ইসিতে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের বিরুদ্ধে নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিনিধি: রাজশাহী-২ আসনে নৌকা প্রতীকের পরাজিত প্রার্থী ফজলে হোসেন বাদশা দাবি করেছেন, স্বতন্ত্র প্রার্থীকে বিজয়ী করতে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করেছে। সিটি কর্পোরেশনের সর্বোচ্চ ব্যক্তির নির্দেশে কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের অধিকাংশ ভোটারদের সরকারি সুযোগ সুবিধা বন্ধের হুমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করেন বলে অভিযোগ করেছেন ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক।
৯ জানুয়ারী (মঙ্গলবার) ঢাকায় নির্বাচন কমিশনে তার পক্ষে তার আইনজীবী এসব নিয়ে একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন।
লিখিত অভিযোগে বলা হয়, ”নির্বাচনের প্রচারণার শুরু থেকেই আচরণবিধি লঙ্ঘন করে এই আসনে ‘কাঁচি’ প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষ থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নাম ব্যবহার করে ভোট প্রার্থনা করা হয়। আমি আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের মনোনীত প্রার্থী হবার পরেও উক্ত স্বতন্ত্র প্রার্থী নিজেকে স্থানীয় আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে দাবি করে ভোটারদের বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা চালান। প্রচারণার শুরু থেকে ‘রাজশাহী সিটি করপোরেশন’ নামক স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানটি এর কর্মচারীদের সুনির্দিষ্টভাবে ‘কাঁচি’ প্রতীকের প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী তৎপরতায় যুক্ত করে। শুরু থেকেই এই প্রতিষ্ঠানটি সুষ্ঠু নির্বাচনের পথে অন্তরায় তৈরি করে। ভোটের দিন সকালে সংবাদমাধ্যমের সামনে আমি সিটি করপোরেশনের এই ভূমিকা নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করছে বলে আশঙ্কাও প্রকাশ করি। এমনকি সিটি করপোরেশনের সর্বোচ্চ ব্যক্তির নির্দেশে হাতে গোনা কয়েকজন ব্যতীত ওয়ার্ড কাউন্সিলরগণ নিজ নিজ ওয়ার্ডে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ‘কাঁচি’ প্রতীকে ভোট না দিলে সরকারি বিভিন্ন সেবা থেকে বঞ্চিত করার হুমকি প্রদান করেন। সিটি করপোরেশনের সর্বোচ্চ ব্যক্তির নির্দেশে এই আসনে হাতে গোনা কয়েকজন ব্যতীত সব ওয়ার্ড কাউন্সিলরবৃন্দ টিসিবির সরকারি সুবিধাভোগীদের কার্ড আটকে রেখে ‘কাঁচি’ প্রতীকে ভোট না দিলে সেই কার্ড ও সুবিধা ফেরত দেয়া হবে না বলে হতদরিদ্র ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে হুমকি প্রদান করেন। বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে আমি অভিযোগও করি। নির্বাচনের আগের রাতে ২১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর নিজাম উল আজিমকে এসব তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে যৌথ বাহিনী আটক করেও নিয়ে যায়। যদিও আর সব ওয়ার্ডে সেই একই প্রক্রিয়া চলমান থাকে। নির্বাচনের দিন উল্লেখিত ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের নিজস্ব বাহিনী প্রতিটি ওয়ার্ডে ভোটকেন্দ্রে ‘নৌকা’ প্রতীকের ভোটারদের চিহ্নিত করে তাদের ভোটকেন্দ্রে আসতে নিরুৎসাহিত করে। এই ক্রমাগত হুমকি ও ভয়ভীতির কারণে ভোটের দিন ভোটাররা নির্ভয়ে ও নির্বিঘ্নে ভোটকেন্দ্রে আসতে পারেননি। যার প্রভাব পড়েছে ভোট প্রদানের হারে। রাজশাহী-২ আসনে এ কারণেই নিম্নতম ভোট গ্রহণের হার ২৬ শতাংশের কাছাকাছি। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি এসব হুমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করা না হলে এই নির্বাচনে ভোটগ্রহণের হার আরও বাড়তো এবং তার প্রভাব পড়তো ফলাফলে। পাশাপাশি এই নির্বাচনে ভোট গ্রহণের হারও প্রশ্নবিদ্ধ হতো না। নির্বাচনী প্রক্রিয়ার শুরু থেকেই রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের আওতায় প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে গৃহীত প্রকল্প সিডিসি’র কর্মীদের ‘কাঁচি’ প্রতীকের পক্ষে ব্যবহার করা হয়েছে। প্রতিটি ওয়ার্ডে সিডিসি টাউন ফেডারেশন, সিএইচডিএফ, ক্লাস্টার ও সিডিসি কর্মীদের সরকারি সুযোগ সুবিধার প্রলোভন দেখিয়ে এবং ক্ষেত্রবিশেষে প্রয়োজনমাফিক সুবিধা বন্ধের হুমকি দিয়ে ‘কাঁচি’ প্রতীকের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশগ্রহণ থেকে শুরু করে ভোটপ্রদানেও বাধ্য করা হয়। অর্থ্যাৎ, রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনকে পুরোপুরি ’কাঁচি’ প্রতীকের প্রার্থীর পক্ষে এই নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে ব্যবহার করা হয়েছে।”

