সারা দেশে ব্যপক কড়াকড়ির মধ্যে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা সম্পর্ণ হয়েছে। সারা দেশে আটক প্রতারক চক্রের ২১ সদস্য।

আভা ডেস্কঃ ব্যাপক কড়াকড়ির মধ্যে শুক্রবার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা হয়েছে। এ পরীক্ষা ঘিরে বিভিন্ন স্থানে সক্রিয় ছিল প্রতারক চক্র।

প্রশ্ন ফাঁসের গুজব ছড়িয়ে অর্থ আয়ের চেষ্টাও হয়েছে। বিভিন্ন অপরাধে ২১ জনকে জেলে পাঠানো হয়েছে। তাদের ১১ জনকে সংক্ষিপ্ত বিচারে দণ্ডাদেশ দেয়া হয়েছে। বাকিদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পরীক্ষা সামনে রেখে সংশ্লিষ্ট জেলা-উপজেলায় গোয়েন্দা তৎপরতা বৃদ্ধি করায় প্রতারক চক্রসহ অসাধু ব্যক্তিদের গ্রেফতার সম্ভব হয়েছে। ঝিনাইদহে ৫ জনকে জেলে পাঠানো হয়েছে। অপর চারটি স্থানে আরও অন্তত ৫ জনকে দণ্ড দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে কথিত প্রশ্ন সমাধানের সময় ঝালকাঠিতে স্বামী-স্ত্রীসহ একই পরিবারের তিনজন আছেন। আরেকজন চট্টগ্রামের। পঞ্চম ব্যক্তি পরীক্ষা দিতে গিয়ে গ্রেফতার হন।

মাগুরায় উত্তরপত্র লিখে দেয়ায় এক শিক্ষককে এক মাসের বিনাশ্রম দণ্ড দেয়া হয়েছে। এদিকে পরীক্ষার হলে মোবাইল ফোন ব্যবহার করায় কুড়িগ্রামে ৬ জনকে এক মাসের বিনাশ্রম দণ্ড দেয়া হয়েছে। বগুড়ায় ১০ লাখ টাকার চেকসহ একজন প্রতারককে জেলে পাঠিয়েছে র‌্যাব। ঝালকাঠিতে তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা করে তাদের জেলে পাঠানো হয়েছে। বরিশালে বৃষ্টির কারণে অন্তত দু’শ প্রার্থী পরীক্ষা দিতে পারেননি। নওগাঁয় একেক কেন্দ্রে একেক সময় পরীক্ষা নেয়ায় প্রশ্ন ফাঁসের গুজব ছড়িয়ে পড়েছে।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব মো. আকরাম আল হোসেন যুগান্তরকে বলেন, আগের দুই ধাপের পরীক্ষার অভিজ্ঞতার আলোকে এবার আমরা কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছি। দেশের কোথাও প্রশ্ন ফাঁস হয়নি। তবে বিভিন্ন স্থানে কিছু প্রতারক নানাভাবে প্রার্থীদের প্রলুব্ধ করেছে। ওই চক্রের সদস্যসহ বিভ্রান্ত প্রার্থী এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের পর্যন্ত গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। নওগাঁর কয়েকটি কেন্দ্রে বিলম্বে পরীক্ষা শুরু হয়েছে। এ জন্য যান্ত্রিক সীমাবদ্ধতাকে দায়ী করা হয়েছে। তবে পরীক্ষা শান্তিপূর্ণভাবে হয়েছে। চতুর্থ ধাপের পরীক্ষা হবে আগামী ২৮ জুন।

ঝালকাঠি প্রতিনিধি জানান, ঝালকাঠি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে অসদুপায় অবলম্বনের চেষ্টার অভিযোগে ৩ জনকে ১ বছরের দণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।

দণ্ডিতরা হলেন : পরীক্ষার্থী মনিষা বিশ্বাস, তার স্বামী অসীম বিশ্বাস এবং বড় ভাই কিশোর দেউড়ি। শুক্রবার সকালে শহরতলীর কীর্ত্তিপাশা মোড় থেকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তাদের আটক করা হয়। তাদের কাছে নিয়োগ পরীক্ষার উত্তর লেখা কাগজ উদ্ধার করা হয়। তবে মূল প্রশ্নের সঙ্গে ওই প্রশ্নের মিল পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া ঝালকাঠি শহরের রাজাপুর উপজেলার বলাই বাড়ি গ্রাম থেকে নুরুল ইসলাম রিপন, সদর উপজেলার চর ভাটারাকান্দার রাশেদ গাজী ও খাগুটিয়া এলাকার সিয়াম হাওলাদার নামের তিন পরীক্ষার্থীকে আটক করে পুলিশ। মামলার পর তাদের জেলে পাঠানো হয়।

মাগুরা প্রতিনিধি জানান, মাগুরায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তরপত্র পূরণ করে দেয়ার অভিযোগে জাহাঙ্গীর আলম খান নামে এক শিক্ষককে এক মাসের দণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। মাগুরার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান জানান, পরীক্ষা শেষ হওয়ার ১০ মিনিট আগে পরীক্ষার্থী মইনুল হাসান তার উত্তরপত্র পরিদর্শক জাহাঙ্গীর আলমের কাছে জমা দেন। পরে তিনি উত্তরপত্র পূরণ করা শুরু করেন। এ সময় অন্য পরীক্ষার্থীরা প্রশাসনকে জানালে ম্যাজিস্ট্রেট শাহিনা নাসরিনকে সেখানে পাঠানো হয় এবং তাকে হাতেনাতে আটক করে এক মাসের দণ্ড দেয়া হয়। জাহাঙ্গীর আলম এবং পরীক্ষার্থী মইনুল সহোদর বলে জানা গেছে।

চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, পরীক্ষায় প্রক্সি দিতে আসা ফরিদ উদ্দিন সোবহান নামে এক যুবককে নগরীর মিউনিসিপ্যাল মডেল স্কুল কেন্দ্র থেকে আটক করা হয়েছে। পরে তাকে এক বছরের দণ্ড দেয়া হয়।

বগুড়া ব্যুরো জানায়, আলমগীর হোসেন (৩২) নামে এক প্রতারককে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। তার কাছে ৫ লাখ টাকা করে ১০ লাখ টাকার দুটি চেক পাওয়া গেছে। বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে তাকে শহরের লতিফপুর মধ্যপাড়া থেকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তাকে জেলে পাঠানো হয়।

বরিশাল ব্যুরো জানায়, বৃষ্টির কারণে দুই শতাধিক চাকরিপ্রার্থী কেন্দ্রে বিলম্বে উপস্থিত হন। পরে তাদেরকে আর পরীক্ষায় বসতে দেয়নি প্রশাসন। এ নিয়ে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছিল। এ সময় পুলিশ লাঠিচার্জ করে। পুলিশের দাবি, যথাসময়ে উপস্থিত না হওয়ায় তাদের প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। লাঠিচার্জের ঘটনা ঘটেনি।

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি জানান, ভুয়া প্রশ্নপত্র বিক্রির সময় ৬ জনকে আটক করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে জেলা শহরের আরাপপুর এলাকার একটি বাড়ি থেকে তাদের আটক করা হয়। বেশকিছু ভুয়া প্রশ্ন ও নগদ ৬০ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়। আটককৃতরা হলেন : আরাপপুরের বাড়ি মালিক আবদুল মজিদ, ঝিনাইদহ গোপালপুরের অরুণ কুমারের ছেলে প্রশান্ত কুমার, শৈলকুপার রানীনগর গ্রামের রোজদার মিয়ার ছেলে আল মামুন, একই উপজেলার সিদ্ধি গ্রামের এলাহী বক্সের ছেলে তাইনুল আলম, উত্তর বোয়ালিয়া গ্রামের গিয়াস উদ্দিনের ছেলে হাসান ইকবাল ও রানীনগর গ্রামের সৈয়দ আলীর ছেলে রিপন হোসেন। ঝিনাইদহ গোয়েন্দা পুলিশের ওসি জাহাঙ্গীর আলম জানান, তাদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা হয়েছে ও কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

নওগাঁ প্রতিনিধি জানান, সকাল সাড়ে ১০টায় পরীক্ষা শুরুর কথা থাকলেও কয়েকটি কেন্দ্রে বিলম্বে শুরু হয়। এতে প্রশ্ন ফাঁসের গুজব ছড়িয়ে পড়ে। জেলায় ১১টি উপজেলার মধ্যে ৫টি উপজেলায় পরীক্ষা হয়েছে। এর মধ্যে নওগাঁ জনকল্যাণ উচ্চ বিদ্যালয়ে পরীক্ষা শুরু হয় ১২টায়, নওগাঁ পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটে ১১টা ৪৫ মিনিটে, নওগাঁ সীমান্ত পাবলিক স্কুলে ১১টা ৪৫ মিনিটে, নওগাঁ নামাজগড় গাউসুল আজম কামিল মাদ্রাসায় ১১টা ১০ মিনিটে এবং নওগাঁ কেডি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে ১০টা ৫০ মিনিটে।

প্রথম দফায় জেলার ৫ উপজেলার পরীক্ষার্থী সাড়ে ২২ হাজার কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি জানান, পরীক্ষার হলে মোবাইল ফোন ব্যবহার করায় ৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পরে তাদের প্রত্যেককে এক মাসের বিনাশ্রম দণ্ড দেয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীন জানান, অবাধ ও সুষ্ঠু পরিবেশে এবং কঠোর নিরাপত্তায় পরীক্ষা হয়েছে। দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন : সদরের নওরিন আক্তার ও আতিকা তাসমিন এবং ফুলবাড়ী উপজেলার শাহানা খাতুন, মকবুল হোসেন, আনিছুর রহমান ও গোলাম মোস্তফা।

যুগান্তর

Next Post

জাতীয় সম্মেলন সামনে রেখে তিনটি বিষয় জানতে চেয়ে তৃণমূলে চিঠি পাঠানো শুরু করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।

শনি জুন ২২ , ২০১৯
আভা ডেস্কঃ জাতীয় সম্মেলন সামনে রেখে তিনটি বিষয় জানতে চেয়ে তৃণমূলে চিঠি পাঠানো শুরু করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। শুক্রবার রেজিস্ট্রি ডাকযোগে ওবায়দুল কাদের স্বাক্ষরিত চিঠি আনুষ্ঠানিকভাবে পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়। আওয়ামী লীগের দফতর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে, জেলা ও উপজেলা কমিটি বরাবর পাঠানো চিঠিতে তিনটি বিষয়ে দ্রুত তথ্য চেয়ে […]

Chief Editor

Johny Watshon

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat. Duis aute irure dolor in reprehenderit in voluptate velit esse cillum dolore eu fugiat nulla pariatur

Quick Links