আরপিও সংশোধন ও দেড় লাখ ইভিএম কেনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

Ava Desk : আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পরীক্ষামূলকভাবে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারের চিন্তাভাবনা করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তবে কতগুলো আসন বা ক’টি কেন্দ্র্রে এ মেশিন ব্যবহার করা হবে সে বিষয়ে এখনও চূড়ান্ত হয়নি।
জাতীয় সংসদে সংশোধিত আরপিও অনুমোদন এবং দেড় লাখ ইভিএম কেনার প্রকল্প অনুমোদনের পর কমিশন সভায় ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন ব্যবহারের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এদিকে নির্বাচন কর্মকর্তাদের ইভিএম ব্যবহারের বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে।
জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে নতুন করে আর আনুষ্ঠানিক সংলাপে বসছে না ইসি। তবে সেপ্টেম্বরে কেন্দ্রীয়ভাবে আয়োজিত ইভিএম মেলায় আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের আমন্ত্রণ জানাবে কমিশন। নেতারা চাইলে সেখানে এ বিষয়ে কথা বলতে পারবেন।
এর আগে ভোটিং মেশিন ব্যবহার নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার আভাস দিয়েছিলেন ইসির সচিব। বৃহস্পতিবার সংসদ নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারের বিধান যুক্ত করে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। জাতীয় নির্বাচনে এ মেশিন ব্যবহারের জন্য আরপিও সংশোধনের সিদ্ধান্তে ভিন্নমত পোষণ করে নোট অব ডিসেন্ট দিয়ে সভা বর্জন করেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার।
জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার ড. মো. রফিকুল ইসলাম শুক্রবার যুগান্তরকে বলেন, আমরা জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের বেসিক প্রভিশন সৃষ্টি করতে আরপিও সংশোধনীর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এটি আইন মন্ত্রণালয়, মন্ত্রিসভা হয়ে সংসদে উঠবে। এসব প্রক্রিয়া শেষ করতে কতটুকু সময় লাগবে, তফসিলের আগে কতটুকু সময় থাকবে, আমরা কতটুকু প্রস্তুতি নিতে পারব- এরকম অনেক কিছুর ওপর ইভিএম ব্যবহার নির্ভর করছে।
তিনি বলেন- আমরা বলে আসছি, ইভিএম ব্যবহারে স্বচ্ছতা ও নির্বাচনে ভৌতিক ফল যাতে না আসে সে বিষয়টি নিশ্চিত করব।
এক নির্বাচন কমিশনার বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কিছু আসনের সামান্য কয়েকটি কেন্দ্রে পরীক্ষামূলকভাবে ইভিএম ব্যবহার করা হতে পারে। সে লক্ষ্যে প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে আরপিও সংশোধন ও দেড় লাখ ইভিএম কেনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এছাড়া নির্বাচন কর্মকর্তাদের ব্যাচভিত্তিক ইভিএম ব্যবহারের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। তবে অবশ্যই বাস্তবভিত্তিক সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
এদিকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একাধিক দিনে ভোট গ্রহণের সুযোগ রেখে আরপিওতে নতুন বিধান অন্তর্ভুক্তের প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছে কমিশন। বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত নির্বাচন কমিশনের সভায় একাধিক দিনে ভোট গ্রহণসহ ২০টির বেশি সংশোধনীর সুপারিশ করেছিল আইন ও বিধিমালা সংস্কার কমিটি। এতে নির্দিষ্ট কার্ড ছাড়া পোলিং এজেন্টদের ভোট কক্ষে প্রবেশের অনুমোদন না দেয়ার বিষয় অন্তর্ভুক্ত ছিল।
