। তবে তাকে বাঁচাতে নাটকীয় ভুমিকা পালন করে রাজশাহীর গোদাগাড়ি থানা পুলিশ।

গত ১৫ ফেব্রুয়ারী ” প্রতিবন্ধী ও ভিজিডি কার্ড বিক্রির অভিযোগ ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে” শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ হয় । এরপর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ জানে আলম ঐ ভুক্তভোগীদের মামলা করার পরামর্শ দেন। ইউএনও’র পরামর্শ মোতাবেক ১৬ ফেব্রুয়ারী গোদাগাড়ী মডেল থানায় ঐ ভুক্তভোগীরা গেলে মামলা না নিয়ে একটি অভিযোগ গ্রহন করে। এরপর অভিযোগটি তদন্তের জন্য প্রেমতলী তদন্ত কেন্দ্রে দেওয়া হয়। অভিযোগটির তদন্ত করেন উপ-পরিদর্শক (এসআই) আরিফ হোসেন। তদন্তকারি কর্মকর্তা ঘটনার সত্যতা পেলেও ছাত্রলীগ নেতা হওয়ার সুবাদে পুলিশ ঐ প্রতারকের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে গড়িমশি করেন। এদিকে প্রতারণা করা সেই ছাত্রলীগ নেতা বিভিন্নভাবে হুমকি ধামকি দিতে থাকে অভিযোগকারীদের । উল্টো বাদীর কাছে আশি হাজার টাকা পাবে মর্মে চাপ দিতে থাকে সেই নেতা। এতে বাদী মারুফা খাতুন কঠিন হতাশায় পড়েন।  অবশেষে ২৭ ফেব্রুয়ারী সংবাদ প্রকাশ করা সাংবাদিকরা পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেনকে অবগত করেন। এরপর পুলিশ সুপারের নির্দেশে ২৭ ফেব্রুয়ারী সন্ধ্যায় প্রতারণা করা সেই ছাত্রলীগ নেতা মুক্তার আলীকে গ্রেফতার করেন।পরে সাংবাদিকরা গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত হতে পুলিশ ক্যাম্পে ফোন দিলে তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ রফিকুল ইসলাম গ্রেফতারের বিষয়টি অস্বীকার করেন। কিন্তু পুলিশের পক্ষ থেকে বাদীকে ফোন দিয়ে ডাকা হয় এবং আপোসের জন্য বলা হয়। পরে বাদীর কথা মতে পরের দিন অর্থাৎ ২৮ ফেব্রুয়ারী দুপুরে অভিযোগটি দন্ডবিধি  ৪০৬/৪২০ ধারায়   মামলা হিসেবে এজাহার ভুক্ত করা হয়। যার মামলা নাম্বার জিআর ৫৪/২০২৩। সাংবাদিকরা প্রেমতলী তদন্তকেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে আসামী মুক্তারের আটক হওয়া ছবি নিতে চাইলে পুলিশ তাতে বাধা দেয় এবং পুলিশের দাবী এভাবে ছবি দিলে তাদের চাকরি থাকবে না।

