রাণীনগর প্রতিনিধি:
নওগাঁর রাণীনগরে ইউএনও’র হস্তক্ষেপে অবৈধ ভাবে সরকারি খাসের জায়গা জোবর দখল করে বহুতল ভবন নির্মাণ করার কাজ বন্ধ করার প্রায় ২ মাস পর আবারও বন্ধ হওয়া কাজ শুরু করেছেন এক স্থানীয় প্রভাবশালী মহিলা। উপজেলার বড়গাছা ইউনিয়নের বড়গাছা বাজার সংলগ্ন সুগানদিঘী নামক স্থানে এই বহুতল ভবন নির্মাণ করা চলছে।
বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানানোর পরও রহস্যজনক কারনে প্রশাসন নিবর ভূমিকা পালন করছে বলেও অভিযোগ উঠেছে । কিন্তু প্রশাসন বলছে বিয়ষটি তাদের জানা নেই।
জানা গেছে, উপজেলার বড়গাছা গ্রামের মো: সমসের আলী মোল্লার ছেলে ভূমিহীন ও দিনমজুর মো: মনছুর আলী মোল্লাকে বড়গাছা মৌজার ১নং খতিয়ান ভূক্ত ১১৯ দাগে ৫০ শতাংশ সরকারি খাসের জমি (শ্রেণী: মাটিয়াল) ৯৯ বছরের জন্য ১৮৮৮-৮৯ নং চিরস্থায়ী পত্তন দেওয়া হয়। উক্ত পত্তনকৃত জমি মনছুর আলী মোল্লা আইন না মেনে জোর করে নিজের ইচ্ছে মাফিক পুকুর খনন করে। বিষয়টি জানতে পেরে পত্তনকৃত জমিতে পুকুর খনন করায় গত ২৬ ফ্রেরুয়ারি ২০১৩ইং সালে তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: মনিরুল ইসলাম পাটোয়ারী পত্তনকৃত জমির লীজ বাতিল করে দেন। আর তার পর থেকে দিনমজুর মনছুর আলী মোল্লা ও তার প্রভাবশালী স্ত্রী জরিনা বিবি ওরফে হাজারী কোন কিছুর তোয়াক্কা না করে জোরে অবৈধ ভাবে সেই সরকারি খাসের জায়গা ভোগ-দখল করে আসছে। শুধু তাই নয় জমির পাশ (পুকুরের পাশ) দিয়ে থাকা অনেক টাকার বড় বড় গাছও পেশীবলের জোরে বিক্রয় করেছেন।
এছাড়া পুকুরের মাছও এই পরিবার দীর্ঘদিন যাবত ভোগদখল করে আসছে। হটাৎ করে গ্রামের কিছু স্থানীয় মাতব্বরদের সহযোতিায় গত ২ মাস আগে এই সরকারি খাস জায়গার প্রায় ৭-৮ শতাংশ জমির উপরে বহুতল ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করেন। সরকারি খাসের জায়গায় ভবন নির্মাণের অভিযোগে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোনিয়া বিনতে তাবিব ভবন নির্মাণ কাজটি বন্ধ করে দেয়। এরপর থেকে কাজটি বন্ধ ছিল। সম্প্রতি সেই ভবন নির্মাণের কাজ প্রশাসনকে না জানিয়ে বা অনুমতি না নিয়ে আবার শুরু করেছেন সেই প্রভাবশালী মহিলাটি। বিষয়টি ইউএনওকে জানানো হলেও এখন পর্যন্ত কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। এতে সরকার হারাতে বসেছে লাখ লাখ টাকার সম্পদ।
একই গ্রামের বাসিন্দা মোছা: শরিফুন বিবিসহ আরও অনেকেই বলেন, এই পরিবারের দাপটে আমাদের এখানে বসবাস করা অসম্ভব হয়ে উঠেছে। দীর্ঘদিন যাবত এই পরিবার আমাদেরকে বিভিন্ন ভাবে হয়রানি করে আসছে। আমরা এই পরিবারের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছি। আমরা এই সমস্যা থেকে উত্তোরণ চাই। ইউএনও’র হস্তক্ষেপে ভবন নির্মাণ কাজটি বন্ধ ছিল। কিন্তু প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে হটাৎ করে আবার ভবন নির্মাণ কাজ করেছে। বিষয়টি আমরা ইউএনওকে জানিয়েছি। আমরা বিষয়টির সুষ্ঠ তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা চাই। আমরা বাদি হয়ে বিষয়টি সুষ্ঠ তদন্তের জন্য একাধিকবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছি কিন্তু আজ পর্যন্ত তাতেও কোন লাভ হয় নাই।
এ বিষয়ে মো: মনছুর আলী মোল্লা ও তার ছেলে ও স্ত্রী জরিনা বিবি ওরফে হাজারীর সাথে একাধিকবার কথা বলার চেষ্টা করলেও এই বিষয়ে সাংবাদিকদের সাথে কোন কথা বলতে চান না তারা।
এ ব্যাপারে স্থানীয় ইউপি চেয়াম্যান মো: শফিউল ইসলাম (সফু) জানান, ওই মহিলা খুবই ভয়ংকর। তার কোন আত্মসম্মান নেই। তার সঙ্গে কথা বলাও বিপদজনক। কারণ সে কখন যে কি করে ফেলে তার কোন নিশ্চয়তা নেই। এই পরিবার সম্পন্ন অবৈধ ভাবে ওই সরকারি জায়গায় বহুতল ভবন নির্মাণ করছে। আমি একাধিকবার নিষেধ করা সত্ত্বেও তারা আমার নিষেধ অমান্য করে এই ভবন নির্মাণের কাজ করছে। আমি নির্বাহী কর্মকর্তাকে বিষয়টি মৌখিক ভাবে বলেছি।
এ ব্যাপারে রাণীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোনিয়া বিনতে তাবিব বলেন, আমি বিষয়টি জানার পর বাড়ি নির্মাণের কাজ বন্ধ করে দিয়েছিলাম। পুনরায় কাজ শুরু করার বিষয়ে আমি জানি না। তারা আবার কার অনুমতি নিয়ে কাজ শুরু করেছে অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।