আনন্দোলনরত শিক্ষার্থীর সাথে তারকারাও একত্ত্বা ঘোষনা।

আভা ডেস্ক: ‘এত দিন ছিলাম ডিজিটালি, আজ থেকে ফিজিক্যালি থাকব রাস্তায় স্টুডেন্টদের সঙ্গে। উই ওয়ান্ট জাস্টিস।’ বাসচাপায় নিহত শিক্ষার্থীদের বিচারের দাবিতে ঢাকায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এভাবেই একাত্মতা ঘোষণা করেন নতুন প্রজন্মের সংগীতশিল্পী পুলক অধিকারী। রাজধানীর বাংলামোটর এলাকায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তিনি ঘণ্টা দেড়েক ছিলেন।

এরপর পুলক বলেন, ‘এই শিক্ষার্থীদের আন্দোলন দেখে বাসায় বসে থাকতে পারিনি। তাদের ওপর পুলিশের নির্যাতন দেখে কান্না ধরে রাখতে পারিনি। বাংলামোটর এসে শিক্ষার্থী বন্ধুদের সঙ্গে যোগ দিয়েছি। ওদের স্পিরিট আমাকে সাহসী করেছে। অনুপ্রাণিত করেছে। উৎসাহিত করেছে। এত সুন্দর আর সুশৃঙ্খল আন্দোলন এর আগে কখনো হয়েছে কি না, আমার জানা নেই। ওরা সব চালকের লাইসেন্স চেক করছে। ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া চালকদের গাড়ি আটকে দিচ্ছে। এমনকি মন্ত্রীর গাড়িও আটকে দিয়েছে! ওদের কাছ থেকে অনেক কিছু শেখার আছে।’

২৯ জুলাই ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের অদূরে বিমানবন্দর সড়কে রেডিসন হোটেলের উল্টো দিকে বাসচাপায় রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী নিহত হয়। এমন অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু আর পরিবহন ব্যবস্থায় অনিয়ম নিয়ে এখন শহরজুড়ে চলছে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন। আজ ঢাকার প্রায় প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা দখল করে রাখে শিক্ষার্থীরা। এত দিন তারকারা ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে সমর্থন জানালেও আজ অনেকেই সশরীরে রাস্তায় নেমেছেন। শিক্ষার্থীদের কষ্ট দেখে সংগীতশিল্পী, অভিনয়শিল্পী, পরিচালক, প্রযোজকদের অনেকেই শুটিং বন্ধ করে রাস্তায় নেমে আসেন। যাঁরা বাসায় ছিলেন, তাঁরাও শিক্ষার্থীদের কষ্ট সহ্য করতে না পেরে রাস্তায় নামেন। নির্মাতা এস এ হক অলীক বলেন, ‘সকালে বাসায় ছিলাম। টেলিভিশনে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের কষ্ট দেখে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনি। বাসা থেকে বের হই। কাছেই আইডিয়াল স্কুলে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছিল। তাদের সঙ্গে অনেকটা সময় থেকেছি। এরপর রামপুরা বাজারে আন্দোলন করা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের আন্দোলনের ধরন আমাকে বিস্মিত করেছে।’

ঈদের আগে সংগীতশিল্পী, নির্মাতা ও অভিনয়শিল্পীদের ব্যস্ততা থাকে অন্য সময়ের চেয়ে অনেক বেশি। দম ফেলার সময় থাকে না। এরপরও শুটিং বন্ধ রেখে উত্তরায় আন্দোলন করা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করেছেন পরিচালক সকাল আহমেদসহ অভিনয়শিল্পী জাকিয়া বারী মম, নাদিয়া আহমেদ, নওশীন, অর্ষা, নাদিয়া আহমেদ, তৌসিফ, নাবিলা প্রমুখ।

সকাল আহমেদ জানান, তাঁরা সবাই উত্তরার জসীম উদদীন সড়ক থেকে বিমানবন্দর সড়ক পর্যন্ত যান, আবার রাজলক্ষ্মী মার্কেটের কাছে আসেন। এ সময় তাঁরা আন্দোলন করা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন। শিক্ষার্থীরা তাঁদের জানায়, এনা পরিবহনের গাড়ি দেখলেই তারা আটকাচ্ছে, কারণ এই প্রতিষ্ঠানের গাড়িগুলো খুব বেপরোয়া চলে। এ ছাড়া এই রুটে অন্য যেসব গাড়ি চলছিল, সব চালকের লাইসেন্স আছে কি না, তা তারা পরীক্ষা করছিল। এটা একেবারেই শান্তিপূর্ণ একটা আন্দোলন।

