আভা ডেস্ক: সোমবার সকালে রাজধানীর আব্দুল্লাহপুর থেকে প্রাণ সংশয়ের ভয় নিয়ে বাসে উঠেছেন বেসরকারি কোম্পানিতে কমর্রত নঈম হাসান। কেননা আব্দুল্লাহপুর স্টপে বাস দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় নিউমাকের্টগামী বিকাশ ও গাজীপুর থেকে আসা একই রুটের ভিআইপি পরিবহনের ঠোকাঠুকিতে প্রাণ হারানোর ঝুঁকিতে পড়েছিলেন তিনি। কোনোমতে দৌড়ে বিকাশ পরিবহনে উঠে প্রাণ বাঁচিয়েছেন তিনি।
সকালের এমন মারাত্মক ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে নঈম বলেন, ‘স্রেফ প্রাণে বেঁচে গেছি আজ। দাঁড়িয়ে ছিলাম আব্দুল্লাহপুরের পলওয়েল শপিং সেন্টারের একটু আগে। সেখানে বাসগুলো যাত্রীদের উঠানোর জন্য রেষারেষি শুরু করে। ধানমÐি যাব তাই বিকাশ পরিবহন আসতেই সামনে এগিয়ে যাই। বাসে ওঠার আগ মুহূতের্ বিকাশের পেছন থেকে বামপাশের ফুটপাত ঘেঁষে দ্রæত এগিয়ে আসছিল ভিআইপি। বিকাশে কাক্সিক্ষত যাত্রী হয়ে যাওয়ায় বাসটির হেলপারও গেট বন্ধ করে দিচ্ছিল। আবার পেছনে ফুটপাতের দিকেও যাওয়া সম্ভব না। বিকাশের গেট ঠেলে হেলপারকে ধাক্কা দিয়ে বাসে উঠতে বাধ্য হলাম। না হলে ভিআইপির ধাক্কায় আজও খবরের শিরোনাম হয়ে যেতে পারতাম।’
বিকাশ পরিবহনে এ কথা বলতে বলতে পাশ থেকে মেরিনা নামের আরেক যাত্রী বলেন, এই যে বিকাশ ঘেঁষে ভিআইপি দাঁড়াল, আর তাতে বিকাশে যাত্রী ওঠা বন্ধ হয়ে গেল। ড্রাইভারদের এই মনোভাবের জন্য এই ঠোকাঠুকি বন্ধ হওয়ার না। আর এ কারণে প্রাণনাশও বন্ধ হবে না। আর রাস্তায় কেউ মারা গেলে ড্রাইভারদের তো কিছু হয় না। তারা পালিয়ে যায়। যা ভোগান্তি তখন মালিকদের। তাই তারাও সংশোধিত হয় না। আর দুঘর্টনা ঘটতেই থাকে।
এ বিষয়ে ভিআইপি পরিবহনের ড্রাইভার রিপনের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, একই রুটের বাসের মধ্যে একটা কড়া প্রতিযোগিতা থাকে। কারণ কেউ আর আগের মতো বা শুক্রবার দিনের মতো ট্রিপ দিতে পারে না। এত যানজটের কারণে আমরা রাস্তাতেই থাকি বেশির ভাগ সময়। কিন্তু তেলের খরচ তো বাড়ছে। মালিকও তো জমা কমায় নাই। এখন আমরা কি করব?
কিন্তু সে কারণে এভাবে ঝুঁকি নিয়ে গাড়ি চালাবেন- এমন প্রশ্নের জবাবে রিপন আরও বলেন, ওই যাত্রী দাঁড়ায় থাকলে ব্রেক করতাম। কিন্তু লসই হইছে উনি বিকাশেই উঠে গেছে।
তবে এভাবে আর চালাব না মন্তব্য করে রিপন নিজেই আবার বলেন, বলা যায় না, ওখানে ব্রেক ফেল করলেই তো আবার মারাত্মক দুঘর্টনা ঘটে যেতে পারত।
এ সময় অনেক যাত্রী জানান, বাসের এই ঠোকাঠুকি বা প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রেও আইন দরকার। রাস্তায় এমনটা দেখলেই ট্রাফিক পুলিশের সেই আইনের আওতায় মামলা দেয়া উচিত। কিন্তু তাতেও মনে হয় সমস্যার সমাধান হবে না। কারণ অসৎ ট্রাফিক পুলিশের কারণে যেখানে-সেখানে বাসগুলো দঁাড়িয়ে যাত্রী তোলে। আবার অদক্ষ ড্রাইভারদের সংখ্যা না কমলেও এ সমস্যার সমাধান হবে না।
তাছাড়া একাধিক ড্রাইভারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাজধানীতে চলমান বেশির ভাগ গণপরিবহনের ড্রাইভারদের নেই কোনো ড্রাইভিং লাইসেন্স বা সঠিক কোনো প্রশিক্ষণ। তারা আগে বাসের হেলপার ছিল। গাড়ির ড্রাইভারদের কাছ থেকে গাড়ি চালানো শিখে রাস্তায় নেমে গেছে তারা।
আব্দুল্লাহপুর থেকে মিরপুর হয়ে শ্যামলীগামী তেঁতুলিয়া বাসের ড্রাইভার আজিজ মিয়া বলেন, ‘গাড়ি চালাইতে লাইসেন্স লাগে না, সাহস লাগে। আর সাজেের্ন্ট মাঝে মধ্যে গাড়ি আটকাইলে টাকা দিয়া ছাড়ায়া নেই। সমস্যা হয় না। বেশি সমস্যা হইলে মালিকরা আইসা সমাধান করে।’
আর বাসগুলোর এ ঠোকাঠুকি বন্ধের ক্ষেত্রে এয়ারপোটর্ বা কারওয়ান বাজার এলাকার মতো আলাদা লেনের পরামশর্ রেখেছেন অনেকেই। এ বিষয়ে বেসরকারি কোম্পানিতে কমর্রত সিভিল ইঞ্জিনিয়ার সবুর আলী জানান, আলাদা লেন থাকলে যাত্রী পরিবহনগুলো সেখানে দাঁড়িয়ে নিবিের্ঘœ যাত্রী ওঠাবে। ঠোকাঠুকি আর হবে না। কারণ তখন তারা চাইলেই এক বাস আরেক বাসকে ওভারটেক করে যেতে পারবে না।
ট্রাফিক পুলিশের কড়া নজরদারি দরকার জানিয়ে তিনি বলেন, এর একটা ভালো উদাহরণ এয়ারপোটর্ এলাকা। সেখানে দেখেন উত্তরা থেকে মহাখালীর দিকে যাওয়ার পথে গণপরিবহনগুলো অনেক আগেই বাম পাশে আলাদা লেনে বাধ্যতামূলক সিরিয়ালে থেকেই যাত্রী ওঠাচ্ছে। পুলিশও এ পাশে লোকাল বাসে যাত্রী ওঠাতে দেখলে তেড়ে আসে। আবার ঠিক উল্টো পাশেই অথার্ৎ মহাখালী থেকে উত্তরা আসার ক্ষেত্রে রাস্তার সে পাশে নেই কোনো নিয়ম। বাসও যেখানে-সেখানে দাঁড়িয়ে ঠোকাঠুকি করা ছাড়াও যানজটেরও একটা কারণ হয়ে দঁাড়াচ্ছে এখানে।
কালেরকন্ঠ