অভিযোগে আরও বলা হয়, “১৫ নভেম্বর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরেও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন অব্যাহত রাখেন। সেই সঙ্গে তিনি সর্বশেষ সিটি নির্বাচনে বিজয়ী হবার পর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের প্রজ্ঞাপন জারি হওয়া ব্যতিরেকেই নিজের পদবীর সঙ্গে ব্র্যাকেটে ‘প্রতিমন্ত্রী’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন এবং তা দিয়ে নির্বাচনকে প্রভাবিত করার চেষ্টা চালিয়েছেন। রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের নতুন স্ট্যাটাস নির্ধারিত না হলেও তিনি তার গাড়িতে জাতীয় পতাকা উড়িয়ে চলাচল করেছেন, যা শুধু আচরণবিধি লঙ্ঘনই নয়, গুরুতর অনিয়ম ও রাষ্ট্রীয় আইনের লঙ্ঘনও বটে। ভোটের দিন নির্বাচনী আচরণবিধি পুরোপুরি লঙ্ঘন করে ‘কাঁচি’ প্রতীকে ভোটদানের শর্তে তাদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন ওয়ার্ডের বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের আনানেয়ার ব্যবস্থা করে দেয়া হয়েছে। বেশিরভাগক্ষেত্রে রিকশা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। তারা চিহ্নিত ভোটারদের বাসা থেকে ভোট কেন্দ্রে এনে ভোট নিশ্চিত করে আবার ফিরিয়ে বাসায় নিয়ে গেছে। এই রিকশার পুরো ব্যয়ভার বহন করা হয়েছে ‘কাঁচি’ প্রতীকের প্রার্থীর পক্ষ থেকে, যা নির্বাচনী আচরণবিধির পরিপন্থি।

ফজলে হোসেন বাদশা এসব অভিযোগের সপক্ষে যথাযথ প্রমাণ উপস্থাপনের কথাও জানান। ১৪ দলের পরাজিত এই নেতা নির্বাচন কমিশনের কাছে এসব অভিযোগ লিখিতভাবে তুলে ধরে এর সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি করেছেন।

Next Post

তানোরে সাংবাদিকের উপর হামলা, আটক-১

মঙ্গল জানু. ৯ , ২০২৪
তানোর প্রতিনিধি: রাজশাহীর তানোরে সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে সরোয়ার হোসেন নামের এক সাংবাদিকের উপর হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এঘটনায় হামলাকারী ইদ্রিস নামের বখাটেকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। তার বাড়ি পৌর সদর এলাকার কুঠিপাড়া গ্রামে।সে মৃত ব্যাঙ্গার পুত্র। মঙ্গলবার দুপুরের দিকে গোল্লাপাড়া ফুটবল মাঠের পশ্চিমে চা স্টল সংলগ্ন জায়গায় ঘটে মারপিটের ঘটনা। […]

এই রকম আরও খবর

Chief Editor

Johny Watshon

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat. Duis aute irure dolor in reprehenderit in voluptate velit esse cillum dolore eu fugiat nulla pariatur

Quick Links