সকাল আহমেদ বলেন, ‘আমরা নাটকের শুটিং নিয়ে ব্যস্ত থাকি, কিন্তু আমরাও মানুষ। আমাদেরও সন্তান আছে। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের কেউ আমাদের ছোট ভাইবোন, আবার কেউ আমাদেরই সন্তান। তাদের এমন যৌক্তিক আন্দোলনের সঙ্গে আমাদের থাকা উচিত বলে মনে করেছি। তাই শুটিং থেকে বের হয়ে সবাই মিলে অংশগ্রহণ করেছি।’

চলচ্চিত্র প্রযোজক আবদুল আজিজের মেয়ে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। আজ তাঁর মেয়ের ক্লাস ছিল। দুপুরের পর মেয়ের খবর নিতে ফোন করে জানতে পারেন, কুড়িলে আন্দোলন করা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সেও রাস্তায় নেমেছে। মেয়েকে নিষেধ করেননি। সে আর তার বন্ধুরা যা ভালো মনে করছে, সেটাই করছে। আন্দোলনে নিজের মেয়ে যুক্ত হওয়ায় নিজেকে গর্বিত বাবা মনে করছেন এই প্রযোজক। আবদুল আজিজ বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া অবস্থায় বিভিন্ন আন্দোলন করেছি, আমার বাবা আমাকে কখনো নিষেধ করেননি। একবার একুশে ফেব্রুয়ারি রাতে শহীদ মিনার না গিয়ে বাসায় শুয়েছিলাম বলে বাবা আমার ওপর রাগ করেছিলেন। সরকারের কাছে আমার আবেদন, আমার মেয়ের যেন কিছু না হয়। পুলিশ বা অন্য কেউ যেন তাদের গায়ে হাত না দেয়।’

সরকারের কাছে আবেদন জানিয়ে আবদুল আজিজ বলেন, ‘এই প্রজন্ম বড় হচ্ছে বঙ্গবন্ধুকে বুকে নিয়ে। যাদের বুকে বঙ্গবন্ধু আছেন, তাদের কোনোভাবেই দাবায়ে রাখা যাবে না। তারা তাদের দাবি আদায় করেই ছাড়বে। মনে রাখতে হবে, এটা একেবারেই সাধারণ বাচ্চাদের আন্দোলন। ওরা আমার-আপনার বাচ্চা, যারা বড় হয়েছে দুধে-ভাতে। আর দোয়া করি ওরা যেন দুধে-ভাতেই থাকে। সব দিকেই মঙ্গল হবে, এদের দাবি দ্রুত মেনে নিয়ে বা এদের বুঝিয়ে স্কুল-কলেজে ফেরত পাঠানো। দেরি হলেই বিভিন্ন পক্ষ তা থেকে হয়তো রাজনৈতিক ফায়দা নেওয়ার চেষ্টা করতে পারে। এই আন্দোলন এখনো স্ফুলিঙ্গ আকারেই আছে। দেরি হলে হয়তো দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়তে পারে। তখন হয়তো নিয়ন্ত্রণে আনা কঠিন হবে। আমার মনে হয়, এই বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর দ্রুত হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। তিনি ছাড়া এই সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়।’

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সমর্থন জানিয়ে ঢাকার শাহবাগে মানববন্ধনে অংশ নিয়েছেন অভিনয়শিল্পী জ্যোতিকা জ্যোতি, নওশাবা, অধিকারকর্মী আনন্দ কুটুমসহ আরও অনেকে।

এদিকে আন্দোলন করা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে আগামীকাল বৃহস্পতিবার ঢাকার বিভিন্ন সড়কে নামবেন সংগীত ও অভিনয়জগতের অনেক তারকা। থাকবেন প্রযোজক-পরিচালকেরাও।

প্রথম আলো

Next Post

ক্ষমা না চাইলে, সংলাপ নয়।

বৃহস্পতি আগস্ট ২ , ২০১৮
আভা ডেস্ক: আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুদিবসে জন্মদিন পালন করার জন্য বিএনপি ক্ষমা না চাইলে ও দুঃখ প্রকাশ না করলে সংলাপ হবে না। আজ বুধবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু সমাজকল্যাণ পরিষদ আয়োজিত শোক দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভায় ওবায়দুল কাদের […]

এই রকম আরও খবর

Chief Editor

Johny Watshon

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat. Duis aute irure dolor in reprehenderit in voluptate velit esse cillum dolore eu fugiat nulla pariatur

Quick Links