আভা ডেস্ক : গাজীপুরের কালিয়াকৈরে বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটিতে দেশি-বিদেশি ৯ কোম্পানি প্রায় ১২০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে। যেখানে কর্মসংস্থান হবে ২৫ হাজার লোকের।
মঙ্গলবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এক অনুষ্ঠানে কোম্পানিগুলোর সঙ্গে হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের জায়গা বরাদ্দের চুক্তির আনুষ্ঠানিকতা করা হয়েছে।
এ সময় ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার, তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক উপস্থিত ছিলেন।
তথ্যপ্রযুক্তি সচিব জুয়েনা আজিজের সভাপতিত্বে ওই অনুষ্ঠানে হাইটেক পার্কের এমডি হোসনে আরা বেগম কোম্পানিগুলোর প্রতিনিধিদের সাথে চুক্তির স্মারক বিনিময় করেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মোস্তাফা জব্বার বলেন, হাইটেক পার্কে বিনিয়োগকারীদের জন্য আর্থিক প্রণোদনাসহ যতগুলো বিষয় ছিল সব প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় নিজে সমাধান করে দিয়েছেন। ফলে বিনিয়োগকারীরা যেন দ্রুত বিল্ডিং বানাতে পারে, কাজ শুরু করতে পারে তার সব ইকোসিস্টেম এখন তৈরি।
বিনিয়োগকারীদের তিন বছরের সময়ের জন্য অপেক্ষায় না থেকে যত দ্রুত সম্ভব কাজ শুরুর পরামর্শ দিয়ে মন্ত্রী বলেন, যে গতিতে বাংলাদেশের উন্নয়ন এগিয়ে যাচ্ছে তাতে অপেক্ষা করলে ট্রেন মিস হয়ে যাবে।
জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, হাইটেক পার্কে কোম্পানিগুলোর এই যে বিনিয়োগ সেখানে পরোক্ষভাবে সরকারও অংশগ্রহণ করছে। হয়ত একটা জায়গা কিনতে ২০০ কোটি টাকা লাগতো সেটা দিতে হচ্ছে না।
কাজের কোয়ালিটি ঠিক রাখার পরামর্শ দিয়ে পলক বলেন, সরকার যে সাবসিডি দিচ্ছে সেটা প্রফিটে না নিয়ে বরং প্রডাকশনে ব্যবহার করে ব্যবহারকারীদের কাছে যেন পণ্য বা সেবা কস্ট ইফেক্টিভ করা হয়।
তিনি বলেন, এক সময় এই হাইটেক পার্কে জায়গা নেয়ার জন্য সবাই লাইন দেবে। তখন হয়ত আর জায়গা দেয়া যাবে না।
বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটির ইন্ডাস্ট্রিয়াল জোনে এই কোম্পানিগুলো জায়গা পেয়েছে। পার্কে বরাদ্দ পাওয়া প্লটের ভাড়া হিসেবে বছরে প্রতি বর্গমিটার দুই ডালার করে দিতে হবে কোম্পানিগুলোকে। বরাদ্দের এই চুক্তি চল্লিশ বছরের।
এ ব্লকের ১ নম্বর প্লটে দেড় একর জায়গা বরাদ্দ পেয়েছে রবি আজিয়াটা লিমিটেড। রবি সফটওয়্যার কোম্পানি ক্যাটাগরিতে এই বরাদ্দ নিয়েছে। ২ দশমিক ২৬ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে তারা। যেখানে চাকরি দেয়া হবে ১১০ জনের।
রবি এখানে ডিজিটাল সার্ভিস ম্যানুফ্যাকচারিং ইন্ডাস্ট্রি করবে। নিজেদের নেটওয়ার্ক সংক্রান্ত কাজগুলোও করবে। যেখানে আইটি, আইটিইএস, আইওটি বিষয়ক কাজ রয়েছে। তাছাড়া তাদের আইটি বিভাগকে সেখানে নিয়ে যাবে।
দুই এবং তিন নম্বর প্লটে দুই একর করে জায়গা পেয়েছে নাজডাক টেকনোলজিস এবং বিজেআইটি।
নাজডাক বিনিয়োগ করবে ৬১ দশমিক ৭ মিলিয়ন ডলার। তারা মিনি পিসি অ্যাসেম্বেলিং, টেকনিক্যাল ট্রেনিং এবং সফটওয়্যার নিয়ে কাজ করবে। ৩৬০০ জনের কর্মসংস্থান হবে এখানে।
বিজেআইটি বিনিয়োগ করবে ১০ মিলিয়ন ডলার। তাদের ৪ হাজার লোকবল দরকার হবে। এখানে সফটওয়্যার, মোবাইল অ্যাপ, আইওটি, ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন, অটোমেশন টেস্টিং সার্ভিসসহ আইটি কনসালটেন্সিও করবে বিজেআইটি।
চার এবং পাঁচ নম্বর প্লটে তিন একর করে পেয়েছে কেডিএস গ্রুপ এবং ইন্টারক্লাউড।
কেডিএস বিপিও, সফটওয়্যার ডেভেলমেন্ট, ডেটা সেন্টার করবে। তাদের বিনিয়োগ ১০ মিলিয়ন ডলার। এখানে কর্মসংস্থান হবে ৫ হাজার জনের।
ইন্টারক্লাউড বিনিয়োগ করবে ২১ দশমিক ৭১ মিলিয়ন ডলার। তাদের কাজ সফটওয়্যারে, কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা ৭৭০ জনের।
ছয় নম্বর প্লটে দুই একর জায়গায় এসেছে জেনেক্স, তারা ডেটা সেন্টার, টিওটি রিসার্চ, আউটসোর্সিং করবে। তাদের বিনিয়োগ ১০ মিলিয়ন ডলার। লোকবল নেবে ১১০ জন।
সাড়ে তিন একর জায়গার আট নম্বর প্লটে ম্যানুফ্যাকচারিং প্লান্ট করবে ফেয়ার ইলেক্ট্রনিক্স। তারা ল্যাপটপ এবং কমিউনিকেশন ডিভাইস তৈরি করবে। তাদের বিনিয়োগ ১০ মিলিয়ন ডলার। ২৫০ জনের চাকরি হবে সেখানে।
বি ব্লকের ১১ নম্বর প্লটে আছে বিজনেস অটোমেশন। তারা দুই একর জায়গা পেয়েছে। তাদের বিনিয়োগ ৫ মিলিয়ন এবং কর্মসংস্থান ১০০ জন।
১২ নম্বর প্লটে দুই একর জায়গায় জেআর এন্টারপ্রাইজ। কোম্পানিটি এখানে ডেটা ও ট্রেনিং সেন্টার, ই-ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম নিয়ে কাজ করবে। তাদের বিনিয়োগ ১০ মিলিয়ন ডলার। তারা এখানে ১১০ জনকে চাকরি দেবে।
কোম্পানিগুলোর সরাসরি নিয়োগের এসব চাকরি ছাড়াও কারখানাগুলোর কার্যক্রম পরিচালনা ও প্রডাকশন ইকোসিস্টেমেও অনেক কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে বলে বিনিয়োগকারীরা জানান।
টেকশহর ডটকম