এছাড়া, ব্যয় মনিটরিং এবং নির্বাচনে অভিযোগ প্রশমন কৌশলসহ কয়েকটি নতুন প্রস্তাব অন্তর্ভুক্তের সুপারিশ করা হয়। আরপিওতে বর্তমানে ৯৫টি ধারা আছে। ধারার সংখ্যা ৯৫ থেকে বাড়িয়ে ১১৮ তে উন্নীত করার প্রস্তাব করা হয়। কিন্ত কমিশন ইভিএম, অনলাইনে মনোনয়নপত্র দাখিলসহ কয়েকটি বিষয়ে আরপিওতে সংশোধনী আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বাকিগুলো নাকচ করে দেয়। আরপিও সংশোধনীর প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করতে সরকারি ছুটি সত্ত্বেও আজ শনিবার ও রোববার ইসি সচিবালয় খোলা থাকবে।
নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরী বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করে ভালো ফল পাওয়া গেছে। রাজশাহী ও সিলেট সিটি নির্বাচনে ইভিএম নিয়ে কোনো প্রশ্ন ছিল না। স্থানীয় সরকার নির্বাচনের আইনগুলোতে ইভিএম ব্যবহারের বিধান রয়েছে। কিন্তু জাতীয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে কোনো আইন নেই। এ কারণে আরপিওতে ইভিএমের বিধান অন্তর্ভুক্তের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। যেহেতু ৯ সেপ্টম্বর জাতীয় সংসদের অধিবেশন শুরু হচ্ছে। তাই কিছুটা তাড়াহুড়ো করে আরপিও সংশোধন করা হচ্ছে।
জানা গেছে, ৯ সেপ্টম্বর জাতীয় সংসদ অধিবেশন শুরু হচ্ছে। ৩১ অক্টোবর থেকে শুরু হবে জাতীয় নির্বাচনের কাউন্টডাউন। এ হিসাবে জাতীয় নির্বাচনের আগে এটিই শেষ অধিবেশন হতে পারে। জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের আইনগত ভিত্তি তৈরি করতে এ অধিবেশনেই আরপিও সংশোধনী অনুমোদনের প্রয়োজন হবে। ডিসেম্বরের শেষ দিকে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা রয়েছে। অক্টোবরের শেষ বা নভেম্বরের শুরুতে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হতে পারে।
জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারে আরপিওতে যত সংশোধনী : কমিশন সূত্রে জানা গেছে, জাতীয় নির্বাচনে ইভিএমের ব্যবহার নিয়ে বিএনপিসহ বেশিরভাগ নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের বিরোধিতার মধ্যে তড়িঘড়ি করে বৃহস্পতিবার আরপিও সংশোধনের সিদ্ধান্ত নেয় কমিশন। ওই সভায় আরপিওতে ইভিএমের বিধান যুক্ত করতে কমপক্ষে ৭টি ধারায় সংশোধনের প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়।
প্রস্তাবিত সংশোধনীর ধারাগুলো হচ্ছে- ২, ২২, ২৪, ২৫, ২৬, ৩৭ ও ৮৬। এর মধ্যে ২(৩) ধারায় ইভিএমের সংজ্ঞা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
ধারা ২২-এ বলা হয়েছে, একাধিক প্রার্থী থাকলে গোপন ব্যালটের মাধ্যমে অথবা ইভিএম ব্যবহারের মাধ্যমে ভোট অনুষ্ঠিত হবে। আরপিওতে প্রস্তাবিত সংশোধনীতে ২৪ নম্বর ধারাটি নতুন সংযোজনের প্রস্তাব করা হয়েছে। ২৪(১) ধারায় জাতীয় নির্বাচনে এক বা একাধিক নির্বাচনী এলাকায় এক বা একাধিক কেন্দ্রে বা সব কেন্দ্রে ইভিএম ব্যবহার করা যেতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ২৪(৩) ধারাবলে আরপিওতে উল্লিখিত ব্যালট বাক্স ও ব্যালট পেপারের পাশাপাশি ইভিএম অন্তর্ভুক্ত হয়েছে মর্মে প্রস্তাব করা হয়েছে।
আর নতুন সংযোজিত ২৫ ও ২৬ নম্বর ধারায় ইভিএম সম্পর্কে বর্ণনা ও সুরক্ষার বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, এটি কম্পিউটার বা ইন্টারনেট বা অন্য কোনো নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত নয় ও হ্যাক করা সম্ভব নয়। জাল বা কারচুপি প্রতিরোধে ইলেকট্রনিকভাবে সুরক্ষিত। এ মেশিনে কন্ট্রোল ইউনিটের কোনো রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি (আরএফ) রিসিভার ও ডাটা ডিকোডার নেই। ধারা ৮৬-তে ইভিএম বা এর কোনো সরঞ্জামাদি বা সফটওয়্যার প্রোগ্রাম নষ্টের ঘটনায় দায়ীকে সাজার দেয়ার বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে।