উল্লেখ্য, মামলা বরাতে জানা যায়, প্রায় এক বছর আগে অর্থাৎ ২২ সালের ২ এপ্রিল গোদাগাড়ী উপজেলার চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়নের চর নওশেরা খাসমহল  (ডাগরিপাড়া) গ্রামের মিন্টু রহমানের স্ত্রী মোসাঃ মারুফা খাতুন (৪০) ও চর ডাগরিপাড়া গ্রামের মাবুদ আলীর ছেলে মুরসালিন এর থেকে প্রতিবন্ধী ও ভিজিডি কার্ড করে দেওয়ার নামে কয়েকধাপে মোটা অংকের টাকা নেয়  ১ নং আসামী মোঃ মুক্তার হোসেন (৩২), পিতা-মৃত মাহতাব আলী সাং- উত্তর কানাপাড়া (বেটাপাড়া) (বর্তমান সাং- বসন্তপুর মোড়, মিতালী কনজিমার কোঃ অপারেটিভ সোসাইটি) ২ নং মোঃ হাফিজুল ইসলাম (৩৫) পিতা- মোঃ তাহের কালু, সাং- ৫নং চর আষাড়িয়াদহ গ্রাম, থানা- গোদাগাড়ী, জেলা- রাজশাহী।  মারুফা ও মোরসালিন কে আসামী মুক্তার বলে যে, তোমাদের এলাকায় যারা প্রতিবন্ধী ও গরীব লোক আছে তাদেরকে প্রতিবন্ধী এবং চাউলের কার্ড করে দিব। যারা প্রতিবন্ধী কার্ড পেতে ইচ্ছুক তাদেরকে প্রত্যেককে নগদ ১০,০০০/- (দশ হাজার) টাকা করে এবং চাউলের কার্ড পেতে ইচ্ছুক তাদেরকে প্রত্যেককে নগদ ৮,০০০/- (আট হাজার) টাকা করে দিতে হবে। উক্ত আসামীদ্বয়ের কথামত চর আষাড়িয়াদহ এলাকার ২০ জনকে প্রতিবন্ধী কার্ড করে দেওয়ার জন্য ১০,০০০/- (দশ হাজার) টাকা করে সর্বমোট ২,০০,০০০/- (দুই লক্ষ টাকা) গত ০২/০৪/২০২২ খ্রিঃ তারিখ বেলা অনুমান ১২:৩০ ঘটিকার সময় গোদাগাড়ী থানাধীন বসন্তপুর মোড়ে উক্ত আসামীদ্বয়ের “মিতালী কনজিমার কোঃ অপারেটিভ সোসাইটি” এর অফিস কক্ষে সাক্ষী ১। মোঃ মোরসালিন (৩৭), পিতা- মোঃ মাবুদ আলী সাং- ৫নং গ্রাম ২। মোঃ আনাবর (৬০) পিতা- আবু তালেব, সাং- চর নওশেরা ডাগরিপাড়া, উভয় থানা- গোদাগাড়ী, জেলা- রাজশাহীদ্বয়ের উপস্থিতিতে ১নং আসামী মোঃ মুক্তার হোসেন এর হাতে প্রদান করে। পরবর্তীতে চাউলের কার্ড করে দেওয়ার জন্য মোঃ মোরশালিন ২০ জনের নিকট হইতে ৮,০০০/- (আট হাজার) টাকা করে সর্বমোট ১,৬০,০০০/- (এক লক্ষ ষাট হাজার) টাকা গত ১০/০৪/২০২২ খ্রিঃ তারিখ বেলা অনুমান ১০:০০ ঘটিকার সময় গোদাগাড়ী থানাধীন বসন্তপুর মোড়ে উক্ত আসামীদ্বয়ের “মিতালী কনজিমার কোঃ অপারেটিভ সোসাইটি” এর অফিস কক্ষে আমার এবং ২নং সাক্ষী আনাবর এর উপস্থিতিতে ২নং আসামী হাফিজুল ইসলাম এর হাতে হাতে প্রদান করে। কিন্তু উক্ত আসামীদ্বয় আমাদেরকে কোন প্রতিবন্ধী ও চাউলের কার্ড করে দেই নাই । প্রতিবন্ধী ও চাউলের কার্ড না পাওয়ায় আমরা উক্ত আসামীদ্বয়কে আমাদের টাকা ফেরত দিতে বলিলে উক্ত আসামীদ্বয় আজ দিব কাল দিব বলিয়া কালক্ষেপন করিতে থাকে। উক্ত ঘটনার বিষয়ে স্থানীয়ভাবে একাধিকবার আপোষ মিমাংসার চেষ্টা করি। উক্ত আসামীদ্বয় আমাদেরকে প্রতিবন্ধী ও চাউলের কার্ড করে দেওয়ার কথা বলে প্রতারনামূলক ভাবে বিশ্বাস ভঙ্গ করিয়া আমাদের নিকট হইতে সর্বমোট নগদ (২,০০,০০০+ ১,৬০,০০০) = ৩,৬০,০০০/- (তিন লক্ষ ষাট হাজার) টাকা আত্মসাৎ করে।

পরে ঐ এলাকার অসংখ্য ভুক্তভোগী ও সাধারণ মানুষ মিডিয়ারকর্মীদের কাছে অভিযোগ করে বলেন, এই মুক্তার পুলিশের সাথে আতাত করে নানান অপকর্ম করে, এতে পুলিশও ভাগ পায়। শুধু তাই নয় অভিযোগ করেও মুক্তারকে ধরেনি পুলিশ। পরে আমরা শুনলাম এসপি’কে জানানোর পর মুক্তারকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

এবিষয়ে রাজশাহী জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও মিডিয়া মুখ্যপাত্র ইফতেখায়ের আলমের সাথে মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি জানান, সেবার জন্য পুলিশ সবসময় আন্তরিক। গ্রেফতারের পর  আসামীর ছবি নেওয়া যাবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন,  ভিতরে সেলের ছবি দেওয়া হয়না। আমরা গ্রেফতার করে পুলিশসহ ছবি দিয়ে থাকি। আবার অনেক সময় আসামীর একক ছবি দিয়ে থাকি। আসামী মুক্তারের ছবি নেওয়ার বিষয়ে বললে তিনি বলেন,  আমি জেনে জানাতে পারবো।

এখন সকলের মনে প্রশ্ন থেকেই গেল,  ছাত্রলীগ নেতা বলে কি পুলিশ এরকম করছে? যদি তাই হয়, তাহলে কি নায্য বিচার পাবে ভুক্তভোগীরা?

Next Post

পলাশবাড়ীতে যুবলীগের শান্তি সমাবেশ অনুষ্ঠিত

মঙ্গল ফেব্রু. ২৮ , ২০২৩
পলাশবাড়ী(গাইবান্ধা)প্রতিনিধিঃ- দেশব্যাপী বিএনপি জামাতের সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে এবং বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে সারাদেশের ন্যায় পলাশবাড়ী উপজেলার কিশোরগাড়ী ইউনিয়ন আওয়ামী যুবলীগ শাখার  আয়োজনে এক শান্তি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ২৮ ফেব্রুয়ারী মঙ্গলবার বিকেলে কাশিয়াবাড়ী বাজারে অস্থায়ী কার্যালয়ে কিশোরগাড়ী ইউনিয়ন আওয়ামী যুবলীগের […]

এই রকম আরও খবর

Chief Editor

Johny Watshon

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat. Duis aute irure dolor in reprehenderit in voluptate velit esse cillum dolore eu fugiat nulla pariatur

Quick Links