আভা ডেস্কঃ অনুপ্রবেশকারী ইস্যুতে এবার বিভাগ-ভিত্তিক উপকমিটির সদস্য সংখ্যায় লাগাম টেনে ধরেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এসব কমিটিতে রিজেন্টের সাহেদ করিমের মতো কেউ যেন ঢুকে পড়তে না পারেন, সে ব্যাপারে দলের হাইকমান্ডের কঠোর নির্দেশনা রয়েছে।
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর সভায় ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে কমিটির তালিকা জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। কিন্তু ওই নির্দেশনার পরও অনেক বিভাগ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কমিটির তালিকা জমা দিতে পারেনি। এরপর কমিটির তালিকা জমা দেওয়ার জন্য ২৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়েছে।
বিভাগভিত্তিক উপ-কমিটির দায়িত্বশীলদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এরই মধ্যে বিভিন্ন বিভাগ কমিটির তালিকা জমা দিয়েছে। দু্ই-একদিনের মধ্যে বাকি বিভাগগুলোও জমা দেবে। তবে, বিভিন্ন বিভাগের সম্পাদকরা জানিয়েছেন, উপকমিটিতে ৩৫ জন সদস্য রাখার যে বাধ্যবাধকতা রয়েছে, তাতে তারা বেশ চাপে আছেন। তারা বলছেন, দীর্ঘদিন যারা কমিটির সঙ্গে কাজ করেছেন, কেন্দ্রীয় কমিটিতে জায়গা পাননি, দলের জন্য ত্যাগ আছে, বাধ্যবাধকতার কারণে তাদের অনেককে কমিটিতে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। এই নিয়ে দায়িত্বশীলরা বেশ বিব্রত।
এই প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘দেখা গেছে, ২০ বছর ধরে অনেকেই আমাদের সঙ্গে কাজ করছেন। দলের জন্য ত্যাগ আছে, নির্যাতিত হয়েছেন। অথচ তাদের কমিটিতে রাখতে পারছি না। অনেকে বলছেন, দীর্ঘদিন রাজনীতি করেছেন, কোনো পদ পাননি। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, আমি তাদের রাখবো কোথায়? এ নিয়ে খুব চাপে আছি।
তবে, আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা বলছেন, সদস্য সংখ্যা লাগাম টেনে ধরার অর্থ হচ্ছে এসব কমিটিতে যেন কোনোভাবেই সুবিধাবাদী, অনুপ্রবেশকারী ও হাইব্রিডরা ঢুকে পড়তে না পারেন।
দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মো. আব্দুর রহমান বলেন, ‘উপকমিটিতে ৩৫ সদস্য যথেষ্ট। এর বেশি রাখার প্রয়োজন নেই।’ তিনি বলেন, ‘অনুপ্রবেশকারীদের কোনোভাবেই আওয়ামী লীগে জায়গা দেওয়া হবে না। তারা বিভিন্নভাবে কমিটিতে ঢুকে অপকর্মে জড়িত হয়ে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেন। এবার দল এই বিষয়ে কঠোর অবস্থানে রয়েছে। যাচাই-বাছাই করে কমিটি অনুমোদন দেওয়া হবে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০০৯ সালের আগে আওয়ামী লীগের এসব বিভাগভিত্তিক উপকমিটি ছিল না। ওই বছর অনুষ্ঠিত ১৮তম জাতীয় সম্মেলনে প্রতিটি সম্পাদকীয় পদের সঙ্গে পাঁচজন সহ-সম্পাদক নিয়ে এই বিষয়ে একটি উপ-কমিটি করার বিধান করা হয়। এর উদ্দেশ্য হলো—সংশ্লিষ্ট বিষয়ের বিশেষজ্ঞদের সদস্য হিসেবে রেখে কাজ এগিয়ে নেওয়া। একইসঙ্গে দুঃসময়ে যারা দলের জন্য নির্যাতিত হয়েছেন, এমন ত্যাগীদের উপ-কমিটিতে জায়গা করে দেওয়া। পরের সম্মেলনে প্রত্যেক বিষয়ভিত্তিক সম্পাদকীয় পদের বিপরীতে সর্বোচ্চ পাঁচ জনকে বিবেচনায় রেখে ৯৫জন সহ-সম্পাদক রাখার বিধান রাখা হয়।
এবার শুরু হয় সহ-সম্পাদক পদের সদস্য সংখ্যা নিয়ে বিতর্ক। ২০১৬ সালে উপকমিটিতে সহ-সম্পাদক পদ নিয়ে সমালোচনা বড় আকার ধারণ করে। বিভাগভিত্তিক ৪১৬ জনকে সহ-সম্পাদক পদ দেওয়া হয়। তখন বলা হয়েছিল, এর সংখ্যা প্রায় ২ হাজার। এই বিপুল পরিমাণ কমিটির সুযোগে অনেক বিতর্কিত লোকও দলে ঢুকে পড়েন। দলীয় সূত্র বলছে, সেই বিতর্কের সর্বশেষ সংযোজন রিজেন্টের সাহেদ।
তবে, এবার দলে বিতর্কিত ব্যক্তিরা যেন কমিটিতে স্থান না পান, সে বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেওয়া রয়েছে। উপকমিটিতে কোনোভাবে বিতর্কিত কেউ ঢুকে পড়লে এর দায় সংশ্লিষ্ট সম্পাদককে নিতে হবে বলে দলের পক্ষ থেকে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। বিতর্কিতদের নাম থাকলে তার দায় সংশ্লিষ্ট সম্পাদক ও সুপারিশকারীকে নিতে হবে।
উপকমিটির অগ্রগতি নিয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি-বিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার মো. আবদুস সবুর বলেন, ‘দল যেভাবে দিক-নির্দেশনা দিয়েছে, সেভাবে কমিটি জমা দেবো।’ দলের জন্য নিবেদিত ও ত্যাগীদের যাচাই-বাছাই করে কমিটিতে রাখা হবে বলেও তিনি জানান।