দেশের উত্তরাঞ্চলে নদী তীরবর্তী এলাকার অন্তত ২ হাজার ২৬৬ হেক্টর জমি ভাঙনের কবলে পড়বে বলে বেসরকারি একটি সংস্থার প্রতিবেদনে আগাম আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের তত্ত্বাবধানে সেন্টার ফর ইনভায়রমেন্ট এন্ড জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিসের (সিইজিআইএস) এই গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যমুনা, পদ্মা ও গঙ্গার তীরবর্তী ১১টি জেলার ১৯৭৩ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ১ লাখ ৬২ হাজার ১৯ হেক্টর ভূমি নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। চলতি বছরে ২ হাজার ২৬৬ হেক্টর জমি বিলীন হতে পারে। আর সে সাথে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্য কেন্দ্র, হাট-বাজার, মসজিদ-মন্দির-মাদ্রাসাও হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
সংস্থাটির প্রতিবেদনে যমুনা, পদ্মা ও গঙ্গা নদীবর্তী দেশের ১১টি জেলার ক্ষতির ভবিষ্যত সম্ভাবনা দেখানো হয়েছে। এর মধ্যে শুধু যমুনা নদীবর্তী ৬টি জেলা হলো কুড়িগ্রাম, বগুড়া, গাইবান্ধা, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল ও মানিকগঞ্জ।
এতে বলা হয়, যমুনা নদীর ভাঙনে ৭৮৩ হেক্টর ভূমি ও ১২৩ হেক্টর বসতি, ১১৩৮ মিটার সক্রিয় বাঁধ, ২৮৭ মিটার জেলা সড়ক, ১১৫ মিটার উপজেলা সড়ক ও ১৩৬৪ মিটার গ্রামীণ সড়ক, ১৬টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ১টি হাট-বাজার, ১টি ঘাট, ২টি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং ১২টি মসজিদ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। ২০২০ সালে এই অবস্থা আরও ভয়াবহ হবে বলে প্রতিবেদনে আগাম শঙ্কা প্রকাশ করা হয়।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে যে ৮০’র দশকে যমুনায় ভাঙন হতো গড়ে ৫ হাজার হেক্টর যা এখন কমে এসেছে ২ হাজার হেক্টরে।
তবে বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, কিছু স্থানে ঝুঁকি থাকলেও তা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকবে। তাদের মতে, এ বছর বর্ষা শুরুর আগে জেলার সারিয়াকান্দি উপজেলার দীঘলকান্দি, গোদাখালী, পুকুরিয়া, বানিয়াজান ও ধুনট উপজেলার শহরাবাড়ী ঘাট এলাকায় নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। এসব পয়েন্টে বাঁধ রক্ষার জন্য প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, প্রতিবছরই বর্ষা এলেই নদীভাঙন দেখা দেয়। এ বছরও বর্ষার আগেই শুরু হয়েছে নদী ভাঙন। আর এই নদীভাঙনে সাধারণ মানুষই বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে কৃষিজমি, বসতভিটা। এতে ক্রমাগত নিঃস্ব হচ্ছেন তারা।
এ বছরের নদী ভাঙনের কবলে পড়েছেন সারিয়াকান্দি উপজেলার কামালপুর ইউনিয়নের দড়িপাড়া গ্রামের বিষা মন্ডল। তিনি জানান, এক সময় বসতবাড়িসহ তার মোট জমি ছিল ৭ বিঘা। কিন্তু গত বছরে প্রায় ৪ বিঘা জমি নদী গর্ভে চলে গেছে। বাকি অংশও এবার ভাঙবে বলে মনে করছেন তিনি।
ধুনট উপজেলার শহরাবাড়ী ঘাটের ইজারাদার হযরত আলীর জানান, এ ঘাটে প্রায় ৪০ থেকে ৫০ জন লোক জীবিকা নির্বাহ করতেন। প্রতিদিন গড়ে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা আয় হতো এখান থেকে। কিন্তু গত বছরের বন্যার পর ঘাট থেকে আয় প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে।
বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী হাসান মাহমুদ জানান, যমুনায় বিভিন্ন প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করায় এখন নদীতে ভাঙনের প্রভাব কমেছে। এবার বন্যার জন্য পর্যাপ্ত জিও ব্যাগ ও ব্লক প্রস্তুত রাখা আছে, প্রয়োজনে ব্যবহার করা হবে।
রাইজিংবিডি