সংলাপ নয়, মেলায় মতামত জানাতে পারবে রাজনৈতিক দল : জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের বিষয়ে মতামত নিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে বসার চিন্তা নেই ইসির। কমিশনের কোনো সভায় সংলাপে বসার বিষয়ে আলোচনাও হয়নি। তবে সেপ্টেম্বরে কেন্দ্রীয়ভাবে রাজধানীতে ইভিএম মেলার আয়োজন করছে কমিশন। ওই মেলায় রাজনৈতিক দলগুলোকে আমন্ত্রণ জানানোর পরিকল্পনা রয়েছে ইসির।
ওই মেলায় রাজনৈতিক দলগুলো চাইলে মতামত দিতে পারবে। কমিশন মনে করছে, ইতিমধ্যে সংলাপে বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের বিষয়ে তাদের মতামত জানিয়ে দিয়েছে। এসব দল থেকে পুনরায় সংলাপ করা হলে একই ধরনের মত উঠে আসবে। এছাড়া তফসিলের সময় ঘনিয়ে আসায় সংলাপ করার মতো সময়ও ইসির হাতে নেই।
জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরী যুগান্তরকে বলেন, আমরা আর সংলাপের চিন্তা করছি না। তবে ইভিএম নিয়ে প্রথমে ঢাকায় ও পরে সারা দেশে মেলার আয়োজন করব। এতে সব স্টেক হোল্ডারদের আমন্ত্রণ জানাব। যে কেউ কারিগরি টিম নিয়ে এসেও ইভিএম পরীক্ষা করতে পারেন। সেখানে আমরা সবার মতামত নেব।
একাধিক দিনে নির্বাচনের সুপারিশ নাকচ : নির্বাচন কমিশনের সর্বশেষ সভায় আরপিওতে ২০টির বেশি সংশোধনীর প্রস্তাব দেয় আইন ও বিধিমালা সংস্কার কমিটি। এর মধ্যে অন্যতম সুপারিশ ছিল একাধিক দিনে ভোট গ্রহণ করা; যা কমিশন সভায় নাকচ করা হয়েছে।
প্রস্তাবিত সংশোধনীর ১২ ধারায় নির্বাচন অনুষ্ঠানের সময়সূচি ঘোষণার বিষয়ে উল্লেখ রয়েছে। এ ধারার ই উপধারায় উল্লেখ করা হয়েছে, মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের তারিখের অন্তত ১৫ দিন পর ভোট গ্রহণের জন্য একটি বা একাধিক তারিখ। সংশ্লিষ্টরা জানান, বর্তমানে একটি তারিখ শব্দ উল্লেখ রয়েছে। এর অর্থ একই দিনে সারা দেশে ভোট গ্রহণ করতে হবে। তবে ‘একাধিক’ শব্দ যুক্তের মাধ্যমে একাধিক দিনে ভোট গ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি হতো। এছাড়া প্রস্তাবিত ১৩(৩) ধারায় অনলাইনে মনোনয়নপত্র দাখিলের প্রস্তাব করা হয়েছে। এ প্রস্তাব বিএনপিসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দলও করেছিল। এ প্রস্তাব কমিশন গ্রহণ করেছে।
প্রস্তাবিত আরপিওর ৫৩ ধারায় ব্যয় মনিটরিং, ৫৫ ধারায় ব্যয় অডিট করার বাধ্যবাধকতা, ১০৪ ধারায় প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্রার্থী সংশ্লিষ্ট আসনের ১০ শতাংশ ভোট না পেলে তার রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন বাতিল, ১০৭ ধারায় নির্বাচনী তদন্ত কমিটি গঠন, দায়িত্ব ও কার্যপদ্ধতি ও ১০৮ ধারায় নির্বাচনী অভিযোগ প্রশমন কৌশল অন্তর্ভুক্তের প্রস্তাব করেছিল আইন সংস্কার কমিটি। এসব প্রস্তাব কমিশন সভায় নাকচ হয়েছে বলে জানা গেছে। Jugantor

Next Post

ইসি নিরপেক্ষ হলে নির্বাচন নিরপেক্ষ হবে

শনি সেপ্টে. ১ , ২০১৮
আভা ডেস্ক : আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, জাতীয় নির্বাচনের জন্য নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকারের চেয়ে বেশি জরুরি নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন (ইসি) ও নিরপেক্ষ নির্বাচন। ইসি নিরপেক্ষ হলে নির্বাচন নিরপেক্ষ হবে। আর আগামী নির্বাচনে বিএনপির অংশ নেয়ার ক্ষেত্রে আ’লীগ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে না। যদি প্রতিবন্ধকতা নাই সৃষ্টি করে […]

এই রকম আরও খবর

Chief Editor

Johny Watshon

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat. Duis aute irure dolor in reprehenderit in voluptate velit esse cillum dolore eu fugiat nulla pariatur

Quick Links